সুন্দরবন উপকূলের শ্যামনগর স্থানীয় বীজসম্পদ সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ
রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর উপজেলা প্রতিনিধি ঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ নানা কারণে আজ হারিয়ে যাচ্ছে উপকূলের ঐতিহ্য স্থানীয় জাতের বিভিন্ন ধরনের বীজ। কৃষকের কাছ থেকে একেবারেই বিলুপ্তির পথে বসেছে একাধিক ধান ও সবজি। তবে বর্তমানে এলাকার কিছু কিছু কৃষক কৃষির অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং নিজ নিজ বাড়িতে বীজ সংরক্ষণও করছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ধুমঘাটের তেরকাটির চকে শনিবার (২৬ এপ্রিল )ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের আয়োজনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক' এর সহযোগিতায় ধুমঘাট কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কৃষাণী অল্পনা রাণী মিস্ত্রি'র সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক বীজ দিবসে উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় বীজসম্পদ সুরক্ষা ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক ব্যতিক্রমী মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা আরও বলেন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগর। যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন, লবনাক্ততা, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়, সেখানে ফসল চাষাবাদ কৃষকের নিত্যদিনের সংগ্রাম। একদিকে প্রাকৃতিক বির্পযয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও লবনাক্তার সাথে সংগ্রাম করে ফসল উৎপাদনে করতে কৃষকরা হিমশিম হয়ে পড়ছে, তার উপরে রয়েছে উৎপাদনের অন্যতম উপাদান বীজ সংকট। কৃষকের বীজ, নেই কৃষক ঘরে। বীজের জন্য কৃষককে হতে হচ্ছে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দারস্থ। এতে কৃষক নিজের ইচ্ছে ও পছন্দ অনুযায়ী না পারছে সময় মত বীজ বপন করতে, আবার বারে বারে বীজ ক্রয়ে গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। কৃষক হয়ে পড়ছে বাজার নির্ভরশীল ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর হাতের পুতুল। কৃষক স্বাধীন না হলে খাদ্যসার্বভৌমত্ব কিভাবে আসবে?
মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন বারসিকের সহযোগি কর্মসূচি কর্মকর্তা বরষা গাইন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীফলকাটি কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক গোবিন্দ মন্ডল, শাপলা নারীর উন্নয়ন সংগঠন ও স্বপ্ন-চূড়া যুব সংঘের সদস্যসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী।
কৃষি-প্রতিবেশ বিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক গোবিন্দ মন্ডল ও বারসিকের আঞ্চলিক কর্মকর্তা বাবলু জোয়ারদার বলেন, বীজ সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবহার, বিনিময় এবং বিক্রয় করা কৃষকের অধিকার। সেই অধিকার থেকে কৃষক দিন দিন বঞ্চিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ততার প্রভাব বেশি থাকার কারণে কেনা বীজ অনেক সময় ফুটে না, আবার গাছ হয় কিন্তু ফল হয় না। ফলে বার বার বীজ কিনতে হয়, এতে তাদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘাঁ প্রতিপন্ন হয়। যা কৃষকের ফসল চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে নষ্ট করে ফেলে। এতে উৎপাদনে থাকছে না কৃষকের পছন্দ ও স্বাধীনতা। এজন্য কৃষককে আরও বেশি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণে সচেতন ও তৎপর হতে হবে। তবে উৎপাদনে কৃষকের স্বাধীনতা ফিরবে।
অতিথিবৃন্দ আরও বলেন, বীজ শব্দটি ছোট হলেও পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য এই বীজের উপর নির্ভরশীল। উৎপাদনের মূল উপাদান বীজ। কৃষি ফসল উৎপাদন বীজ ব্যতিত কল্পনা করা যায় না। আর কৃষি ফসলের মূল কারিগর কৃষক। কিন্তু কৃষকের ঘরে নেই বীজ, কোম্পানি ফসল উৎপাদন করে না তারা বীজের মালিক। কৃষককে কিনতে হবে কর্পোরেট কোম্পানির থেকে বীজ। কিন্তু কেন? কৃষকের বীজ কৃষকের অধিকার। কৃষক বাড়ী হোক বীজ ব্যাংক, হোক বীজ ভান্ডার।
মতবিনিময় শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ধুমঘাট কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক অল্পনা রানী মিস্ত্রি স্থানীয় জাতের বীজ স্থানীয়দের মধ্যে বিনিময় করেন।
ছবি- শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক বীজ দিবসে কৃষকবৃন্দ বীজ বিনিময় করছেন।
৩ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১ দিন ৩ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৩ দিন ৭ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৪ দিন ১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৪ দিন ২ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৫ দিন ২২ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৬ দিন ২ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে