লোহাগাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত তামিম চিরনিদ্রায় শায়িত। কচুয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উপজেলা সার্ভেয়ারের পরিদর্শন নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় চিলমারীতে "কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের" দিনব্যাপী, হাতে-কলমে শিক্ষা সফর শেরপুরের শ্রীবরদীতে ভেজাল বিরোধী অভিযানে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ঝিনাইগাতীতে কারিতাসের আয়োজনে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ একনেকে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে এসপিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন গ্রহণযোগ্য নয় ডোমারে ইউএনও'র যোগদান ও বিদায় সংবর্ধনা ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদল কতৃক এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের মাঝে উপহার বিতরণ ১৭ বছর পর মোংলায় উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন নির্বাচন রাজবাড়ী বিআরটিএতে দুদকের অভিযান: চার দালাল আটক, টাকা উদ্ধার লাখাই উঠেছে তালের শাঁস,প্রচন্ড তাপদাহে বেড়েছে তালের শাঁসের কদর। শ্রীমঙ্গলে নগরব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন নিশ্চিতে ম্যাক বাংলাদেশের মতবিনিময় ও ইউএনও বরাবর নারী ফোরামের স্মারকলিপি সাতক্ষীরায় নাগরিক প্লাটফর্ম ও যুব ফোরামের সংলাপ অনুষ্ঠিত আক্কেলপুর একযুগ আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা পর ও চলছে স্কুলের পাঠদান। শ্যামনগরে সাংবাদিকদের জলবায়ু বিষয়ক প্রশিক্ষণ কচুয়ায় বিভিন্ন উপকার ভোগীদের মাঝে চেক বিতরণ

রাসেল ভাইপার; জনসচেতনতা বাড়াতে হবে | খাদিজা আখতার

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নতুন নতুন জায়গায় রাসেল'স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপের বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে। রাসেল'স ভাইপার (Russell’s Viper, Deadly Venomous) তীব্র প্রাণঘাতী বিষধর একটি সাপ। এই সাপ চন্দ্রবোড়া নামেও পরিচিত৷ রাসেল'স ভাইপার সাপের দেহ সাধারণত ধূসর অর্থাৎ শুকনো পাতার কালারের ধরনের হয়ে থাকে। এই সাপের দেহে পূর্ণ চন্দ্রাকৃতির একদম বড় বড় গোল গোল ফোঁটা থাকে। এই সাপ সাধারণত খুব বেশি লম্বা হয় না। তবে মোটাকৃতি হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন, রাসেল'স ভাইপার সাপ মানুষ দেখলে তেড়ে কামড়াতে আসে। বিষয়টি সত্য নয়। বরং, এই সাপ অন্যান্য সাপের মতোই মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। মানুষের উপস্থিতির টের পেলে এরা হিস্ হিস্ শব্দ করে। এই সাপ সাধারণত অলস প্রকৃতির। এদের প্রিয় খাবার ইঁদুর। ইঁদুর শিকারের জন্য এরা সাধারণত ফসলি জমি/শুকনো পাতার উপর কুন্ডলী পাকিয়ে বসে থাকে। এরা এক সেকেন্ডের কম সময় অর্থাৎ ন্যানোসেকেন্ডে মানুষকে বাইট করতে পারে। তাই এদের দেহে পা পড়লে আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 


রাসেল'স ভাইপার সাপ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের ভেতর রাসেল'স ভাইপার সাপের অবস্থান ৩৩ তম। এমনকি বাংলাদেশেও সবচেয়ে বিষধর সাপ রাসেল'স ভাইপার নয়। তাই অতিরিক্ত আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। বাংলাদেশের স্থলভাগের সবচেয়ে বিষধর সাপ (Deadly Venomous) হচ্ছে পদ্মগোখরা। তাছাড়া গোখরা প্রজাতির সাপ (পদ্মগোখরো, খৈয়া গোখরো), কালাচ (Common krait, Wall's krait) এই সাপগুলো রাসেল'স ভাইপার সাপের চেয়ে অনেক বেশি বিষধর। 


রাসেল'স ভাইপার সাপকে অনেকে ভারত থেকে ভেসে আসছে বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু রাসেল ভাইপার সাপ সেই প্রাচীনকাল থেকেই বরেন্দ্র এলাকা, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট এলাকাগুলোতে ছিল। কিন্তু বর্তমানে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় এই সাপের বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাসেল'স ভাইপার সাপ একেবারে ৪০-৫০ টি এমনকি ৭০-৮০ টি বাচ্চা দিতেও সক্ষম। তাই এই সাপের বিস্তৃতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে। 


এই সাপের খাদক সাপ হলো শঙ্খনী, গোখরার মতো কিছু বিষধর সাপ। তাছাড়া এই সাপের অন্যতম খাদক হলো শিয়াল, বেজি, গুইসাপ, মেছোবাঘ (আঞ্চলিক নাম বাগদাসা) ইত্যাদি। রাসেল'স ভাইপার সাপের খাদক শিয়াল, বেজি, গুইসাপ, মেছোবাঘ ইত্যাদি কমে যাওয়ার কারণে রাসেল'স ভাইপার সাপের বিস্তৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সকলের উচিত শিয়াল, বেজি, গুইসাপ, মেছোবাঘ এই সব নিরীহ উপকারী প্রাণী হত্যা না করা। এই সব উপকারী প্রাণী মানুষের কোনো ক্ষতি করে নাহ, সর্বোচ্চ মুরগির বাচ্চা খেয়ে ফেলতে পারে। তবুও তো মানুষের জন্য প্রাণঘাতী বিষধর সাপ রাসেল'স ভাইপার সাপের মতো আরও কিছু বিষধর সাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 


রাসেল'স ভাইপার সাপের কামড় থেকে বাঁচতে ফসলি জমিতে গামবুট জুতা হিসেবে ব্যবহার করুন। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড় জঙ্গল পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখুন। একসাথে ইটের স্তুপ জড় করে রাখবেন নাহ। রাসেল'স ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত স্থান ফুলে লালচে বেগুনি রং ধারণ করতে পারে। রাসেল'স ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপের চিকিৎসা আমাদের বাংলাদেশে আছে। রাসেল'স ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপের ক্ষেত্রে পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনম ব্যবহার করা হয়। তাই সাপে কামড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। কোনো প্রকার ওঝা/সাপুড়ের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে নাহ। বাংলাদেশের সব সাপই বিষধর সাপ নয়। অনেক নির্বিষ সাপ ও আমাদের দেশে আছে। আমরা নির্বিষ সাপ বলতে ঢোড়াকেই চিনে থাকি। কিন্তু ঢোড়ার মতো দাঁড়াশ, ঘরগিন্নি সাপসহ অনেক নির্বিষ সাপ আমাদের দেশে রয়েছে। আর এখানেই ওঝা/সাপুড়ের কেরামতি। তবে দাঁড়াশ আর কালাচ (Wall's krait) সাপ দুটি দেখতে প্রায় একই রকম। দাঁড়াশ নির্বিষ, কালাচ (wall's krait) তীব্র বিষধর। অনেকেই এই সাপ দুটি চিনতে ভুল করে থাকেন। তাই রাসেল'স ভাইপারসহ অন্যান্য যেকোনো সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। অনেক সময় উপজেলা হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম থাকে নাহ। তাই যাদের ঢাকার কাছাকাছি বাসা তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিডফোর্ড হাসপাতালে যাওয়া টাই উত্তম। সেখানে গেলে এন্টিভেনম পাওয়া যাবে। এবং সঠিক চিকিৎসা সম্ভব। 


কেউ যদি সাপে কামড়ে আক্রান্ত হয় তবে আক্রান্ত স্থান খুব শক্ত করে বাঁধা যাবে না। এতে অঙ্গহানি হতে পারে। আক্রান্ত স্থান কাটা-ছেঁড়া করা যাবে নাহ, তাতে দ্রুত বিষ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত স্থান কোনো ক্রমেই বেশি নড়াচড়া করা যাবে নাহ, এতেও বিষ ছড়াতে পারে। মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়ার গুজবে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক তথ্য জানুন৷ নিজে সচেতন হয়ে উঠুন, অন্যকে সচেতন করুন। সচেতনতাই পারে রাসেল'স ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপের কবল থেকে আমাদের রক্ষা করতে। তাই ভয়, আতঙ্ক নয়, পরিবেশের উপর ভারসাম্যময় সুস্থ সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠুক এটাই আমাদের কাম্য। 





খাদিজা আখতার 

অনার্স ৪র্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ 

সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, ঢাকা।

আরও খবর