২-৩ বছরের মধ্যে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট কুরবানির ছুটির আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বিশ্বকাপ খেলতে মধ্যরাতে দেশ ছাড়লেন টাইগাররা দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা। ঋণ খেলাপির কালো থাবায় বাংলাদেশ। তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি যে ৫ বিভাগে আমাদের দিন আমরা যেকোন দলকে হারাতে পারি : শান্ত সরকার ও নাগরিকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জাপানের পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টারের বৈঠক ইতনা মাধ্য‌মিক বিদ্যালয় ও ক‌লেজ- এর গভ‌র্নিং ব‌ডি নির্বাচন অনু‌ষ্ঠিত ঘাটাইলের রসুলপুরে পানিতে ডুবে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু নারীবান্ধব শিক্ষানীতির কারণে পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা: প্রধানমন্ত্রী কালিগঞ্জে কৃষ্ণনগর বাজারের সরকারী সম্পদ উদ্ধারে প্রশাসন নিরব থাকায়- ক্ষুব্ধ জনগণ কটিয়াদীতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগনের ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত উখিয়ায় গাঁজাসহ বাবা-ছেলে আটক টেকনাফে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৩ প্রার্থীকে জরিমানা শাহপরীরদ্বীপে র‌্যাবের অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ আটক-৩ আশাশুনির ওবায়দুল্লাহ হামদ-নাত প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগ শ্রেষ্ঠ আশাশুনিতে চোলাই মদসহ গ্রেফতার- ৩ আশাশুনিতে কমিউনিটি গ্রুপের সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

ইতিহাসের মহানায়ক ও আমাদের স্বাধীনতা

admin - দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 09-03-2023 10:40:59 pm

ছবি: লেখক

◾ শামীম ওমর


বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা নিয়ে ১৯২০ সালে ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে মধুমতি তীরে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা, জনদরদী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন সেই সমাজব্যবস্থায় এতটাই মানবিক ছিলেন যে, সবাই তাকে ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকতেন। মা-বাবা আদর করে ডাকতেন ‘খোকা’।একদিন খালি গায়ে স্কুল থেকে খোকা বাড়ি ফিরে আসে। মা জামাকাপড় কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘সহপাঠী একজনের গায়ে কিছু নেই তাই তাকে দিয়ে দিয়েছি।’ তখন কে জানতো টুঙ্গিপাড়ার সে ছোট্ট ছেলেটি একদিন বিশ্বনেতা হবে?


টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন কাটে দুরন্তপনা করে। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা। ১৯৩৪ সালে বঙ্গবন্ধু সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বেরি বেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তার হার্ট দুর্বল হয়ে যায়। তাকে কলকাতার শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধুরী চিকিৎসা করেন। ১৯৩৬ সালে আবার চোখে গ্লুকোমা নামে এক ধরণের রোগ হয়। কলকাতায় তার প্রথম চক্ষু অপারেশন করে ডাক্তার তাকে চশমা ব্যবহার করতে বলেন। ১৯৩৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু চশমা ব্যবহার করেন। ১৯৩৬ সালে এক দিকে বঙ্গবন্ধুর অসুস্থতা, অন্য দিকে শেখ লুৎফুর রহমান চাকরির কারণে মাদারীপুরে বদলি হয়ে চলে আসেন। তখন সায়েরা খাতুনকে মাদারীপুর নিয়ে আসা হয়। অসুস্থতার জন্য বঙ্গবন্ধুর পড়াশোনা দুই বছর পিছিয়ে যায়। সপ্তম শ্রেণীতে পুনরায় মাদারীপুর হাইস্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়। ১৯৩৭ সালে তার বাবা আবার গোপালগঞ্জে ফিরে এলে তাকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করা হয়। এ সময় পরিবারের ইচ্ছায় ফজিলাতুন্নেছাকে বিয়ে করেন।


তারপর পর থেকে নানা চড়াই উৎরাই পার করে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেন বাংলার বন্ধু বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের শাসন, শোষণ ও অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মার্চ মাসের ৭ তারিখে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পূর্বতন রেসকোর্স মাঠে বিকাল ৩:২০ ঘটিকায় সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা দেন। ৭ই মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। কোনো ধরণের আপোসের পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষজীবন উৎসর্গ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। সেই ভাষণ বাঙালির মুক্তির পথ সুগম করে দিয়েছিল এবং পাকিস্তান সরকার দেখতে পেরেছিল তাদের চরম পরাজয়।


প্রত্যেক নাগরিকের উচিত ৭ই মার্চের তাৎপর্য তাদের নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরা। আমরা যেভাবে পারি আমাদের নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরবো। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু কিছু দাবি কথা বলে ছিলেন যা হলো-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথাই বলেছেন। তিনি বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন।


বাঙালি জাতির সাথে মার্চের ভাষণে দাবি ছিল চারটি। আজকে আমরা এই চারটি দাবি কী কী ছিল? সেই তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন এবং ৭ই মার্চের সকল তথ্য দেখে নিন। ৭ই মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্র প্রতিফলন । তার বক্তব্যে একদিকে যেমন বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তেমনি অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন । সবশেষে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ধর্মনিরপেক্ষতা স্বাক্ষর রেখেছেন ।


তিনি তার বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মুসলমান বাঙালি-অবাঙালি সবার কথা বলেছেন। ৭ই মার্চের ভাষণ এর চারটি বিষয়বস্তু ছিল। ১. চলমান সামরিক আইন প্রত্যাহার ২. সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ৩. গণহত্যা তদন্ত করা ৪. নির্বাচিত জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণে বাঙালি জাতি পেয়েছিল দিক নির্দেশনা , জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, এমনকি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে এনে আমাদের দিয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান; যার কারনে এই ভাষণকে ব্যতিক্রমী ভাষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ভাষণ ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু এ স্বাধীনতা আমরা সহজে পাই নি। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে এনে দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে।


 ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ৩.২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের মুক্তির কালজয়ী কাব্য গ্রন্থের নাম, এই ভাষণ আমাদের আজীবন প্রেরণার উৎস। এই একটি ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের পতাকা, মানচিত্র এবং জাতীয় সংগীত। এই ভাষণ আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। সেদিন সমস্ত বাঙালি জাতি এক হয়ে গিয়েছিল শুরু স্বাধীনতা আদায় করে নেওয়ার জন্য। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ।


গণতন্ত্র, উচ্চ মানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম,জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা জোগাবে।

জাতিসংঘের ইউনেস্কোতে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ ভাষণের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের শেষ প্রহরে পাক বাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়েছে। তারপর থেকে আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছি।



লেখক:

শামীম ওমর

শিক্ষার্থী , 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।