শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্ত মডেল কলেজের সাবেক সভাপতি ও নলকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে কয়েক দফায় নিয়ম বহির্ভুতভাবে নিয়োগ দেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের শুরুতে নিয়োগকৃত কিছু শিক্ষককে বাদ দিয়ে পুনরায় তার পরিবারের ৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকায় ক্ষমতার দাপটে নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন বলে কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুর জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে নিয়োগকৃত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম ১০ বছর কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক সভাপতি মজিবরের অনৈতিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করায় গত ২৫ জুন ২০২৩ তারিখে অধ্যক্ষ শাহিনকে জোরপূর্বক মজিবর রহমান একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেন। ওই পদত্যাগপত্রে লেখা ছিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এতে পদত্যাগপত্রটি বৈধ হয়নি। পরে জোর করে কলেজ থেকে অধ্যক্ষকে বের করে দেওয়া হয়। এর পরেও অধ্যক্ষ শাহিন থেমে থাকেনি। কলেজের কাজকর্ম চালিয়ে গেছেন। ওই কলেজের ১২ জন শিক্ষক সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সাবেক সভাপতি মজিবরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী নলকুড়া ইউনিয়নের ভারুয়া গ্রামে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই ইউনিয়নের সকল জনগণকে নিয়ে ভারুয়া গ্রামে সীমান্ত মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই গ্রামের মজিবর রহমান তার নামীয় এক একর জমি ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলেজের নামে দলিল সম্পাদন করে দেন। সেইসাথে তিনি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদসহ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে তিনি সভাপতির পদে বহাল থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করার নাম দিয়ে এবং বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ বাবদ হাতিয়ে নেয় অর্থ। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপজেলা, জেলা ও ব্যানবেইসে পাঠানো ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম ও পদবি ঠিক থাকলেও ২০২৩ সালে ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম ব্যানবেইসে পাঠানো হয়। এতে পূর্বের কর্মরত ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বাদ দিয়ে সভাপতির এক ভাই, এক বোন, মেয়ের জামাই, ঝিয়ারি, ঝিয়ারির জামাই, পুত্রা ও ভাগিনাসহ ৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যানবেইস জরিপে পাঠানো হয়। এতে বঞ্চিত শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এদিকে আত্মীয় করণের কারণে সভাপতির মেয়ের জামাই অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম কলেজের কোন দায়িত্ব পালন না করে গত প্রায় ৭ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে চাকরি করছে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজিবর রহমান স্ব-পদে থাকার যোগ্যতা না থাকায় এবং তার সকল অনিয়ম ঢেকে রাখার জন্য ওই কলেজের ছাত্রী এবং তার মেয়ে ফেরদৌসীকে গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত করেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ বাতিল করা হয়। বর্তমানে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলেজের সভাপতি নিয়োজিত হন। এ বিষয়ে সাবেক সভাপতি মজিবরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ২০১৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে বিধি মোতাবেক দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে তার নিকটতম আত্মীয় ও এনটিআরসির ভুয়া নিবন্ধনধারী মুন্নাছ আলীকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষ বানানোর আশ্বাস দেয়। সেইসাথে আমাকে কলেজ থেকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি আমার নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ভাবে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে মিথ্যাচার করছে। যাহা সম্পূর্ণই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।” এ ব্যাপারে কলেজের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
১১ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
১ দিন ৫ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১ দিন ১১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
২ দিন ৭ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৩ দিন ৮ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে