নাগেশ্বরীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন আইসটি কম্পিউটার এ্যান্ড নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধন। রংপুর অঞ্চল অচল করে দেয়ার হুমকি দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা লাখাই ডি সি রোডে শুকানো হচ্ছে গরুর খাদ্য খড়,যানচলাচলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ইলিশ ধরা শুরু,জেলে পল্লীতে উৎসবের আমেজ ঋণ আর দাদনের আতংক শ্যামনগরে তিন বখাটের ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড শ্রীপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মাগুরায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিং করায় ৩ বখাটে কারাগারে আশাশুনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কালিপদ রায় আর নেই গাড়িতে হামলা, আহত হাসনাত ঝিনাইগাতীতে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় নকলের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার পদ্মায় জেলের জালে আটক দুই কাতল ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে হেরোইনসহ ইউপি সদস্য গ্রেফতার । রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান এবার কোরবানিযোগ্য পশু সোয়া কোটি, উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ২০ লাখ ভিসির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সারিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরই মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ডোমারে স্কাউট ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

পলাশের রঙে রাঙা বসন্তের উৎসব

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অংশ হলো বসন্ত। শীতের রুক্ষতা কেটে যখন পবিত্র ঋতু বসন্ত আমাদের মাঝে আসে, তখন প্রকৃতি নতুন রূপে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। একদিকে প্রকৃতির হালকা কুয়াশা, অন্যদিকে পলাশফুলের আগমন এ যেন এক অগ্নিরঙা রূপকল্পের সূচনা। প্রকৃতির সেই রঙিন উৎসবের মূল এক চিরন্তন ফুল পলাশ। পলাশ আমাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশও। প্রতিটি কোণে বসন্ত আসার বার্তা পৌঁছায়, আর তার আগমনে পলাশ ফুলের লাল-কমলা রঙ প্রাকৃতিক দৃশ্যপটে রঙের ছোঁয়া দেয়। এটি যেন নতুন জীবনের অঙ্গীকার, যেখানে প্রত্যেকটি ফুল প্রকৃতির প্রাণবন্ততাকে উদ্ভাসিত করে। পলাশের লাল রঙের তীব্রতা, তার আগুনের মতো দীপ্তি, সবকিছু মিলিয়ে বসন্তের এক অনন্য সৌন্দর্য তৈরি হয়। পলাশের এই সৌন্দর্য শুধুই একটি ঋতু পরিবর্তনের বার্তা দেয় না, এটি এক নতুন শুরুর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে এটি একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। এই ফুলের চাহিদা কেবল প্রকৃতির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি আমাদের মনে গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা বসন্তের পূর্ণতা নিয়ে আসে।


বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে সমতল সবখানে বসন্তের আগমনে পলাশ ফুল ফুটে ওঠে। বিশেষত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনারের পাশেও এই ফুলের চোখে পড়ার মতো দৃশ্য দেখা যায়। এইসব স্থানগুলোতে পলাশ ফুলের এমন বিপুল উপস্থিতি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রতিটি স্থানে, যখন পলাশ ফুল তার রক্তিম আভা ছড়াতে শুরু করে, তখন তার সৌন্দর্যে পুরো পরিবেশ মুগ্ধ হয়ে ওঠে। গ্রামের মাঠ থেকে শুরু করে শহরের রাস্তাঘাট সব জায়গায় পলাশ ফুটে বসন্তের আগমনের খবর দেয়। পলাশের সেই আগুন রঙের আভা এমন এক সুন্দর অনুভূতি তৈরি করে, যা মনকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। বিশেষত বসন্তের দিনে, যখন পলাশফুল ফুটে, তখন সে যেন প্রকৃতির হৃদয়ে এক আগুনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এর রঙ জীবনের প্রাণবন্ততা, ভালোবাসা, সংগ্রাম, স্বাধীনতা এবং ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।


পলাশ বাঙালি সংস্কৃতিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি সাহিত্য, কবিতা এবং গান সবই পলাশকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। পলাশের আগুন রঙ কবি ও সাহিত্যিকদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় পলাশের রঙের মাধ্যমে বসন্তের সৌন্দর্যকে বর্ণনা করেছেন— "বসন্তের পরে এসেছে আজ বসন্ত, পলাশ ফুলে দিগন্ত"

এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় পলাশের রঙ এক শক্তি, সংগ্রাম এবং প্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠে— "পলাশ ফুটেছে বন-পাহাড়ে, লালে-লালে রঙিন শিখা জ্বলে"


এছাড়া পলাশের উপস্থিতি একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদ মিনারে, পহেলা ফাল্গুনের দিন এবং বসন্ত উৎসবে একটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই বিশেষ সময়ে পলাশ ফুল আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পলাশ ফুলের উজ্জ্বল লাল রঙ যেন আমাদের ইতিহাসের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, এবং এই সময়ে পলাশের লাল রঙ আমাদের ভাষা শহীদদের রক্তের প্রতীক হিসেবে প্রতিফলিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে যখন শ্রদ্ধা জানানো হয়, তখন পলাশ ফুল তার আগুন রঙের আভা দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। পলাশের অগ্নিময় রঙ যেন তাদের রক্তের চিহ্ন হয়ে থাকে, যা কখনো ভোলার নয়। পলাশের এই ফুলগুলি শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।


যদিও পলাশ বর্তমানে আমাদের চোখে পড়ে, তবে পরিবেশের নানা বিপর্যয়ের কারণে এর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বন উজাড়, নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে পলাশ গাছ কমে যাচ্ছে। একসময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পলাশ ফুলের সমারোহ ছিল, তবে আজ তা অনেকাংশেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এজন্য পলাশ গাছের সংরক্ষণে আমাদের দায়িত্ববোধ বাড়ানো প্রয়োজন। নতুন করে পলাশ গাছ রোপণ এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণে আমাদের কার্যক্রম জোরালো করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশবাদী সংগঠন, বন বিভাগ এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় পলাশ গাছের সংরক্ষণ ও নবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি আমরা প্রকৃতির এই অমূল্য দানকে রক্ষা করতে পারি, তবে ভবিষ্যত প্রজন্মও বসন্তে পলাশের রঙের উজ্জ্বলতা অনুভব করতে পারবে।


বসন্তের আগমন পলাশের আগুন রঙের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যা আমাদের মনে একটি চিরন্তন জ্বলন্ত আবেগ সৃষ্টি করে। প্রতিবার যখন বসন্তের বাতাস বইতে শুরু করে, তখন পলাশ গাছের ডালপালায় ফুটে ওঠে আগুনরাঙা ফুল। এই ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবন যতই কঠিন হোক, প্রতিবার নতুন করে জ্বলে ওঠা সম্ভব। বসন্তের রঙে রাঙানো পলাশের আগমন আমাদের জীবনের নতুন শুরুর, সংগ্রাম এবং ভালোবাসার প্রতীক।

আরও খবর