রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মৃত্যু হারুন মিয়ার ছেলে হুজাইফা (১০)। ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ বউ বাজার এলাকায় বেড়িবাঁধের জমিতে ছোট্র একটি ঘরে মা বোন আর এক ভাইকে নিয়ে বসবাস তার। বড় ভাই দিনমজুরের কাজ করে অন্যের সাথে এবং হুজাইফা তার ছোটবোন তাইবাকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন রেনু পোনা বিক্রিকরে সংসারের হাল ধরতে সহযোগীতা করে বড় ভাইকে। বছর খানেক আগে হারিয়েছে তার বাবাকে। তাই প্রাইমারি স্কুল পেরোনোর আগেই নেমে পড়তে হয়েছে জীবন যুদ্ধে। সাগর মোহনায় ঢেউয়ের তালে তালে শক্ত হাতে মশারি জালের মাধ্যমে তুলে আনছে বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা। আর নদীর পাড়ে বসে তার ছোট বোন তাইবা (৭) বিশেষ এক ধরনের সাদা চামচের মাধ্যমে পাত্র থেকে বাগদা রেণু বাছাই করে অন্য পাত্রে মজুদ করছে। দিনশেষে এসব পোনা বিক্রি করে চার থেকে পাঁচশত টাকা পায়।
শুধু হুজাইফা নয়, তার মতো আরও কয়েকশ কিশোর এবং হাজারো জেলে এভাবেই আহরণ করে চলেছে চিংড়ি পোনা। শুধুমাত্র জীবিকা নির্বাহ করতেই এ অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা ও মৎস্য অধিদপ্তরের নজরদারির অভাবে জেলে ও কিশোররা এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলেরা জানান,চৈত্র-আষাঢ় এ চার মাস বাগদা রেণুর মৌসুম। এ সময়টায় প্রকৃতিগতভাবেই নদীগুলোতে উৎপন্ন হয় বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা। দেশের দক্ষিণা জেলাগুলোতে এ পোনার বিশেষ চাহিদা থাকায় রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি,বড়বাইশদিয়া,ছোটবাইশদিয়া, চরমোন্তাজের বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত জেলে একধরনের নিষিদ্ধ মশারি জাল নিয়ে নদীতে রেণু নিধনে কাজ করছেন। এর সঙ্গে থাকা অন্য প্রজাতির রেণু ও মাছের ডিম নদীর পাড়ে ফেলে পিশিয়ে মারছে। একটি বাগদা রেণু আহরণের জন্য হাজার হাজার অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে। বাগদা রেণু পোনা মহাজনের কাছে বিক্রি হয় শত হিসেবে, মহাজন বিক্রি করছেন পিচ হিসেবে।
তবে পোনা শিকারি মোঃ শাহজাহান জানান,বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় এবং সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় অনেকটা পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এ পেশা বেছে নিয়েছি।
চরমোন্তাজ ইউনিয়নের রেণু শিকারের সঙ্গে জড়িত মোঃ রাসেলসহ আরও অনেকে জানান, অভাবের তাড়নায় জীবন-জীবিকার তাগিদে অবৈধ জেনেও তারা এসব পোনা শিকার করছেন। প্রতিদিন একেক জন জেলে ৮০০ থেকে এক হাজার পোনা শিকার করছেন। এ পোনা বিক্রি করে এখন তাদের সংসার চলছে। এদিকে জেলেদের অভিযোগ, আগে প্রতিটি চিংড়ি পোনা স্থানীয় বাজারে এক একটি রেণু এক টাকা দরে বিক্রি করলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে শত ৩০ টাকা দরে। এ জন্য মহাজনদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করলেন তারা।
চরমোন্তাজ ইউরিয়নের সমাজসেবক এম আজাদ খান সাথী জানান, প্রশাসনের যোগসাজশে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জেলেদের দাদন দিয়ে অবাধে এসব মাছের পোনা নিধন করছেন। এতে করে বিলুপ্ত হতে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের পোনা। রেণু আহরণ বন্ধ করা না গেলে এক সময় বিলুপ্ত হবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে উৎপাদন কমবে নদী ও সামুদ্রিক মাছের।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা,আনোয়ারুল হক বাবুল জানান,কিছু কিছু জায়গায় চিংড়ির রেণু ধরতে দেখা যায়। এই ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কোস্টগার্ড নৌ-পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযান করছে আমাদের সাথে। পোনা আহরণ রোধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
২ দিন ৫ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
২১ দিন ১ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
২২ দিন ৪ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৫৬ দিন ২২ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৬৭ দিন ২ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
৮১ দিন ০ মিনিট আগে
৮৯ দিন ১০ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে