শেরপুরের সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ে বর্ষা নামলে শুরু হয় এক বিশেষ পণ্যের মৌসুম- পিঁপড়ার ডিম। জীবিকার সন্ধানে স্থানীয় বহু পরিবার এখন ডিম সংগ্রহ ও বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। ঝিনাইগাতী উপজেলার বাঁকাকুড়া, গজনী, নয়া রাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা- এই কয়েকটি গ্রামেই বিকেলের দিকে জমে ওঠে পিঁপড়ার ডিমের হাট। ছোট ছোট ঝুড়িতে সাজানো ডিম কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ডিম মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
তিনশোরও বেশি নিম্ন আয়ের পরিবার এখন এ কাজে যুক্ত। পাহাড়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণদের অংশগ্রহণও দিনদিন বাড়ছে। জীবিকার প্রয়োজনই তাদের এই পেশায় টেনে এনেছে।
একজন সংগ্রাহক জানান, “আমরা গরিব মানুষ, কাজ নেই। সকালেই পাহাড়ে ঢুকে যাই, সন্ধ্যায় ফিরি। একদিনে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ডিম পাওয়া যায়। হাতি, পিঁপড়ার কামড়- সব সহ্য করেই করতে হয়।”
ডিম কিনে দেশের নানা স্থানে পাঠানোর জন্য স্থানীয়ভাবে একটি ছোট বাণিজ্যচক্র গড়ে উঠেছে। পাইকারদের ভাষ্য, তারা প্রতিকেজি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায় ডিম কিনে বক্সিং করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। খরচ বাদ দিলেও তাদের লাভ ভালোই হয়। অনেকেই এখন এই ব্যবসাকে মূল আয়ের উৎস হিসেবে দেখছেন।
তবে এ চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ছে পরিবেশবিদদের। নির্বিচারে ডিম সংগ্রহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পিঁপড়ার স্বাভাবিক চক্র, আর তার প্রভাব পড়ছে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্যে।
বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে অতিরিক্ত ডিম আহরণ করলে বন পরিবেশে প্রভাব পড়বে। বিষয়টি আমরা নজরদারিতে রেখেছি; প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একদিকে সীমান্ত এলাকার দরিদ্র মানুষের নতুন আয়ের পথ, অন্যদিকে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ- এই দুইয়ের সমন্বয়েই টিকে থাকবে শেরপুরের এই পাহাড়ি অঞ্চলের ভারসাম্য। এখন প্রয়োজন সচেতনতা, নীতিমালা এবং দায়িত্বশীল উদ্যোগ।
১ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে