কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে-(কুবি) ছাত্রদলের একাংশের নেতা-কর্মীরা সাংবাদিকদের উপর মব কায়েম করে 'সাংবাদিকদের আগে মার' বলে হামলা করেছেন। তাঁরা শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৮ মে) রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত কনসার্টে মার্কেটিং বিভাগ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় সংঘর্ষে অংশ নেওয়া সাদেক সরকার ও সাখাওয়াত অরন্য নামে দুই ছাত্রদলের কর্মীকে এক পাশে নিয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তখন দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি চৌধুরী মাছাবিহ্ এবং দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি আবু শামা তাকে প্রশ্ন করেন “হামলায় অংশ নেওয়া এই ছেলে আপনার কর্মী নাকি? আপনি এখানে তাঁকে শেল্টার দিচ্ছেন নাকি?” তখন শুভ সাংবাদিক আবু শামাকে ধাক্কা দেন।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক সাফায়েত সজল সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে বাঁধা দেন পাশাপাশি শুভর নির্দেশে ছাত্রদল কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন। "সাংবাদিকদের আগে মার" বলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে মুক্তমঞ্চ থেকে গোলচত্বরের দিকে নিয়ে যান। এসময় ছাত্রদল কর্মী ও বাংলা বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ, ইংরেজি বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জয়, মার্কেটিং -১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহিদ রহমান সাকিব ও তাজওয়ার তাজসহ ২০-২৫ জন হামলায় অংশ নেন। এসময় দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি চৌধুরী মাছাবিহ্, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি আকাশ আল মামুন হামলার শিকার হন।
হামলার ভিডিও ফুটেজ নিতে চাইলে চৌধুরী মাছাবিহ এর মোবাইল ছুঁড়ে মারেন বাংলা বিভাগের ছাত্রদলকর্মী সাইফুল মালেক আকাশ। এছাড়াও সাংবাদিকদের দিকে মারমুখী ভাবে ধাক্কা দেন মার্কেটিং ছাত্রদল কর্মী তাওহিদ রহমান সাকিব। প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক চৌধুরী মাছাবিহ্ বলেন, ‘আমি পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে প্রশ্ন করলে ছাত্রদলের সদস্য সচিব শুভ আমাকে ফোনের ভিডিও অফ করতে বলে এবং তাঁর কর্মী সাইফুল মালেক আকাশ হামলা চলাকালীন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মোবাইল টান দিয়ে ফেলে দেয়, এতে আমার মোবাইলের ডিসপ্লে ভেঙ্গে যায়।’
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু শামা বলেন, ‘আমি মোস্তাফিজুর রহমান শুভকে প্রশ্ন করতে গেলে আমাকে ধাক্কা মারেন। সাথে সাথে কর্মীরা আমার উপর হামলা করেন।’
শিক্ষার্থীকে বেল্ট দিয়ে মারা ছাত্রদল কর্মীকে শেল্টার দেওয়ার বিষয়ে সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পিছনে মারামারি হচ্ছিলো। আমরা সামনে ছিলাম। এখানে উপস্থিত শিক্ষকরা আমাদের বিষয়টি দেখতে বলেন। যেই ছেলেটি মেরেছিলো, তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়।
কোন শিক্ষকরা বিষয়টি ছাত্রদলকে সামলাতে বলেছেন এমন প্রশ্নে তিনি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম ও ছাত্র পরামর্শক ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবের কথা জানান।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কমিটির আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম বলেন, আইনশৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব আমার না। আমি কাউকে দায়িত্ব দেইনি এসব করার। আমার কাজ ছিল সকল বিষয় কোঅর্ডিনেট করা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা।
সাংবাদিকের দায়িত্ব পালনে বাধা ও তাদের ওপর হামলার নির্দেশ ও ইন্দনের বিষয়টি সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ অস্বীকার করেন। তবে ভিডিও ফুটেজে সরাসরি হামলার সত্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ হামলা করে থাকলে তাদের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম বলেন, "সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সংবাদ সংগ্রহ করা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা কোন ভাবে কাম্য না।
সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়ে প্রক্টর আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবো’
এই বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগে চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।