রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের ‘উত্তর কৈকুরী কুর্শাপাড়া’ গ্রামের জিল্লুর রহমান (৬৫)। তিনি ওই গ্রামের জামে মসজিদের একাধারে মোতায়াল্লি, সভাপতি, মুয়াজ্জিন ও ক্যাশিয়ার। এক ব্যক্তি একাধিক পদ, এর প্রভাবে গত শুক্রবার জুম্মা নামাযের পর থেকে মসজিদের দরজায় তালাবদ্ধ করে রেখেছেন তিনি। ফলে আযান ও নামাজ আদায় বন্ধ রয়েছে ওই মসজিদে।
গ্রামবাসীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, নামাজ আদায় করতে না পারায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোন সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে।
মসজিদ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, অনেকেই অন্যত্র নামাজ আদায় করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নারী বলেন, মসজিদ কমিটির মোতায়াল্লি, সভাপতি, মুয়াজ্জিন, ক্যাশিয়ার সহ প্রায় সকল পদ একই ব্যক্তি হওয়ায় জিল্লুর রহমানের দাপটে অনেকেই আতঙ্কিত।
জানা যায়, গত ২ মে শুক্রবার বাদ জুম্মা স্থানীয় দুই পরিবারের জায়গা জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে, মসজিদের মুয়াজ্জিন ও সভাপতি জিল্লুর রহমান ও প্রতিবেশী ফিরোজ মিয়া পরিবারের মাঝে মসজিদ পরিচালনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ক্ষীপ্ত হয়েই মুসল্লিদের সামনেই মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেন মুয়াজ্জিন জিল্লুর রহমান। তারপর থেকেই আযান এবং নামাজ বন্ধ হয়ে যায় ওই মসজিদে।
মসজিদের মুসল্লি ফিরোজ মিয়া বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে মরহুম ইয়াসিন ব্যাপারী একটি ওয়াক্তিয়া নামাজ ঘর তৈরী করেন, যাহা এই ইউনিয়নের সর্ব প্রথম নামাজের স্থান হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় মুসল্লিদের অনুরোধে ওয়াক্তি নামাজ ঘরকে “উত্তর কৈকুড়ী কুর্শাপাড়া জামে মসজিদ” নামকরণ করা হয়। ওই মসজিদ সংলগ্ন একটি ঈদগাহ মাঠ করার উদ্দেশ্যে ৯ শতক জমি ওয়াকফ করে দেন। পরে জামে মসজিদটি নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় মুসল্লিগণ জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আসছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাব খাটিয়ে জিল্লুর রহমান মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ নিয়ে মসজিদটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করার অপচেষ্টা করছে। গ্রামের মানুষ যাতে মসজিদে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মসজিদের মূল ফটক দেয়াল দিয়ে আটকে দিয়েছে।
অপরদিকে জিল্লুর রহমানের দাবি, তারাই মসজিদে জমি দান করেছেন এবং অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। প্রতিবেশী ফিরোজ মিয়া এবং তার পরিবার এই সমাজের কেউ নয়। মসজিদের বিদ্যুৎ বিল একাই দিচ্ছি কেউ তো খবর নিল না? আর এখন মসজিদে তালা দিয়েছি দেখে, একবার নেতা, পুলিশ, একবার সাংবাদিক আসা শুরু হইছে।
উত্তর কৈকুরী কুর্শা পাড়া জামে মসজিদের মুসল্লি আশাদুজ্জামান মানিক বলেন, গত শুক্রবার বাদ জুম্মা হতে মসজিদে তালা ঝুলছে। আমরা মুসল্লিরা নামজ আদায় করতে পারছি না।
কৈকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম বলেন, গত শুক্রবার বাদ জুম্মা আমি উভয় গ্রুপকে নিয়ে বসছিলাম, সে সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মারামারির উপক্রম হয় একারণে তালা লাগিয়েছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলে যে কোন সময় তালা খুলতে পারে।
রংপুর পুলিশ সুপার আবু সায়েম বলেন, অভিযোগ পেলে তালা খোলার ব্যবস্থা করা হবে।