বিভাগে নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করা, বিভাগের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা ও সংগঠনে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে গনিত বিভাগের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ডাটা প্রসেসর (আপগ্রেড) এ কে এম কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে।
কর্মচারিদের একটা অংশ নিয়ে তিনি একটি বলয় তৈরি করেছেন এবং সংগঠনের দাবির বাহিরে গিয়ে সাবেক রেজিস্ট্রার পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সুবিধা গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ উঠে। দীর্ঘদিন কর্মচারীদের নিয়ে তার এ বলয় নিয়ে ক্ষমতা বিস্তার করার পর অবশেষে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পরিষদ থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন। শুধু তিনিই নন তার মতো আরো ৮ জন এ শাস্তির আওতাভুক্ত হয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মো: মহসিন স্বাক্ষরিত ২৩ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর আগে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা যায়।
দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন ও কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে জানা যায়, ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংগঠনিক সকল কাজে বিশৃঙ্খলা ও মিথ্যা-গুজব ছড়ানোসহ একাধিক অপরাধের সাথে সরাসরি ও প্রত্যক্ষ জড়িত থাকায় গনিত বিভাগের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ডাটা প্রসেসর (আপগ্রেড) এ কে এম কামরুল হাসানের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পরিষদের সদস্যপদ বাতিল ও পরিষদের ২ টি নির্বাচনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়।
এ কে এম কামরুল হাসান বলেন, পরিষদের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অগণতান্ত্রিক। কোনো তদন্ত কমিটি আমাদের সাক্ষাতকার নেয়নি। তারা বলেছে আমরা গুজব ছড়িয়েছি। কিন্তু কি গুজব ছড়িয়েছি তা স্পষ্ট করে নি।
কামরুল হাসান কাজ করছেন গনিত বিভাগের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ডাটা প্রসেসর (আপগ্রেড) পদে। সেখানে তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ উঠে। সম্প্রতি গণিত বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রারের কাছে দায়িত্ব পালন না করা নিয়ে শিক্ষকরা অভিযোগ দেয়। এরপর রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিয়মিত কাজ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক বলেন, তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এসেছিল। পরে তাকে ডেকে এনেছিলাম যাতে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে ও দায়িত্ব পালনে আরো সোচ্চার হয়।
এ ব্যাপারে কামরুল হাসান বলেন, আমি একদিন বাস মিস করায় দেড়ি হয়ে গেলে রেজিস্ট্রারের কাছে বিভাগ থেকে ফোন দেয়া হলে রেজিস্ট্রার আমাকে ডাকেন। তখন আমি স্যারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আর আমি স্যারকে কথা দিয়েছি যে নিয়মিত অফিস করবো।
শুধু একদিন বাস মিস করলেই বিভাগ থেকে অভিযোগ কেনো দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে কেনো অভিযোগ দিয়েছে সেটা আমি জানি না। এটা শিক্ষকরাই বলতে পাড়বে।
এছাড়াও, এ কে এম কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে এর আগে গণিত বিভাগের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে।
গণিত বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. আবদুল হাকিম বলেন, আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখন তার একটু সমস্যা ধরা পড়েছিল। তখন লিখিত নেয়া হয়েছিল যে এরকম কর্মকান্ডের সাথে আর কখনো জড়িত হবে না।
শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাথের বিষয়ে কামরুল হাসান বলেন, এ ঘটনা আমার স্মরণে আসছে না। আমি কিছু বলতে পারছি না।
২০২০ সালে কর্মচারীদের নানা দাবি দাওয়া নিয়ে যখন আন্দোলন চলমান। তখন তিনি কয়েকজন কর্মচারীদের নিয়ে বৃহৎ অংশের কর্মচারীদের স্বার্থের বাহিরে গিয়ে প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নেন।
এছাড়াও সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রশাসনিক নানান সুবিধা গ্রহণ করতেন। সুসম্পর্ক বজায় রাখার সুবাদে তার স্ত্রী কামরুন্নাহারকে তৎকালীন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে অফিস সহকারী কাম ডাটা প্রসেসর পদে চাকরি দেয়।
তবে সুসম্পর্ক নয় বরং যোগ্যতার বলে স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন দাবি করে কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার স্ত্রীকে যোগ্য মনে করেছে তাই নিয়োগ দিয়েছে। সুসম্পর্কের কারনে চাকরি দিয়েছে এগুলো মিথ্যা কথা।
এছাড়াও তিনি বর্তমানে আওয়ামী ঘরানার পরিচয় দিলেও পূর্বে বিএনপি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল বলেও অভিযোগ উঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, কামরুল হাসান বিএনপির লোক। তিনি ভার্সিটির প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য বিএনপি সমর্থিত গোলাম মাওলা স্যারের আত্মীয়। ঐ সময় বিএনপির ক্ষমতাবলে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। পরবর্তীতে বিএনপির সাথে প্রাসঙ্গিকতা থাকার কারনে তাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কামরুল হাসান বলেন, যে বা যাহারা এই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন তারা যদি প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যাবো। আমি চাকরির জন্য আবেদন করেছি কর্তৃপক্ষ আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় আমাকে চাকরি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছি, তাই আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগগুলো তুলা হচ্ছে। আমি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দলের সাথে কখনো সংযুক্ত ছিলাম তা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে কর্তৃপক্ষ আমাকে যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।
সার্বিক বিষয়ে তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, কামরুল হাসানসহ কয়েকজন সংগঠনে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টায় রয়েছে। তাই তাদের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, কামরুল হাসানের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে কর্মচারী পরিষদ ও প্রশাসন দুই পক্ষেই ব্যালেন্স করতো। আর সে কর্মচারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে সার্বক্ষণিক আবু তাহের স্যারের (সাবেক রেজিস্ট্রার) পক্ষপাতিত্ব করে। স্যারের বাসায় খাবার নিয়ে যেত। এভাবে নিজের স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে।
৮ দিন ১৪ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১০ দিন ১৫ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১০ দিন ২১ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১১ দিন ১৯ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
১২ দিন ১৫ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১২ দিন ১৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১২ দিন ১৭ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১২ দিন ১৮ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে