ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা জয়পুরহাটে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান ভারতের মুসলমানদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানালো - (IHRC) রাকিবুল ইসলাম শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে দিনব্যাপী কৃষক ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত শাজাহানপুর ভোক্তা-অধিকারের অভিযান, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা !!! জবিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত ফুলবাড়ীতে সরকারীভাবে ধান- চাল সংগ্রহ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন আবারও নোয়াখালীতে ৬ বছর শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ নিজ ঘরে নামাজ পড়তে উঠে ছুরিকাঘাতে নারী খুন চোরের ছুরিকাঘাতে চাটখিলে বৃদ্ধার মৃত্যু ধর্ষন মামলায় মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল শক্তিশালী এক মুসলিম দেশ রাজশাহী কলেজে ভাইভা দিতে এসে ছাত্রলীগ কর্মী আটক মিরসরাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্থ ও দুস্থ্য পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান সুন্দরবনে হরিণ মারার ফাঁসদড়ি ও দুটি নৌকা উদ্ধার শান্তিগঞ্জে পিক-আপের ধাক্কায় শিশু নিহত,গুরুতর আহত-১ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ফরমালিনযুক্ত আমের দোকানে অভিযান, ফরমালিনযুক্ত আম ধ্বংসসহ ২টি দোকানে জরিমানা ঝিনাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত মসজিদ কমিটির মোতায়াল্লি, সভাপতি, মুয়াজ্জিন ও ক্যাশিয়ার একই ব্যক্তি !! পীরগাছায় পাঁচদিন ধরে জামে মসজিদে তালা কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ চায় এনসিপি

অনেক শিক্ষক সমিতি, তবু নিয়ম অনিয়মের মারপ্যাঁচে শিক্ষক নির্যাতন!

অনেক শিক্ষক সমিতি, তবু নিয়ম অনিয়মের মারপ্যাঁচে শিক্ষক নির্যাতন!

ভূমিকা

বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমিতি আছে৷ শিক্ষকদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদ, দোষীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে তারা কতটা তৎপর?মনীষী সক্রেটিসের ভাষায় পৃথিবী একটা নাট্যমঞ্চ। জগতের সব মানুষই পৃথিবী নামক নাট্যমঞ্চের অভিনেতা। প্রত্যেক মানুষই পদ ও পদবির আলোকে তার রোল-প্লে করে থাকে। এটার ব্যতিক্রম হওয়াই একটা সমস্যা।নিজ যোগ্যতা ও অর্জন নিয়ে সন্দেহ মানসিক সমস্যার পর্যায়ে চলে গেলে সেটিকে বলা হয় ইমপোস্টার সিনড্রোম। দেশের  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে বেশি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ৩২ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এখন ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন। নিজেদের প্রতারক ও অযোগ্য ভাবছেন তারা।ইমপোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্তদের মধ্যে নিজেকে অযোগ্য ও প্রতারক ভাবার প্রবণতা রয়েছে। নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে অন্যের ধারণাকেও তাদের অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়। এতে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়। একই সঙ্গে আতঙ্ক তৈরি হয়, তাদের অযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতার কথা মানুষ জেনে যাবে। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ৫০০ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরমধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, পুরোপুরি অমূলক হলেও  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের  মধ্যেই এখন এ ধরনের বিশ্বাস ও আতঙ্ক কম বেশি কাজ করছে।

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড ও ইউনিভার্সিটি অব সিডনির একদল বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি এ গবেষণা চালান।

সাধারণ মানসিক রোগের সঙ্গে ইমপোস্টার সিনড্রোমের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝারি ও গুরুতর মাত্রায় ইমপোস্টার সিনড্রোমের উপস্থিতি তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও একাডেমিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে। এসব শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না। ক্ষতির মুখে পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।

শিক্ষক কখনোই প্রতারক হতে পারে না যদি সে এমন হয়!

শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রথমেই যে বিষয়টি এসেছিল সেটি হলো প্রকৃত ঘটনা। বাঙালি প্রবাদে তার নিদর্শন পাওয়া যায়, কোথায় শিখি-যেথায় ঠেকি এটাই হলো শিক্ষার মূল জায়গা। এর পর এসেছে অলৌকিকতা/ভাববাদ। ভাববাদী দর্শন নিয়েই প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা। পৃথিবীর বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাসে সেটাই প্রমাণ করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং তাদের জীবন ও জীবিকা সে সঙ্গে সুন্দর ভবিষৎ গড়তে নতুন চিন্তা হিসেবে যুক্তি/দর্শন এর পর সেটা আরো আধুনিক ও যুক্তিবাদী করতে বিজ্ঞানকে শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে। যারা এটাকে গ্রহণ করেছে তারা সামনে এগিয়েছে, আর যারা গ্রহণ করেনি তারা পিছিয়ে আছে। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষ, এরপরও বাড়তেই থাকবে। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর নানামুখী চাহিদা মিটাতে প্রকৃতির এই সম্পদের নানামুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। আর এ জন্যই প্রয়োজন শিক্ষা এবং সেই শিক্ষাকে হতে হবে যুগের চাহিদা মিটানোর ক্ষমতা। শিক্ষকতা আর পাঁচটি পেশার মতো গতানুগতিক কোনো কাজ নয়। কাদা-মাটি দিয়ে কুমার যেমন বিভিন্ন আকৃতির তৈজসপত্র তৈরি করেন, শিক্ষককেও সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রাণিত্বকে মনুষ্যত্বে পরিণত করার কাজটি কিন্তু অত সহজ নয়, শিক্ষককেই সেই কঠিন কাজটিকে সহজ করতে হয়। এজন্য সমাজ রাষ্ট্র এবং শিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। শ্রেণিকক্ষে কার্যকর পাঠদান নিশ্চিত করতে যেমন শিক্ষক, শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের সমন্বয় প্রয়োজন, সেই সঙ্গে অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃপক্ষ এবং সরকারের ভূমিকাও আছে। বিষয়গুলোর মধ্যে সুষম সমন্বয় না হলে কাজটি যথাযথভাবে হবে না। শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি মনোযোগী এবং আগ্রহী হওয়া যেমন জরুরি তেমনি শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি এবং নিবৃত্ত করা। কাজ দুটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার পরিবেশ। প্রয়োজন অভিভাবকের সার্বক্ষণিক তদারকি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শ্রেণিকক্ষ পাঠের উপযোগী করা সেই সঙ্গে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব লজিষ্টিক নিশ্চিত করা।

 

শিক্ষক নেতারা কি নানা স্বার্থ নিয়ে ঘোরেন?

বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো- এই সমিতিগুলো দলীয় রাজনীতির কারণে বিভক্ত৷ নেতারা নানা স্বার্থ নিয়ে ঘোরেন৷ পদ,পদবি, পদোন্নতিসহ নানা বিষয় নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন৷ তাই শিক্ষক সমিতিগুলো শিক্ষকদের বিষয় নিয়ে কাজ করার তেমন সময় পায় না৷সাধারণ শিক্ষকদের সাথে শিক্ষক সমিতির প্রতারণার ঘটনা আরেকটি বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে অন্য পর্যায়ের শিক্ষক নেতারা প্রতিবাদের ভারও শিক্ষকদের ওপরই ছেড়ে দেন৷ অন্যরা একই রকম চিন্তা করেন৷ কোনো মাদ্রাসা শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে বাকিদের তা নিয়ে তেমন আগ্রহই দেখা যায় না৷ তবে সবাইর কথা হলো, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উপাচার্য এবং প্রশাসন, সিন্ডিকেট,রিজেন্ট বোর্ড, ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাতে জিম্মি৷ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে চাকরিই তো থাকে না৷ তারপর প্রতিবাদী হলে তো আরো বিপদ৷’’পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন ৷ সমিতির সভাপতি X, ‘‘শিক্ষকদের ওপর কোনো অন্যায় হলে প্রতিবাদ হয়৷ কিন্তু সেই প্রতিবাদটা জোরালো নয়৷ এর কারণ শিক্ষকদের সব সংগঠন প্রতিবাদ করে না৷ শিক্ষক সে প্রাইমারি, হাইস্কুল বা মাদ্রাসা যে প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক হোক না কেন, সে শিক্ষক৷ সেটাই তার পরিচয়৷ কিন্তু দেখা যায়, প্রাইমারির কোনো শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হলে অন্যরা সেটা নিয়ে কথা বলে না৷ মাদ্রাসা শিক্ষক লাঞ্ছিত হলে অন্যরা মনে করেন, সে তো মাদ্রাসা শিক্ষক৷ আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো সময় প্রতিবাদ করতে দেখি না৷ সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে এই পরিস্থিতি হতো না ৷’’এখন শিক্ষকদের যে দুইশরও বেশি সংগঠন আছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে৷ মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক Y বলেন, ‘‘শিক্ষকরা যে কার্যকর প্রতিবাদ করছেন না, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এখন যে প্রশাসন যখন দায়িত্ব নেন,(বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে),ম্যানেজিং কমিটির হাতে জিম্মি৷ কমিটিগুলো দলীয় নেতা এবং এমন লোকের হাতে চলে গেছে, যাদের সুশিক্ষিত বলা যাবে না৷ তাদের পেশি শক্তি, রাজনৈতি শক্তি সবই আছে৷ ফলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যেতে পারেন না৷ নড়াইলে পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো হলো৷ তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না৷  তাদের ছত্রচ্ছায়ায়ই ঘটনা ঘটলো৷ এতেই বোঝা যায়, প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষকদের কী চোখে দেখেন৷’’তার কথা, ‘‘রাষ্ট্রীয়ভাবেও শিক্ষকরা অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার৷ তারই প্রতিফলন এখন আমরা স্থানীয় পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছি৷ একজন শিক্ষক যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান তখন তিনি অনেক সময়  বলেন আমি সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমি এখন আর শিক্ষক নই।

এসব সমিতি কমিটি খড়গের মতো!

বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বলে থাকেন শিক্ষক সমিতির কারণে আমি অথবা আমরা নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত৷ আমাকে আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের  সঙ্গে যারা কাজ করেন তাদের ব্যাপারে অনেক শিক্ষকদের মন্তব্যই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায় যার শব্দটি মোটামুটি এরকমই এসব সমিতি কমিটি খড়গের মতো৷  আমার প্রশ্ন হল এই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগই বা আমরা কেন দিচ্ছি? এর দায় কি শিক্ষক সমিতি অথবা অন্যান্য শিক্ষকদের সদস্য যারা আছেন তাদের উপর বর্তায় না।তবে শিক্ষকের মর্যাদাহানির ঘটনায় সমিতিগুলোর খুব বেশি প্রতিবাদমুখর না হওয়ার কারণ হিসেবে রাজনীতিকেও দুষেছেন অনেকে, ‘‘শিক্ষকরাও এখন দলীয়ভাবে বিভক্ত৷ অনেক সমিতিই আছে যারা দলীয় স্লোগান দিয়ে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করে৷ শিক্ষক নেতারা যদি রাজনীতি করেন, দলীয় স্লোগান দেন, দালালি করেন, তাহলে তো তাদের নৈতিক অবস্থান এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায়৷’’আমি একজন নগন্য শিক্ষক হিসাবে যা উপলব্ধি করতে পেরেছি তা অনেকটা এরকমই, ‘‘শিক্ষকদের মূল কাজ ছাত্রদের পড়াশোনা করানো৷ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তাদের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ৷ কেউ কেউ এই মূল কাজ বাদ দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে নানা সমিতি করে, রাজনীতি করে৷ এটা ঠিক না৷ শিক্ষক নির্যাতনের প্রতিবাদ যে হয়না তা নয়৷ তবে যত সমিতি তত প্রতিবাদ দেখি না৷শিক্ষকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘‘আশুলিয়ায় শিক্ষক নিহত হওয়ার পর আপনারা কী করেছেন?’’ জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছি৷আমরা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের নাম নিয়ে নিন্দা প্রস্তা্, বিবৃতি, প্রতিবাদলিপি অসহযো আন্দোলন, কর্মসূচ্কলম বিরতি অনেককিছুই দিয়ে থাকি কিন্তু কাজের কাজ হিসেবে প্রাপ্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ০০০’’

শিক্ষক সংগঠনগুলো বাস্তবে এখন বিবৃতি এবং ফেসবুক প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ শিক্ষক  হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এজন্য শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয় এবং  প্রশাসনের নিকটবর্তিদের ধামাধরা এবং উদাসীনতাকে দায়ী করব৷

ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলে এক কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্থার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সম্ভবত দেওয়া হয়েছিল।

 

শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করা উচিত

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করা হয়। এরপরই  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি  ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে থাকেন কিন্তু পরবর্তীতে তার আর কোন খোঁজ রাখা হয় না তা যেন মহাশূন্যের কৃষ্ণ গহ্বরে হারিয়ে যায়। তবে একথা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার কারণে আমাদের ভাষা গুলো খুবই সুন্দর মার্জিত এবং ক্ষুরধার হয়ে থাকে এজন্য দুধার দিয়ে কাটছে কিন্তু কাজের কাজ তো ভোতাই  রয়ে যায় ।বিবৃতিতে বলা হয়, “‘Z’” ঘটনাতেই তীব্র সামাজিক অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম নিয়ে একশ্রেণির মানুষের অপতৎপরতা দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধকে চরমভাবে আঘাত করছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। "রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার হীন উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টার অংশ হিসাবেই ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এছাড়া সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কোথাও কোথাও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।" চলমান বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন পরিস্থিতি  থেকে উত্তরণের উপায় বর্ণনা করে অনেক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিকল্প নেই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে ধর্মান্ধতা থেকে বের করে পরম সহিষ্ণুতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্ত চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা আদর্শ জীবন গঠনসহ দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি

এবার আসি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে ইদানিং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাচ্ছে ।প্রতারণা (Cheating) ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust) আমাদের সমাজে একটি পূর্বপরিকল্পিত সংগঠিত অপরাধ, নাকি একটি ভু্ল না একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তা বুঝা বড়ই দায়। নিম্নে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।সাধারণ অর্থে, কেউ যদি কারোও সাথে কোন বিষয়ে কোন ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তা প্রতারণা হলেও আইনে প্রতারণার সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন। প্রতারণার বিষয়টি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর  ৪১৫ ধারায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে ধোঁকা দিয়ে কিংবা ছলনা করে বা অসাধুভাবে উক্ত প্রতারিত ব্যক্তিকে কোন ব্যক্তির নিকট কোন দায়িত্ব সমর্পণ করতে বা কোন ব্যক্তির কোন দায়িত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সম্মতি দানে প্ররোচিত করে, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনুরূপ প্রতারিত ব্যক্তিকে এরূপ কোন কার্য করতে প্ররোচিত করে, যে কার্য সে অনুরূপভাবে প্রতারিত না হলে করতনা বা উহা করা হতে বিরত থাকত না এবং যে কাজ নিবৃত্তি উক্ত ব্যক্তির দেহ, মন,সুনাম বা দায়িত্বের ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করে বা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যক্তি প্রতারক করে বলে গণ্য হবে।

উদাহরণঃ ১

ধরুন রহিম শিক্ষকদের কোন একটি দাবি আদায় করার হিসাবে করিমের কাছে প্রতিশ্রুতি প্রদান করল। সে সম্পূর্ণরূপে জেনে-বুঝে করিমের সাথে কাজটি করে। কিন্তু রহিম জানে কাজটি হতেও পারে নাও পারে। এখানে রহিম করিমের কাছে প্রতিশ্রুতির প্রদান করে প্রতারণার অপরাধ করেছে।কেননা বাস্তবতা এবং যুক্তি তর্কের খাতিরে দেখা যায় যে বাস্তবে সে কাজটা হওয়ার যোগ্য ছিল না। রহিমেরে এই জাতীয় অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।

. অপরাধী কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে ফাঁকি দেয়া বা ছলনা করা;

. () অপরাধী কোন ব্যক্তিকে প্রতারণামূলকভাবে বা অসদভাবে কোন দাবি আদায় করবে বলে প্ররোচিত করেছে; অথবা

() কোন ব্যক্তির কোন একটি পদ-পদবী আদায় করে দেবার ব্যাপারে সম্মতি দান করতে প্ররোচিত করেন; অথবা

() কোন ব্যক্তিকে এমন কোন কাজ করতে বা বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যে কাজ তিনি ফাঁকিতে না পড়লে করতেন না এবং যে কাজ তার দেহ মন, সুনাম বা ক্ষতি সাধন করে বা করার সম্ভাবনা রাখে।

প্রতারণার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি হওয়া উচিত, প্রমানিত না হলে যে বা যাহারা বলেছেন তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত  

প্রতারণার নানা প্রকার আছে। যেমন, ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি করে প্রতারণা, পরিচয় গোপন করে প্রতারণা, বিয়ের ব্যাপারে প্রতারণা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতারণার জন্য পৃথক পৃথক শাস্তির বিধান আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি সুনিশ্চিতভাবে দেওয়া  হলে এবং তা আদায় করতে না পারলে তারা একটি প্রতারণা।তবে প্রতারণার দায়ে সবাইকে নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকেই দায়ী কেননা সময়ের কাজ সময়ে যদি না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে তা কখন আদায় করা যায় না।অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ হলো- অসাধু অপব্যবহার বা অন্যের প্রাপ্য জিনিসকে নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রূপান্তর, যা ইংলিশ লয়ের Embezzlement বা আত্মসাৎ করার অপরাধের মতো। যেমন কেউ ডিন অথবা চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পান না কিন্তু তাকে নির্বাহী আদেশের  মাধ্যমে ডিন ও সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দন্ডবিধির ৪০৫ ধারায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের সজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে-

যদি কোন ব্যক্তি কো প্রকারে দায়িত্ব পরিচালনার ভার পেয়ে অসদভাবে সেই  দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিচালনা না করে  বা নিজের ব্যবহারে পরিণত করে কিংবা অনুরূপ পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণকারী আইনের কোন নির্দেশ লঙ্ঘন করে বা পরোক্ষ যে আইনগত চুক্তি সে করেছিল তা ভঙ্গ করে অসদভাবে উক্ত দায়িত্ব ব্যবহার করে বা বিলি ব্যবস্থা করে কিংবা স্বেচ্ছায় বা ইচ্ছাপূর্বক অপর কোন ব্যক্তিকে এরূপ করতে দেয়, তাহলে সে ব্যক্তি Breach of Trust বা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ করেছে বলে বিবেচিত হবে।

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ গঠনের জন্য নিম্নোক্ত উপাদান প্রয়োজন। যথাঃ 

. দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিঃ এ ক্ষেত্রে অপরাধীকে কোন দায়িত্ব পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কোন জিম্মা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হতে হবে।

. আত্মসাৎ বা নিজ ব্যবহারে প্রয়োগঃ উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট  দায়িত্বটি অসদভাবে নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করে।

. দায়িত্বের বরখেলাপঃ পরিচালনার জন্য যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক উহার বরখেলাপ হবে।

. আইনানুগ চুক্তি বরখেলাপঃ একইভাবে আইনানুগ চুক্তি বরখেলাপ করে উক্ত দায়িত্ব অসদভাবে ব্যবহার করা বা বিলি ব্যবস্থা করা অথবা ইচ্ছাপূর্বক অন্য কোন ব্যক্তিকে তা করতে দেওয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি কর্তৃক কি কি ধরনের প্রতারণা হয়েছে তার একটি লিস্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি ।আর যদি সে সমস্ত প্রতারণার ব্যাপারে আমিসহ আরও কেউ জড়িত থাকে সে ক্ষেত্রে আমার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন এবং আমি তা মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছি।

 

লেখক 

আবুল বাশার রিপন খলিফা

সহযোগী অধ্যাপক 

ফার্মেসি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

 

 

Tag
আরও খবর