শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে পবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের আনন্দ মিছিল হাসিনার বিরুদ্ধে রায় প্রমাণ করে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়: প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন চাইলেন বিএনপির প্রার্থী মাহবুবের রহমান শামীম লাখাইয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা সালেহ উদ্দিন এর ইন্তেকাল, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন। পীরগাছায় ‘আলোর দিশারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার’ শীতবস্ত্র বিতরণ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে আরও একটি ধাক্কা: বিবিসি ঢাকা কলেজ লেখক ফোরামের দায়িত্ব হস্তান্তর ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত খোসালখালী মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবো: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্যামনগরে সেনা অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ আটক-১ শিবচরে পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী-শিশুসহ আহত ১২ আশাশুনির তেঁতিলিয়া বাজারে কাজী আলাউদ্দীনের নির্বাচনী প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় প্রকাশের পর জয়পুরহাটে বিএনপির আনন্দ মিছিল পাঁচ দিনের শুভেচ্ছা সফরে রাশিয়ান নৌবাহিনীর জাহাজ চট্টগ্রামে জলিল বিশ্বাস পয়েন্ট ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামেের নবনির্বাচিত কমিটির সভা দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে দোকানঘর থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার মোংলায় নাশকতার অভিযোগে যুবলীগ নেতা আটক জনগণের কাছে আমাদের যে অঙ্গীকার তা আমরা পালন করব,,তৃপ্তি ক্ষেতলালে তিনটি সাংস্কৃতিক সংগঠনে বাদ্যযন্ত্র উপহার ক্ষেতলালে অতি দরিদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বিনামূল্যে ছাগল ও গৃহ নির্মাণ উপকরণ বিতরণ

দুর্যোগ সহনশীল কৃষির স্বপ্ন বুনছেন উপকুলের সরমা রানী

দুর্যোগ সহনশীল কৃষির স্বপ্ন বুনছেন উপকুলের সরমা রানী

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর উপজেলা প্রতিনিধি ঃ  পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের উপকুলীয় এলাকার মানুষকে। প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়। এখানে কোন একটি দুর্যোগ শেষ হতে না হতেই নতুন দুর্যোগ এসে হাজির হয়। এখানে ক্ষরা, লবনাক্ততা, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা, অতিবৃষ্টি সব সময় লেগে আছে। যার কারণে নিজেদের ইচ্ছা মতো সব রকমের ফসল ফলানো সম্ভব হয় না। তার পরেও নিজেদের জ্ঞান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বছর ব্যাপি বিভিন্ন ফসল চাষবাদ করি। আমাদের সবসময় পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।

এসব কথা গুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চচার্কারী সরমা রানী (৪৬)। সরমা রানীর পরিবারে বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩ জন। স্বামী বিমল মন্ডল শারীরিকভাবে অসুস্থ্য । কোন ধরনের ভারী কাজ তেমন একটা করতে পারেন না। তিনি মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সৎসঙ্গ মন্দিরের সেবায়িত হিসেবে কাজে করেন। যার কারণে বাড়ির সব ধরনের কাজ করতে হয় সরমা রানীকে। নিজেদের জমিজমা বলতে মোট ৬৬ শতক। যার মধ্যে ৪৬ শতক ধান চাষ এবং বাকী ২০ শতক বসতভিটা। যেখানে বছর ব্যাপি বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। এগুলোর পাশাপাশি প্রতি বছর প্রায় ২ বিঘা অন্যের জমি হারি (বর্গা/লীজ) নিয়ে ধানচাষ করেন।লবনাক্ত এলাকা হওয়া সত্বেও জৈব প্রযুক্তিতে সবজি চাষ করে তিনি প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার সবজি বিক্রী করেন।তিনি তার আয় থেকে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালান ও এনজিও সমিতিতে কিছু সঞ্চয়ও করেছেন।

 বাড়িতে বর্তমান মৌসুমের জন্য লাউ, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি, বেগুন, ঢেড়স, পুইশাক, শসা, ওল, সজিনা, উচ্ছে, তরুল, শিম, কচুরমুখী, কচু ইত্যাদি চাষ করেছেন। মসলার মধ্যে আছে ৮ ধরনের মরিচ, আদা, হলুদ ও চুইঝাল। এগুলোর পাশাপশি বিভিন্ন মৌসুমী ফসলও চাষ করেন। এছাড়াও তার বাড়িতে ফলজ বৃক্ষ আম, জাম, নারকেল, কদবেল, ছবেদা, লেবু, জামরুল, শ্রিফল, ডালিম, খৈ, আমড়া, পেঁপে, কলা। অচাষকৃত উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক হেলাঞ্চ, কলমি, আদাবরুন, সেঞ্চি, ঘুম শাক, পেপুল, গিমেশাক, বুড়িপান। বনজ গাছের মধ্যে আছে মেহগনি, বাঁশ, সোনাজুরি, সুপারি, তুলা। ধান, সবজিচাষের পাশাপাশি পুকুরে মাছের চাষ করেছেন যেখানে আছে তেলাপিয়া, শোল, কৈ, মাগুর, পুটি, বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কুচে, বাইন, তোড়া প্রভৃতি। অন্যদিকে প্রানী সম্পদের রয়েছে হাঁস, মুরগি ও কবুতর ।

 সরমা রানী জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে প্রতিনিয়ত খাপ খাইয়ে যেভাবে ফসল ফলানো যায় তার জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ ও চর্চা গ্রহন করেন। তার উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টাওয়ার পদ্ধতি, বস্তা, ঝুড়ি, মাচান, ক্যারেট পদ্ধতিতে সবজি চাষ। একই সাথে প্লাস্টিকের বালতি, বোয়াম, বোতলের মাধ্যমে ফসল চাষ করে প্লাষ্টিকের পুনঃব্যবহার করছেন। সাথে বিভিন্ন ধরনের জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করেন। যেমন নিম পাতা ও ফল, মেহগনির ফল, রসুন বাটা, ঘুটের ছাই, তামাক ও গুল মিশ্রিত করে। সাথে দুর্যোগ কালীন বিভিন্ন শুকনা খাবার সংরক্ষণ করেন।

 তার এ উদ্যোগ ও চর্চা অন্য গ্রাম ও অন্য কৃষক-কৃষানীদের নিকট একটি শিখন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সরমা রানী জানান যে,  কৃষিতে তার সফলতা দেখে বেসরকারী সংগঠন বারসিক তার সাথে ২০১৮ সালে প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ কৃষি বাড়ি হিসাবে চিহ্নিত করেন। সেখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সরমা বাড়িটি শত বাড়ি এবং পরবর্তীতে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

 তিনি আরো বলেন যে, তার জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, ভিটায় কোন ফাঁকা স্থান থাকেনা। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে এসে দেখেন বড় অভাব। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। স্বামীর মাত্র ১ বিঘা জমি। তারপর সংসারের চাকাকে সচল করার জন্য  মুজরী দেওয়া, বসতভিটায় বিভিন্ন ফসল চাষ, অন্যের জমি বর্গা নেওয়া এভাবে স্বামীর হাতে হাতে কাজ করে আরো ১ বিঘা জমি ক্রয় করেন। সাথে ৪ ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করানো এবং ৩ মেয়ের বিয়ে দেওয়া সব এই কৃষির আয় থেকে।

 সরমা রানী জানান যে, বাড়িটি কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠায় আগ্রহ ও উদ্যোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বিভিন্ন জায়গার মানুষ দেখতে আসে। তিনি  একজন প্রশিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় জৈব বালাইনাশক তৈরি, বীজ সংরক্ষণ, হাজোল তৈরি, সংগঠন তৈরি বিষয় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন কখনও কখনও। একই সাথে বাড়িতে ছোট একটি বীজ ব্যাংক ও তৈরি করেছেন যেখানে প্রতি মৌসুমের বীজ সংরক্ষণ করেন এবং বিনিময় করেন। সরমার কৃষি চর্চা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার নারী কৃষক শ্যামলী রানী, নিশা রানী, কবিতা রানী, সুজাতা রানী, অনিমা রানী সহ অন্যান্যরা সবজি চাষ শুরু করেছেন বা করছেন।তিনি বলেন তার জৈব কৃষি ফসলের চাষ দেখার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, এনজিও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন ও মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিধিবৃন্দ গতবছর পরিদর্শন করেছিলেন। তবে তার এই উদ্যোগকে সামনে আরও এগিয়ে নিতে সরকারি বেসরকারীভাবে সহায়তা চান। বিশেষকরে তিনি মত প্রকাশ করে বলেন জৈব প্রযুক্তি বা জৈব সার তৈরীতে গোবর একটি উপকরণ।কিন্ত তার গরু না থাকায় জৈবসার তৈরীতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

সরমা রানীর এ উদ্যোগ ও কৌশল গুলো উপকুলীয় এলাকায় বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন বলে কৃষকরা মনে করেন। পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সরমা রানীর মতো যে সব নারীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের কাজকে সরকারী বেসরকারী ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তাদেরমত কৃষকদের কৃষি কাজে আরও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে অভিজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন।

ছবি- উপকুলের শ্যামনগরে  দুর্যোগ সহনশীল কৃষি চর্চা কারী নারী কৃষক সরমা রানী।




Tag
আরও খবর