রাজশাহী কলেজে ভাইভা দিতে এসে ছাত্রলীগ কর্মী আটক মিরসরাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্থ ও দুস্থ্য পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান সুন্দরবনে হরিণ মারার ফাঁসদড়ি ও দুটি নৌকা উদ্ধার শান্তিগঞ্জে পিক-আপের ধাক্কায় শিশু নিহত,গুরুতর আহত-১ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ফরমালিনযুক্ত আমের দোকানে অভিযান, ফরমালিনযুক্ত আম ধ্বংসসহ ২টি দোকানে জরিমানা ঝিনাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত মসজিদ কমিটির মোতায়াল্লি, সভাপতি, মুয়াজ্জিন ও ক্যাশিয়ার একই ব্যক্তি !! পীরগাছায় পাঁচদিন ধরে জামে মসজিদে তালা কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ চায় এনসিপি জাবিপ্রবিতে ইইই বিভাগে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম চীনের সঙ্গে চুক্তি, মোংলা বন্দর পরিণত হবে আধুনিক বাণিজ্যিক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে ‘জুলাই ঐক্য’র আত্মপ্রকাশ সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ পুলিৎজার পেলেন যারা বড় ধরনের সংস্কার রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া বাস্তবায়ন করা হবে না নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে কিছু প্রতিক্রিয়া আক্রমণাত্মক ঝিনাইগাতীতে ফরমালিনযুক্ত আমের দোকানে অভিযান, ফরমালিনযুক্ত বেশকিছু আম ধ্বংস চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নওগাঁর বদলগাছির ‘নাক ফজলি আম’ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া সেই ইউএনওকে রংপুর বিভাগে বদলি আদমদীঘিতে পুলিশের অভিযানে মাদকসহ গ্রেপ্তার ৬ অভয়নগরের কামকুল বাজারে সামান্য বৃষ্টিতেই জলবদ্ধতা, বেড়ে যায় জনদুর্ভোগ

সাব-রেজিস্ট্রি ভলিউমের পাতা ছিড়ে জাল দলিল তৈরির গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের জামিন শুনানী ২৪ অক্টোবর

সাব-রেজিস্ট্রি ভলিউমের পাতা ছিড়ে জাল দলিল তৈরির গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের জামিন শুনানী ২৪ অক্টোবর



মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা: 

বাবার বন্টনকৃত চারটি দলিল থেকে দুই বোনের ২৩ বিঘা জমি ফাঁকি দিতে সাতক্ষীরা জেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মূল ভলিউম থেকে পাতা ছিড়ে সত্যায়িত জাল দলিল তৈরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেনসহ পাঁচজনের জামিন শুনানীর দিন আগামি ২৪ অক্টোবর ধার্য করেছে আদালত। রবিবার ২০ অক্টোবর সাতক্ষীরার আমলী আদালত-১ এর বিচারক নয়ন কুমার বড়াল আসামীপক্ষের জামিন আবেদন শুনানী শেষে বৃহত্তর শুনানীর জন্য ওই দিন ধার্য করেন।

এদিকে ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেনসহ পাঁচজন রেজিস্ট্রি অফিসের ভলিউম ছেড়া ও জাল দলিল তৈরির ঘটনার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী এড. মিতা রানী সরকার জানান, জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ তার স্বামী অনল কুমার রায়সহ কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন তার ভাইপো ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাওন, সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বরখাস্তকৃত দলিল লেখক এসএম শাহজাহান, সাতক্ষীরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারি কাজী আবুল বাসারকে চারটি দলিলের ভলিউম বইয়ের পাতা ছেড়া ও জাল দলিল তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সদর থানার পুলিশ আটক করে। পরদিন ওই পাঁচজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। রবিবার তাদের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে বৃহত্তর শুনানীর জন্য আগামি ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। জামিন শুনানীতে অংশ নেন এড. আব্দুল মজিদ (২), এড. তোজাম্মেল হোসেন তোজাম, এড. অজয় সরকারসহ কমপক্ষে দুই ডজন আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন এড. আব্দুস সাত্তার।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ যশোরের বাঘারপাড়া থেকে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যেগেদান করেন রিপন মুন্সি। ওই মাসেই জেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভায় পরিচয় প্রদানকালে জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর জানতে পারেন যে রিপন মুন্সি অফিস সহকারি থেকে পদায়ন হয়ে (বিসিএস ক্যাডার না হয়ে) সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এতে ওই সভায় অনেকেই অবাক হয়ে যান। এরপর থেকে নকল নবীশ খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার অনল কুমার রায়কে নিজের কাছের লোক মনে করে তাকে দিয়ে অনেক অবৈধ দলিল তৈরি করেছেন। একপর্যায়ে অনল রিপন মুন্সির কাছ থেকে সরে আসেন। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন সদর সাব রেজিস্ট্রার। সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সিন্ডিগেট তৈরি করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী সহকারি নরেশ চন্দ্র মল্লিক জানান, কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাজী শওকত হোসেন তার একজন মোয়াক্কেল। চারটি দলিলের ভলিউম সার্চিং করার জন্য বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জজ কোর্ট থেকে একটি ইজিবাইকে করে তাকে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে আসেন গাজী শওকত হোসেন ও তার চাচাত ভাই ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাওন। গাজী শওকত হোসেন রাস্তায় অবস্থান করে শাওন ও তাকে চারটি ৪৫২০/৯৩, ৩০৭৭/৯৩, ৪৫১৫/৯৪ ও ৩৭৬১/৯৫ নং রেজিস্ট্রি কোবালা দলিলের ভলিউম বই সার্চিংয়ের জন্য বলেন। পূর্ব পরিচিত রেজিস্ট্রি অফিসের তিন তলায় অবস্থানরত ভলিউম রাইটার আবু বাসারতের কাছে শাওনকে নিয়ে যান তিনি। এ সময় শাওনের কাছে ওই চারটি দলিলের সত্যায়িত জাল কপি ছিলো। সার্চিংয়ের পরপরই তড়িঘড়ি করে নিজের টেবিলে এসে তাকেও শাওনকে বসতে বলে রেজিস্ট্রারের কাছে চলে যান বাসারত। এর পরপরই শাওন তাকে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের বাইরে আসার চেষ্টা করে। অফিসের লোকজন তাদেরকে ধরার জন্য দৌড় ঝাঁপ করলে চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন পালিয়ে যান। দলিল লেখক ও ভলিউম লেখকরা তাদেরকে ধরে মারপিট করার পর সদর সাব রেজিস্ট্রারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তার (নরেশ) বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সন্ধ্যায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বাবলু ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবুর কাছে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকার স্ট্যম্প ভেন্ডার শাল্যে গ্রামের জাকির হোসেন জানান, এসএম শাহজাহানের কাছের লোক বলে পরিচিত দলিল লেখক হুজুর মিজান তার কাছ থেকে কয়েকটি ৫০ টাকার স্ট্যাম্প কিনেছিলেন। ওই স্টাম্পগুলো শওকত চেয়ারম্যানের চারটি দলিলের নকল তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে মর্মে তিনি শুনেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কয়েকজন দলিল লেখক ও ভলিউম রাইটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শহরের কাটিয়ার দলিল লেখক এসএম শাওজাহানকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর তিনি স্ত্রীর নামে স্ট্যাম্প ভেন্ডার পরিচালনা করে আসছেন। জমির হারির সাত লাখ ৯২ হাজার টাকা ফেরৎ পেতে আদালতে গত ১০ অক্টোবর ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন ও তার ভাই আবু জাফর গাজীসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তাদের ভাগ্নে ইমরান হোসেন। বোনদের ২৩ বিঘা জমি ফাঁকি দিতে গাজী শওকত হোসেন গত ১৪ অক্টোবর রেজিস্ট্রি অফিসে জালিয়াতির শীর্ষস্থানে থাকা এসএম শাওজাহানের শরনাপন্ন হন। শাহাজাান বিষয়টি অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারি আবুল বাসার (বর্তমানে সদর সাব রেজিষ্টারের নির্দেশে কর্মরত) এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চারটি দলিলের ভলিউমের পাতা ছিড়ে নতুন স্টাম্পে দাতার নাম ঠিক রেখে গ্রহীতা লতিফা ও জাহানারার নামের পরিবর্তে গাজী শওকত হোসেন ও আবু জাফর এর নাম বাসিয়ে দেওয়ার শর্তে চুক্তি হয় পাঁচ লাখ টাকার। পরিবর্তিত ভলিউম অনুযায়ি চারটি জাল দলিল তুলতে আবুল বাসার পান ২০ হাজার টাকা। তবে ভলিউমের পাতা ছেড়ার ব্যাপারে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে নকলনবীশ অনল কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় জালিয়াতির মূল হোতা হিসেবে রিপন মুন্সিকে অনেকেই দায়ী করে তাকে দুদকের হাতে তুলে দেওয়ার আহবান জানান।

সূত্রটি আরও জানায়, ইয়াছিন আরাফাত শাওন আটক হওয়ার খবর পেয়ে চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন বিভিন্ন স্থানে দেনদরবার করেন। এরই মধ্যে পিওন মহসিনকে দিয়ে একে এক এসএম শাহজাহান, আবুল বাসার ও অনল রায়কে অফিসে ডাকান রেজিষ্টার রিপন মুন্সি। তড়িঘড়ি করে অনল রায়কে অফিসের মধ্যে ঢুকিয়ে দলিল লেখকদের পিটানি থেকে বাঁচানোর কথা বলে ভলিউমের পাতা ছেড়া সংক্রান্ত একটি কম্পিউটার করা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন রিপন মুন্সি। একপর্যায়ে সদর সাব রেজিস্ট্রারকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ভাইপোকে ছাড়িয়ে নিতে রাত সাতটার দিকে রেজিস্ট্রি অফিসে আসেন গাজী শওকত। ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাওন, সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বরখাস্তকৃত দলিল লেখক এসএম শাহজাহান, সাতক্ষীরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহকারি কাজী আবুল বাসার ও অনল কুমার রায়কে একটি ঘরে আটক রাখা হলেও চুক্তি অনুযায়ি রিপন মুন্সি চেয়ারম্যান শওকত হোসেনকে রেকর্ডরুমে লুকিয়ে রাখেন। রাত ৯টার দিকে শওকত ব্যতীত বাকী চারজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর একজন নকল নবীশ, পিওন মহসিন ও কর্মকর্তা পরিমলের সঙ্গে পরামর্শ করে নৈশপ্রহরী ফজলুর মাধ্যমে গাজী শওকতকে নিরাপদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গাজী শওকত রেকর্ড রুম থেকে নিচে নামা মাত্রই সাংবাদিকদের বাঁধার মুখে পড়েন। জালিয়াতির হোতা গাজী শওকতকে পুলিশে দেওয়া হয়নি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাকে ক্লিন সার্টিফিকেট দেন সাব রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সি। তবে সাংবাদিকরা খবর দিলে পুলিশ রাত একটার দিকে শওকতকে থানায় নিয়ে যায়। জালিয়াতির ঘটনায় রেকর্ড কিপার প্রদীপ ঘোষ থানায় ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে ১৭ অক্টোবর ২১নং মামলা দাখিল করলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মামলার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের উপর ন্যস্ত করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

সদর সাব-রেজিস্ট্রি রিপন মুন্সির বিরুদ্ধে বাঘারপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চাকরি করাকালিন নারী কেলেঙ্কারীর মামলা ছাড়াও সাতক্ষীরা অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দলিল তৈরিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ, হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি বিক্রিতে দলিল প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ ছাড়াও হাজারো অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সির সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে বলেন, জানেন তো এটা সিলেটের নাম্বার।


Tag
আরও খবর




অবশেষে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু

১ দিন ১৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে