◾ মোঃ সাব্বির হোসেন
ভবিষ্যতে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান? এটা কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়,এই দক্ষতা আপনাকে অর্জন করতে হবে।যখন আমরা নতুন শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং দুনিয়া পরিবর্তনে ত্বরান্বিত হচ্ছে তাই কর্মক্ষেত্রে আমাদের কাজের ধরন ও দক্ষতা গুলোও পরিবর্তন হচ্ছে।
আজকে কথা বলব আধুনিক বিশ্বে সফল হওয়ার জন্য আমাদের বুঝতে হবে প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের প্রভাবিত করছে।আমাদের সেই সব দক্ষতা অর্জন করতে হবে,যা প্রযুক্তি করতে পারে না। তাহলে চলুন তেমন কিছু দক্ষতা দেখে নেওয়া যাক,যা আগামী ১০ বছরে সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন হবে।
১: ডিজিটাল স্বাক্ষরতাঃ
ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বলতে বোঝায় ডিজিটাল দুনিয়ায় আমাদের নিত্যদিনের কাজগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য কাজ এবং দক্ষতা শেখা।এই দক্ষতা গুলো হল- ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার এবং অ্যাপস্ নিরাপদ এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা। ডিজিটাল স্বাক্ষরতা দক্ষতা সম্পন্ন লোকেরা ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সহজেই যোগাযোগসহ অন্যান্য কাজগুলো করতে পারে।তাই তারা বুঝতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য, ভুয়া খবর বুদবুদ এবং তথ্য ওভারলোডের এই যুগে মানুষ নানাভাবে প্রতারণা স্বীকার হয়ে প্রতারিত হচ্ছে। তাই আমাদের ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল স্বাক্ষরতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক।
২সমালোচনামূলক চিন্তাভাবানাঃ
সমালোচনা মূলক চিন্তাভাবনা হল এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সযত্ন, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অভিমুখী ও সমস্যাকেন্দ্রিক জটিল সুবিবেচনামূলক চিন্তন প্রক্রিয়াকে বোঝায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য, ভুয়া খবর এবং তথ্য ওভারলোডের এই যুগে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা সাফল্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকার শীর্ষে।যার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি ব্যক্তিগত অনুভূতি বা মতামত পরিহার করে পক্ষপাতমুক্ত মন নিয়ে, সংশয়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে কোনও পরিস্থিতি, বিষয় বা ধারণা সম্পর্কে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই করে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। আগামী দিনের কর্মক্ষেত্র গুলোতে দূরদর্শী ও তীক্ষ্ণ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী চাইবে।
৩, ডেটা স্বাক্ষরতাঃ
বেশিরভাগ সংস্থার জন্য ডেটা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান ব্যবসায়িক সম্পদের মধ্যে একটি। তাই সংস্থা গুলো চাইবে সেইসব ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে যারা ডেটা সংগ্রহ এবং তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে।
৪ মানসিক বুদ্ধিঃ
ব্যক্তিদের সক্ষমতা চিনতে তাদের নিজস্ব আবেগ এবং অন্যদের মধ্যে, বিভিন্ন অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য করা এবং তাদের যথাযথভাবে লেবেল করা, চিন্তাভাবনা এবং আচরণের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করা এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বা নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবেগগুলি পরিচালনা করা। উন্নয়নের গতি ধারায় নিজেকে এগিয়ে নিতে চাইলে মানসিক বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে।
৫ সৃজনশীলতাঃ
আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন সৃজনশীলতা আসলে কি?এটাকে সজ্ঞায়িত করার একটা উপায় হল " কল্পনামূলক ধারণাগুলিকে বাস্তবে রুপদান করা।" সৃজনশীলতা ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা গুলোর মধ্যে একটি হবে। বিশেষ করে যখন আমরা মেশিনের হাতে আরও বেশি সংখ্যক কাজ হস্তান্তর করব। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা যেমন ধারণা সৃষ্টি, তেমন সমস্যা সমাধান করা এবং একটা কাজ সুন্দরভাবে গুছিয়ে করা ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
৬ সহযোগিতাঃ
কথায় আছে "দশে মিলে করি কাজ হারি যেতে নাহি লাজ" আরও একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ হল, "একের লাঠি দশের বোঝা।" সহযোগিতা হল দু'জন বা আরও বেশি লোক বা সংস্থাগুলি একসাথে কোনও কাজ শেষ করতে বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করা। সহযোগিতা সাহায্যের অনুরূপ। দুনিয়া পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রও আর তাই পরিবর্তিত কর্মক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন সহকর্মীদের সাথে কার্যকরভাবে সহযোগিতা এবং যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে হবে।
৭ নমনীয়তাঃ
আপনি কি পরিবর্তনে জন্য প্রস্তুত? ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র আজকের তুলনায় আরও চালিকাশক্তি হতে চলেছে।আমাদের ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি, ক্রমবর্ধমান অটোমেশন, কাজের দ্রুত বিকশিত গতি এবং বিশাল ব্যবসায়িক ধারার সাথে লড়াই করতে হবে। তাই ভবিষ্যতের এই ক্রমবর্ধমান আধুনিকতার ধারার সাথে নিজেকে উপযুক্তভাবে খাপ খাইয়ে নিতে নমনীয়তা অতন্ত্য প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা বলে মনে করা হয়ে থাকে।
৮ টাইম ম্যানেজমেন্টঃ
টাইম ম্যানেজমেন্ট হল সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। আধুনিক বিশ্ব অনেক গতিশীল।সময়ের সদ্ব্যবহার না করলে পিছিয়ে পড়াই স্বাভাবিক।
যার কথার চেয়ে কাজের পরিমান বেশি সাফল্য তার কাছেই এসে ধরা দেয়। তখনই স্বপ্ন পূরন হওয়া সম্ভব যখন আপনি সময়ের মূল্য দিতে শিখবেন।
৯ নেতৃত্বের দক্ষতাঃ
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, "নেতৃত্বের দক্ষতা হল সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সার্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে।" কোন প্রতিষ্ঠান কতটা উন্নতি করতে পারবে তা নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে নেতৃত্ব দেয়া হয়ে থাকে। তাই অদূর ভবিষ্যতে সব ধরনে প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্ট উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্বে দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিবে।
১০ কৌতূহল এবং ক্রমাগত শিক্ষাঃ
আমি যদি শুধুমাত্র একটি দক্ষতা বাছাই করি যা আমি মনে করি প্রত্যেকেরই অবশ্যই অর্জন করা উচিত, তা হবে কৌতূহল। আপনার বয়স বা কর্ম যাই হোক না কেন, একটানা শেখার মানসিকতা গ্রহণ করা আগামীদিনের কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কৌতূহল এবং ক্রমাগত শিক্ষা আপনাকে নমনীয় থাকতে এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে, সেইসাথে আপনাকে আপনার দক্ষতাকে তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে যাতে আপনি বড় পরিবর্তনসহ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। নিয়োগকর্তাদের সাথে প্রাসঙ্গিক থাকতে চান এবং নিজেকে একটি সফল, পরিপূর্ণ জীবন গড়ার সর্বোত্তম সুযোগ দিতে চান? তাহলে একটি বুদ্ধির মানসিকতা এবং আপনার শেখার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলুন। বাংলাদেশী বিজ্ঞানী আমেরিকায় বসবাসরত রাউফুল আলম বলেছেন যে, "শেখো। যেখান থেকে পার, শেখো।
লেখক: মোঃ সাব্বির হোসেন
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
১৭ দিন ২০ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
২৩ দিন ১৫ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
২৪ দিন ১৫ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
২৯ দিন ৪৫ মিনিট আগে
৩১ দিন ৮ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৩৭ দিন ২০ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৩৮ দিন ১৩ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৩৯ দিন ১১ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে