নিষিদ্ধ হলো ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ নাগরপুরে বিবাহিত নারীর অশ্লীল ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নন্দীগ্রামে জামায়াত-শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মোংলায় মশাল মিছিল প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ প্রদান দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোষহীন থাকবে জামায়াত ছাত্রদলের আহ্বায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন শিবিরের সভাপতি বাগআঁচড়া বেলতলা আম বাজারে মানবাধিকার কর্মী পরিচয় চাঁদাবাজি, থানায় অভিযোগ সঙ্গীতশিল্পী মুস্তফা জামান আব্বাসী আর নেই যৌথবাহিনীর অভিযানে পুশকৃত চিংড়ী আটক, ছয়জনকে জরিমানা স্বাধীন গণমাধ্যম: সমাজের আয়না পীরগাছায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করলেন জাপা নেতা!! স্বাক্ষী অপর দুই বিএনপি নেতা; সমালোচনার ঝড় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: ট্রাম্প লালপুরে পর্নোগ্রাফি অপরাধে শফিউদৌলা গ্রেপ্তার মৌলভীবাজারে ‘লীগ ধর, জেলে ভর, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’ স্লোগানে উত্তাল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিও করার দাবিতে লালপুরে মতবিনিময় সভা সাধারণ মানুষের মাঝে ৫ শতাধিক বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করলেন আহসানুল কবির বাবু পূর্ব নির্ধারিত স্থানে সুবিপ্রবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন যৌথ বাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজ গ্রেফতার শ্যামনগরে তিন দফা দাবীতে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিল

মৌলভীবাজার কুষ্ঠ রোগের রেড জোন

দেশের নয়টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের পরিধি মৌলভীবাজারে থাকায় এ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় মৌলভীবাজারের জেলায় চা শ্রমিকদের মধ্যে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। চা শ্রমিকদের অধিকাংশ পরিবারেই কেউ না কেউ আক্রান্ত। প্রতি বছরই কুষ্ঠ রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত হীড বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে বর্তমানে এ জেলায় কুষ্ঠ রোগী আছেন ২৪০ জন। তবে এ সংখ্যা একমত নয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ অফিসের তথ্য মতে জেলায় বর্তমানে মোট কুষ্ঠ রোগী ১২২ জন। ২০২২ সালে আমাদের হিসাবে রোগী ছিল ১৮৯ জন, কিন্তু হীডের হিসাবে ছিল ১০৫ জন। আমাদের হিসাব ও জরিপ অনুযায়ী রোগীদের নিয়মিত চেকআপ, চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলো থেকে।

হীড বাংলাদেশের লিয়াজোঁ অফিসার নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে মৌলভীবাজারে হীডের তত্ত্বাবধানে আছেন ২৪০ জন কুষ্ঠ রোগী। তাদের প্রায় ৯৫ শতাংশই জেলার বিভিন্ন চা-বাগানের নারী ও পুরুষ শ্রমিক। কয়েকটি শিশুও রয়েছে। তবে নারী রোগীদের সংখ্যা বেশি। হীড বাংলাদেশের হিসেবে জেলার জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৪০ জন হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে আছেন ১২২ জন।

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) মোঃ মাহবুবর রহমান জানান, বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগ বিভাগের অধিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে পুরুষ ১জন, পূর্বাশা আবাসিক এলাকায় পুরুষ ১জন, শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকায় ১জন নারী, ভূনবী ইউনিয়নের আলিশারকুল এলাকায় ১জন পুরুষ, ১জন নারী, সাতগাঁও চা বাগানে ২জন নারী, কালাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় ১জন পুরুষ, ফুলছড়ি চা বাগানে ১জন পুরুষ, মাজদিহি চা বাগানে ১জন পুরুষ, ২ জন মহিলা, শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের সন্ধানী আবাসিক এলাকায় ১জন পুরুষ, রাজঘাটন ইউনিয়নের রাজঘাট চা বাগানে ২জন নারী, বর্মা ছড়া চা বাগানে ২জন পুরুষ, ২জন নারী, ভুড়ভুরিয়া চা বাগানে ৩জন নারী, ১জন পুরুষ, জেরিন চা বাগানে ২জন নারী, ২জন পুরুষ, ভাড়াউড়া চা বাগানে ২জন পুরুষ, খেজুরি ছড়া চা বাগানে ১জন নারী, ১জন পুরুষ, মাজদিহি চা বাগানে ২ জন নারী, ১জন পুরুষ, খাইছড়া চা বাগানে ১জন পুরুষ, টিপড়া ছড়া চা বাগানে ১জন পুরুষ, উদনা ছড়া চা বাগানে ১জন নারী, ১জন পুরুষ, ভুড়ভুড়িয়া চা বাগানে ২জন নারী এবং ১জন পুরুষ। দুপুরে কথা হয় শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা, কুষ্ঠ রোগী পারুল বেগমের সাথে। তিনি বলেন আমি গত ৩ মাস ধরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগ বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। ওষুধ সেবনের পর থেকে আমার হাতের দাগ অনেকটা কমার দিকে। ১৫ মাস যাবৎ কুুষ্ঠ রোগের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম। মুঠোফেনে তার সাথে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেলেন, আমার কোমরের নিচের মাংস পেশিতে আমার এ রোগ। ওষুধ খেয়ে ৬ মাস পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরো সুস্থ হতে পারিনি। ইনফেকশন হয়ে গেছে। আমি এ রোগ নিয়ে চিন্তিত। তবে হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা আমাকে ফ্রি ওষুধ চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এখন ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় যন্ত্রণা ভোগ করছি। জানতে চাইলে চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বিন বলেন, এর মূল কারণ চা বাগানের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর এবং অসচেতন।  তারা কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। উপরন্তু, তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হয়। যার কারণে চা বাগানে এ রোগের প্রকোপ বেশি।  কুষ্ঠ রোগী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না। 

মৌলভীবাজারে কুষ্ঠ রোগ নিয়ে কাজ করছে হীড বাংলাদেশ। রোগীদের দেখাশোনা, খোঁজ রাখা, পরিচর্যা করা, চিকিৎসা কিট দেওয়া ইত্যাদি কাজে হীডকে সহায়তা করার জন্য গঠন করা হয়েছে ‘স্বজন’ নামে একটি সমিতি। সমিতির সদস্যদের সবাই কুষ্ঠ রোগী। সমিতির সভানেত্রী ২৭ বছর বয়সি স্বর্ণবালা সিং। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে আক্রান্ত। স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে আছে তার। সংসার সামলানোর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত খোঁজ নেন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ও চা-বাগানের কুষ্ঠ রোগীদের। 

চা-বাগানে এ রোগটি কেন বেশি হয় জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, কুষ্ঠ আক্রান্তের হার চা বাগানের শ্রমিকদের মাঝে বেশি।চা-বাগানের শ্রমিকদের অনেক ক্ষেত্রে ভিড়ের মধ্যে কাজ করতে হয়। এসব বাগানের শ্রমিকরা অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। তাদের উপযুক্ত খাবার, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব থাকে। তাই তারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। এ কারণে এই রোগের প্রকোপ বেশি। চা বাগানে এখন কুষ্ঠ শনাক্তে কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য রোগী শনাক্ত বেড়েছে। সরকার তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে বলেও জানান।

Tag
আরও খবর