চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার পালাখাখাল মডেল ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম দোয়াটি। এক সময় এ গ্রামে প্রবেশ করলেই প্রত্যেক বাড়ি থেকে ঠক ঠক শব্দ ভেসে আসতো। কাঠে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মেরে নৌকা তৈরির শব্দ শোনা যেত পুরো গ্রাম জুড়ে। আজকাল সেই শব্দ আর কানে আসেনা। সেই শব্দ খুঁজে পেতে হলে পুরো গ্রাম ঘুরে যেতে হবে দুই-তিনটে পরিবারের কাছে।
এক সময় বর্ষার শুরুতে চাঁদপুরের কচুয়ায় নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করতো। কালের বির্বতনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে নৌকা। বাপ-দাদাদের ঐতিহ্য এ পেশাকে ধরে রেখেছে কয়েকটি পরিবার এখনো নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। এদিকে নৌকা কারিগরদের পেশা এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার মাছিমপুর, সাচার ও দোয়াটি গ্রামে এখনো তৈরি হয় নৌকা। কালের বির্বতনে এবার হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্পটি। নৌকা তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও আর্থিক অনটনের ফলে এ শিল্পের কারিগররা এখন পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে নৌকা শিল্প। বর্তমানে দোয়াটি গ্রামের ৩ টি পরিবারের ৮ জন এ পেশায় জড়িত। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও তারা ঐতিহ্যবাহী পেশাটি এখনও আকঁড়ে ধরে আছে। বাকী কারিগররা এখন পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে।
দোয়াটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা উমেশ চন্দ্র সরকার,অবনী চন্দ্র ও হরি সরকার জানান, এক সময় বিয়ে-শাদিতে এক গ্রামের বরযাত্রী অন্য গ্রামে সারি সারি নৌকা সাজিয়ে নিয়ে যেত। গ্রামগুলোর প্রত্যেক ঘরেই ২-৩টি করে নৌকা ছিল। স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, মাল আনা-নেওয়ার কাজে এসব নৌকা ব্যবহার করা হত। গত কয়েক বছর ধরে এ দৃশ্য আর দেখা যায় না। এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছে। তাই নৌকার ব্যবহার কিছুটা কমছে। তাছাড়া আর্থিক দুরাবস্থা এবং নৌকা তৈরির উপকরণের মূল্য দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কারিগররা তাদের প্রাচীন এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।
নৌকা কারিগর রমনী চন্দ্র সরকার ও নজুল সরকার জানান, আমারা আমাদের বাবার কাছ থেকে নৌকা তৈরি করতে শিখেছি। ৩০ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। জানিনা আর কয়দিন থাকব। যেভাবে কাঠ-যন্ত্রপাতির দাম বাড়ছে তাতে নৌকা তৈরি করে লাভ হচ্ছে না। এ গ্রামে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের নৌকা তৈরি হয়। ৮ হাত, ৯ হাত, ১০ হাত আকারের নৌকা তৈরি হয়। বিলুপ্ত হতে যাওয়া এ পেশাটি রক্ষার দাবি তাদের। তবে এ পেশার অবস্থা এখন খুবই নাজুক। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা শিল্পটিকে বাঁচানো দরকার। সরকার চাইলে হয়ত আমরা টিকে থাকব। এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচিত আমাদের ঋন দিয়ে সহযোগিতা করা।
৪ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১ দিন ৮ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১৩ দিন ২ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
২৫ দিন ২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৩৫ দিন ২০ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
৩৮ দিন ২১ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫৩ দিন ২২ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে