বঙ্গোপসাগরে চলতি মাসেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবি, যা বলছে সরকার আক্কেলপুর আওয়ামী লীগের চার নেতা কর্মী আটক. পীরগাছায় স্পীডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের হাব উদ্বোধন সুন্দরবনের বাঘের তাড়ায় লোকালয়ে হরিণ,বনে অবমুক্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পবিপ্রবিতে বিক্ষোভ মিছিল বালিয়াডাঙ্গীতে "স্পীড ফাস্ট কুরিয়ার লিঃ "এর শুভ উদ্বোধন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ইবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ নওগাঁয় ককটেল বিস্ফোরণে উড়ে গেল ঘরের টি গুচ্ছভুক্ত ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত উলিপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় যুবলীগ নেতা বিটু গ্রেপ্তার রাজবাড়ীতে অগ্নিকাণ্ডে খানগঞ্জ ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টার পুড়ে ছাই হামিদের বিদেশ গমন ও আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে মুখ খুললেন আইন উপদেষ্টা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সি,সি, ব্লকের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন ভারতের ৫০ সেনাকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান জুমার পরও চলবে: হাসনাত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ ইলিয়াস কাঞ্চনের জেপিবির শার্শায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ আটক-৩ দুর্যোগ বিষয়ক মহড়া সাগর পাড়ের জীবন যুদ্ধ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ আগুন

ইসলামপুরে ডামি দরদাতায় হাট-বাজার ইজারা : রাজস্ব আয়ে কোটি টাকা বঞ্চিত সরকার


জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ডামি দরদাতা দাঁড়িয়ে দিয়ে হাট-বাজার ইজারা ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যে হাট ইজারায় ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করা যেত, সেটা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২১ লাখে। আবার যে হাট অর্ধকোটি টাকা আয়ের সুযোগ ছিলো, সেটা ইজারা দেওয়া হয়েছে ৩৮ লাখ টাকায়। এছাড়া ৩ লাখ টাকা রাজস্বের সুযোগ থাকলেও একটি হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে ৩৪ হাজারে। আবার প্রতিটি হাট-বাজারের ইজারার ব্যয় বেশি মূল্য ধরে শেয়ার বিক্রি করছেন ইজারাদারেরা। 


অভিযোগে প্রকাশ, অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপে সবগুলো দরপত্র একত্রের পর বিশেষ সমঝোতায় ডামি দরদাতা দাঁড় করিয়ে কম দরে হাট-বাজার ইজারা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তত ২০-২৫ লাখ টাকার হাতবদলের খবর চাউর হলেও ইজারা লড়াইয়ে অংশ নেওয়া দুপক্ষের কেউই, তা স্বীকার করেননি। 

বিষয়টা এমন যে, সব কিছুর দাম যেখানে বাড়ে সেখানে কমে গেল হাটের দাম। সমঝোতার নামে অর্থহস্তগত করতে ব্যাপক সংখ্যক দরপত্র বিক্রি হলেও পছন্দ মতো দর বসিয়ে তা জমা দিয়েছেন বাক্সে। 

গত বছর যারা প্রায় একই মূল্যে ইজারা নিয়েছিলেন তারাই এবার দিয়েছেন নতুন এই দর। তবে, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই হাট-ইজারা দেওয়া হয়েছে।


স্থানীয় সূত্রমতে, সব সরকারের আমলেই এখানকার হাট-বাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের হাতে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। নানাভাবে সমঝোতা কিংবা পেশিশক্তি খাটিয়ে তারা দখল নেয় ইজারা। ফলে হাটের ইজারায় বেশি টাকা পাচ্ছে না সরকার। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। ইজারাদারদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকায় বেশ কয়েক বছর আগে হাটের ইজারামূল্য উঠেছিল আশানুরূপ। কয়েক বছর আগে যে হাটের ইজারা মূল্য ছিল অনেক বেশি, সেই হাট এবার কী করে এত কম মূল্যে বিক্রি হলো, তা খুঁজতে গিয়েই মিলেছে বাণিজ্য প্রশ্নে ক্ষমতাসীনদের সমঝোতা কাহিনী। যে সমঝোতার কারণে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে  কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে।


উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১২ জানুয়ারি প্রথম পর্যায় দরপত্র বিক্রির শুরু করা হয়। ১৩ জানুয়ারি দুপুর ১টায় দরপত্রগ্রহণ করা হয়। ২৪টি হাট-বাজারের মধ্যে ১৩টি হাট-বাজারের ২১৮টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৪টি হাট-বাজারের দরপত্র বিক্রি হয় ১৯৮টি। রহস্যজনক কারণে দরপত্র জমা পড়ে মাত্র ১৩টি। 


উপজেলার বৃহতম কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত যমুনা নদীরপাড়ে গুঠাইল হাট। শত বছরের পুরোনো এই হাটকে কেন্দ্র করে একসময় আবর্তিত হতো উপজেলার বিশাল অংশের অর্থনীতি। কালের বিবর্তনে জৌলুশ কমলেও এখনো গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে হাটটির।৮ হাজার ২শত টাকা মূল্যে ১৫টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা দর দিয়ে এ হাটটি ইজারা পান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম।


গুঠাইল বাজারের ব্যবসায়ী মাহমুদুল্লাহ বলেন, 'সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডামি দরদাতা দাঁড়িয়ে হাট-বাজারগুলো কম মূল্যে ইজারা ভাগিয়ে বেশি দরের কথা বলে ইজারার শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।

এতে লাখ লাখ টাকা হাতবদলের মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করা হয়েছে।'


উপজেলার দ্বিতীয় বৃহতম গরু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসাকেন্দ্র নাপিতেরচর হাট। নাপিতেরচর গো-হাটের ৫ হাজার টাকা মূল্যে ৪৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ২টি। ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাটের ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা। 


নাপিতেরচর গো-হাটের দরপত্র সংগ্রহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সমঝোতার কথা বলে সবগুলো দরপত্র জমা নেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে পছন্দের মতো দর বসিয়ে দরপত্র জমা দেন ইউএনও অফিসে। সমঝোতা না হলে ৫০-৬০ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নেওয়া যেত। যিনি হাটটি ইজারা নিয়েছেন, তিনি ৫২-৬০ লাখ টাকা দর হাঁকিয়ে হাটের ইজারা শেয়ার বিক্রি করছেন।'


৫ শত টাকা মূল্যে মহলগিরী বাজারের ১২৪ টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৩টি। ৩৪ হাজার ৪শত টাকায় বাজারটি ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন। 


মহলগিরী বাজারের ইজারাদার ও গোয়ালেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'সিন্ডিকেট করা হয়নি। দরপত্রে সর্বোচ্চ দর দেওয়ায় বাজার ইজারা পেয়েছি।'



৫ শত টাকা মূল্যে ডিগ্রিরচর বাজারের ১৪টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৫টি। ৮০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কামাল। অথচ তিন বছর আগে বাজারটি ২ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিলো।


ডিগ্রিরচর বাজারের ইজারাদার ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মোস্তফা কামাল বলেন, 'নিয়মানুযায়ী দরপত্র জমা দিয়ে বাজার ইজারা পেয়েছি। সিন্ডিকেটের অভিযোগ প্রতিহিংসার সামিল।'


উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক  ও ইউএনও মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিন বছরের ইজারামূল্য গড় করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাইরে সিন্ডিকেট করলে, আমাদের তো কিছু করার নেই। তবে আইনানুসারে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে।'


উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, 'হাট-বাজার ইজারায় সিন্ডিকেটের খবর চাউর হচ্ছে। লাখ লাখ টাকার হাতবদলের মাধ্যমে ডামি দরদাতা দিয়ে হাট-বাজার ইজারা নেওয়া হয়ে থাকলে, সেটা অন্যায়।'


আরও খবর