◾ রুবেল আহমেদ || শিক্ষায় সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথমে শিক্ষকদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসকল শিক্ষক ব্যাপক টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলে পাঠদানে মনোযোগ না থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন সর্বনিম্ন। মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন দেশের বেতন কাঠামো বাংলাদেশি টাকায়-মালদ্বীপে ৯০ হাজার টাকা, ভারতে ৪০ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৩২ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা অন্যদিকে বাংলাদেশে মাত্র ১৭,৫০০ টাকা। মালদ্বীপ শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। শিক্ষকদের যথাযথ সুযোগ সুবিধা দেয়ার ফলেই এমন শিক্ষা বিপ্লব সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশেও চাইলে সম্ভব।
উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও বেসরকারি শিক্ষকরা বৈষম্যের স্বীকার। সরকারি শিক্ষকরা শুরুতে সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু, এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা বেতন পান শুরুতে মাত্র ২৩,৫০০ টাকা। অন্যদিকে এমপিও ভুক্তির বাহিরে যেসকল প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনে কোন কাঠামো মেনে চলে না। ১০ হাজার কিংবা ১২ হাজার টাকা বেতন পাওয়াটাও সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে উঠে একেকজন শিক্ষকের। এমন প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য ও বেতন কাঠামো অনুসরণে বাধ্য করতে হবে। এমন প্রতিষ্ঠান চাইলেই বেতন কাঠামো যথাযথ মেনে চলতে পারে কিন্তু পরিচালকদের লভ্যাংশে ভাটা পড়বে দেখে এমনটি করে না। এমন প্রতিষ্ঠান যদি বেতন কাঠামো অনুসরণ না করে তাহলে তাদের নিবন্ধন বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এমন প্রতিষ্ঠান জাতির জন্য কলঙ্ক বটে। প্রতিষ্ঠান আলোড়নে নিয়ে আনার জন্য নকল ব্যবস্থা এবং পরীক্ষার সময়ে কেন্দ্র দখলের মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দ্রুততার সাথে সম্পূর্ণ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে, শিক্ষক সংকট দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে লেগেই থাকে। বেতনের ক্ষেত্রে নতুন পে-স্কেল কিংবা গ্রেড উন্নতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ দিকে শিক্ষার পাশের হারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০০১ এ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পাশের হার যথাক্রমে ৩৫.২২% এবং ২৮.৪১%। ২০২৩ এ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পাশের হার যথাক্রমে ৮০.৩৯% ও ৭৮.৬৪%। এই যে এতো পার্থক্য দেখা গেলো এটা মোটেও শিক্ষায় পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে না। হচ্ছে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কারণে। পাশের হার যখন কম ছিলো তখন যারা পাশ করতো তারা কর্মক্ষেত্র খুব সহজেই পেয়ে যেতো। কিন্তু বর্তমানে পাশের হার বৃদ্ধির ফলে তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মক্ষেত্র সংকোচিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বেকার বেড়ে যাচ্ছে।
সংস্কারে অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ রদ করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সমূহে পরীক্ষার সময় আলাদা মনিটরিং ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও অসদুপায়ে সহযোগিতা করতে বাধ্য হন। বিশেষত রাজনৈতিক কারণে। প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া দূরীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করে, ছাত্র সংসদ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। ছাত্র রাজনীতির কুফলের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো শিক্ষক লাঞ্ছনা। যা মোটেও কাম্য নয়।
পাশ পদ্ধতি কঠিন করা গেলে অনায়াসে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। বেকার কমে যেতে থাকবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী কমে গেলে কোয়ালিটি এডুকেশন সম্ভব হবে।
চাকরি ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার আনা যায় তাঁর মধ্যে অন্যতম হলো যার যার বিভাগ অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা রাখা। এমন ছড়ানো ছিটানো চাকরি ক্ষেত্রের কারণে উচ্চশিক্ষার যথাযথ প্রয়োগ ব্যাহত হয়। দিন শেষে দেশও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারে চলে আসে। সরকারি উদ্যোগে চাকরির বাজার সাবজেক্ট এবং দক্ষতা ভিত্তিক করতে হবে। দেশের সকল কর্মক্ষেত্র গুলোতে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিষয় ভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা আছে তাও তা যতসামান্য। শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার সবচেয়ে বেশি জরুরি। একটি দেশ দাঁড়ায় মূলত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন না আনা গেলে সংস্কার ডামি হিসেবেই গন্য হবে।
লেখক: রুবেল আহমেদ
শিক্ষার্থী , ঢাকা কলেজ।
১৮ দিন ১২ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
২৪ দিন ৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
২৫ দিন ৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
২৯ দিন ১৬ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
৩২ দিন ২২ মিনিট আগে
৩৮ দিন ১২ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৩৯ দিন ৫ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৪০ দিন ২ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে