মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিয়ম না মেনে অনুমোদনহীন এ সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘ বছর ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে রয়েছে স্মাগলিং ও অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার। গত ৫ জুন আশাশুনি উপজেলার কুল্যার মোড়ে অবস্থিত মা সার্জিক্যাল ক্লিনিক নামের একটি অনুমোদনহীন ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ ১০০ কাটুন ফেমিকন ( জন্মবিরতিকরণ ট্যাবলেট )সহ ক্লিনিকের মালিক কথিত ডা. তরুণ কুমার মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ রয়েছে কথিত ডা. তরুণ কুমার মন্ডল বাংলাদেশি এসব ওষুধ সরকারি হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ভারতে পাচার করেন। এছাড়া ওই ক্লিনিকে রুগির ছদ্মবেশে চলে অবৈধ ব্যবসা। নারীদের দিয়ে করানো হয় অনৈতিক কাজ। শুধু মা সার্জিক্যাল ক্লিনিক নয়, এরকম অভিযোগ রয়েছে কথিত ডা. তরুণের কাকা বিধান মন্ডল পরিচালিত শহরের একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও।
সূত্র জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর আগে পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, যন্ত্রপাতি। শুধু তাই নয়, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। ড্রাগ লাইসেন্স, নাইক্রোটিস লাইসেন্স ছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হয়। ক্লিনিক থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে হলে অব্যশই পরমাণু রেডিয়েশনের ছাড়পত্র লাগে। সকল নিয়ম অনুযায়ী আবেদন বৈধ হওয়ার পর প্রতি অর্থবছরে নবায়ন করতে হয়।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ১২৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কাছে। ১২৫ টির ক্লিনিকের তথ্যর বাইরে শতাধিক ক্লিনিক শহরের আনাচে কানাচে, হাটে মোড়ে, অলিতে গলিতে চোখে পড়ে। চলতি বছর নবায়নের জন্য আবেদন করলেও কাগজপত্র সঠিক না থাকায় আবেদন দেয় নাই। ১২৫টির ভিতর ২১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সকল কাগজপত্র সঠিক আছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন। বাকিগুলোর সকল বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধ ক্লিনিকগুলো চলে বিশেষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও লাঘব বোয়ালদের শেল্টারে।
শহরের অবস্থিত লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিকগুলো হলো-সদরে ১৩টি সানজানা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একতা হাসপাতাল, রায়হানা স্যার্জিকাল ক্লিনিক, ডিজিটাল মেডিকেল সেন্টার, এম আলী পলি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকেয়ার প্যাথলজি সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাঁকাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিনোভা ডায়াবেটিক এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, আস্থা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
শ্যামনগরে ১৪টি ক্লিনিক হলো- কাশিমাড়ী ডিজিটাল ক্লিনিক, আল শেফা হাসপাতাল, ড. আনসার আলী হাসপাতাল, আনিকা প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রেগনেন্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তার খান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আল বারাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডেল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নুরনগর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুন্সিগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফ্যামিলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কাশিমাড়ী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কালিগঞ্জে ৭টি ক্লিনিক হলো- ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নুর নগর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মৌতলা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডিজিটাল ল্যাব, খায়রুনেচ্ছা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফ্যামিলি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস, আলোর দিশা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ল্যাব।
আশাশুনিতে ৩টি ক্লিনিক হলো- তাজ ক্লিনিক, হাইকেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাব, সোনার বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কলারোয়ায় রয়েছে ১৪টি। সেগুলো হলো-আছিয়া মেমোরিয়াল নার্সিং হোম, জনসেবা ক্লিনিক, সবুজ ক্লিনিক, সোনাবাড়িয়া নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পল্লী সেবা ক্লিনিক, জননী নার্সিং হোম, কাজিরহাট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. আ. হাকিল স্যার্জিকাল ক্লিনিক, খোরশেদ পল্লী সেবা কেন্দ্র, স্টার প্যাথলজি সেন্টার, ই-ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নোভা ডিজিটাল ল্যাব, ইভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
তালায় রয়েছে ৫টি। সেগুলো হলো-পপুলার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জননী নার্সিং হোম, এ আর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তালা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
দেবহাটায় রয়েছে ৩টি। সেগুলো হলো-কুলিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিটি ডিজিটাল ল্যাব এন্ড ক্লিনিক, মেডিপয়েন্ট ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক।
লাইসেন্স রয়েছে নবায়নের জন্য আবেদন করেনি কয়েকবছর ধরে এমন ক্লিনিক সদরে ১১টি। সেগুলো হলো স্বপ্ন ক্লিনিক, স্বপ্না ক্লিনিক, স্বপ্না ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্বদেশ ক্লিনিক, সাতক্ষীরা স্যার্জিকাল ক্লিনিক, নিরাময় ক্লিনিক, নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিমুল মেমোরিয়াল ক্লিনিক, শিমুল মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এম আলী পলি ক্লিনিক ও সুন্দরবন ক্লিনিক।
শ্যামনগরের শামিমা ক্লিনিক ও আরজি নার্সিং হোম। কালিগঞ্জের যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কলারোয়ায় মায়ের হাসি নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সাকিব মেমোরিয়াল ক্লিনিক ও কলারোয়া নার্সিং হোম। তালায় রয়েছে স্বাগতা ক্লিনিক, দেবাহাটার হাবিবা স্যার্জিকাল ক্লিনিক, মোমেনা হাসপাতাল প্রাঃ ও গাজী স্যার্জিকাল ক্লিনিক।
লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে কিন্তু কাগজপত্র সঠিক ও সকল ডকুমেন্টস না থাকার কারণে অনুমোদন দেয়নি এমন ক্লিনিকগুলো হলো-সদরে ক্রিস্টাল হাসপাতাল, সোনালী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, করবী ডা. এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, সাতক্ষীরা গাইনী হাসপাতাল, আনোয়ারা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার ও জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
আশাশুনিতে ডক্টরস ক্লিনিক ও কালিগঞ্জে নলতা ডায়াবেটিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালে লিঃ, ডা. হয়রত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল।
এছাড়া সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অনেকাংশে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত থাকায় কোন নিয়মকানুন মানা লাগেনা। দালালদের মাধ্যমে এসব ক্লিনিক পরিচালনা করা হয়।
ধার করা খন্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা। এছাড়াও এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময়ই ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে নেই অ্যাম্বুলেন্স, নেই এনেস্থিয়া ডাক্তার, নেই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। এখানে নেই প্রশিক্ষিত নার্স। তবুও চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
নাগরিক কমিটির আহবায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সাতক্ষীরা চিকিৎসা বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে কিছু রাঘব বোয়াল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এগুলো চলে। মাঝে মাঝে অভিযান হয়, থেমেও যায়। এই অভিযান কেন হয় কেন থেমে যায় আমরা আজও বুঝতে পারিনে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, আমি সাতক্ষীরা নতুন এসেছি। আগের সিভিল সার্জন কি করেছে এর দায়ভার আমি নিব না। আমি বেসরকারি ক্লিনিক এ্যাসোসিয়েশন সাথে বসেছি। আগামী ১ জুলাই থেকে সকল ক্লিনিক পরিদর্শন করব। কাদের লাইসেন্স নেই, কারা নবায়ন করেনি, সেটা দেখা হবে।
৪ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১ দিন ২ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১ দিন ৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১ দিন ৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১ দিন ৭ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
২ দিন ২ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে