মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
চোখে মুখে স্পষ্ট আতঙ্ক! টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই খাওয়ার পানির বোতলকে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন শিশুটি। যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় কোন দূর্ঘটনা। অসতর্ক হলে ভেলা থেকে পড়ে প্রাণ হারাতেও হতে পারে শিশুটি। তবুও জীবিকার তাগিদে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে প্রতিদিন এভাবে ভেলাতে চড়ে পাশের এলাকা থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে আনতে যেতে হয় সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মোসাব্বির হোসেনের চার বছর বয়সী শিশু সন্তান আব্দুর রহমানকে। বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর কুলিনপাড়া এলাকায় এ দৃশ্যের দেখা মেলে।
স্পষ্টভাবে শিশুটি কথা বলতে না পারলেও আলতো আলতো ভাবে জানান, পঁচা পানিতে আম্মুর পায়ে ঘাঁ হয়ে গেছে। এজন্য আগের মতো বাইরে বের হতে পারেনা। আব্বুও তো কাজ করতে যায়। এজন্য আমার সাথে কাউকে পাঠান খাবার পানি আনতে।’
ভেলা চালানোর দায়িত্বে থাকা সায়েম হোসেন নামে অপর এক শিশু বলেন, এলাকায় খাওয়ার পানির অনেক কষ্ট। পানিতে সবকিছু ডুবে আছে। এজন্য ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে প্রতিদিন ভেলাতে চড়ে পানি আনতে যেতে হয়। বস্তুত এ দৃশ্যটি শুধু কুলিং পাড়া এলাকার না। সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার চিত্র একই রকমের।
বছরের ১২ মাসের ৯ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকতে হয় তাদের, বাকি তিনমাস কাটে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। এসবের ভিতরে আবারও জলাবদ্ধতার ভিতরে পড়তে হয় তাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের ও সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিগত এক দশক ধরে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সরকারি ভাবে করা হয়না কোন সহযোগিতা। এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিভাগের প্রথম পৌরসভা সাতক্ষীরা। প্রায় ৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটিতে বর্তমানে ৪ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।
১৯৯৮ সালে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু, নামে প্রথম শ্রেণির হলেও সেবাদানে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভারও ধারে কাছে যেতে পারছে না পৌরসভাটি। পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের জরাজীর্ণ অবস্থা ও বিগত এক দশক ধরে চলতে থাকা জলাবদ্ধতা তার বড় প্রমাণ বলে দাবি এখানকার নাগরিকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকার দেড় লাখ মানুষের বসবাস জলাবদ্ধ এলাকায়। শহরের ইটাগাছা, কামালনগর, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, রইচপুর, কুকরালী রাজারবাগ, বদ্দীপুর কলোনি, মধ্যকাটিয়া ও বাঁকাল এলাকাসহ অধিকাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে জলাবদ্ধতা। এর ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হাজারো পরিবারের নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পচাঁ দুর্গন্ধময় দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে চর্মরোগ। তারপরেও জীবনের প্রয়োজনে কেউ সাঁতরাচ্ছেন কেউবা ভেলায় চড়ে যাতায়াত করছেন।
এর ভিতরে সাতক্ষীরা পৌরসভার বসতিপাড়া ও বদ্দীপুর কলোনির সংযোগ স্থলে বাঁশ দিয়ে তৈরী করে হয়েছে আধা কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটা সেতু। প্রতিদিন এই দুই গ্রামের হাজারও মানুষ ওই সেতু দিয়ে পারাপার হন। স্থানীয়দের দাবি এটা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাঁশের সেতু। যেটা স্থানীয়দের উদ্যোগে ১হাজারেরও অধিক বাঁশ ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে কোন সহায়তা পাননি বলেও জানান তারা।
বদ্দীপুর কলোনি এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। গৃহস্থালি কাজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মহিলাদের। এমনকি এক বাসা থেকে অন্য বাসায় যেতে ভেলার সাহায্য নিতে হয় অনেককে। এতে আমাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই যন্ত্রণা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই।
একই এলাকার গৃহবধূ রেহেনা খাতুন বলেন, বৃষ্টির পানিতে গোটা এলাকা ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি থেকে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর আমরা পানিতে ডুবে গেলেও তার স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির পানি ঘরের ভেতরে আসে। আমরা যে ঘরে ঘুমাই, সেখানে হাঁটুপানি। রান্নাঘর এমনকি গোয়ালঘরও ডুবে গেছে। ঘরের ভেতরে সাপ ঢোকে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, ঘের ব্যবসায়িরা এত প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। যার কারনে এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কাজ করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। শুধু উপজেলা প্রশাসন দিয়ে এটা সম্ভব নয়। সম্প্রতি মধ্য কাটিয়া এলাকায় কিছু বাঁধ ছুটিয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। ইতিবাচক যেকোনো পদক্ষেপের পক্ষে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।
১ দিন ১৬ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
২ দিন ৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
২ দিন ২৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
২ দিন ২৩ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৩ দিন ৪ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৩ দিন ৪ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে