◾জোনায়েদ বাগদাদী : আদম আ: এর মাধ্যমে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। কালের বিবর্তনে এটার পতাকা বিভিন্ন নবী-রাসুলের মাধ্যমে উড়ন্ত ছিলো। হযরত মোহাম্মদ স: এর মাধ্যমে নবুয়তের সমাপ্তি ঘটে। তিনি শেষ নবী এবং নবীদের নেতা।
কোরআনে আল্লাহ বলেন:- “মোহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির বাবা নয় বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী”।
রাসুল স: নিজেই বলেছেন- “আমি শেষ নবী আমার পরে কোন নবী আসবেনা”। ওমর রা: এর বিচক্ষণতার ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় রাসুল স: বলেন-
“আমার পরে যদি কেউ নবী হত তাহলে সেটা ওমর হতেন”। এভাবেই রাসুল স: মাধ্যমে নবুয়তের সমাপ্তি ঘটে।
নবুয়তের সমাপ্তি মানে সকল বিধানেরও পরিসমাপ্তি। কিন্ত এই পরিপূর্ণতার সফলতা লক্ষ প্রাণের আত্মত্যাগে অর্জিত। বর্তমানেও সেই ধারা চলমান। ইসলাম ধর্মকে প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য নারীদের অবদান উল্লেখযোগ্য। ইসলামের ইতিহাসে যা স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে। বর্তমান সমাজে এটা নিয়ে খুব বেশি আলাপ না হলেও তাদের অবদান পুরুষদের থেকে কম নয়।
মক্কায় রাসুল স: নবী হওয়ার সময় থেকে যে মানুষটি তাকে অর্থিক এবং মানসিকভাবে সহায়তা করেন তার নাম-খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা:। তৎকালীন মক্কার এই মিলিওনিয়ার সুন্দরী বিদুষী নারী শুধুমাত্র রাসুল স: এর চারিত্রিক গুণ এবং সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাসুল স: এর পাশে ঢালস্বরূপ ছিলেন। নবুয়তর্প্বূ থেকে নুবয়ত সময়কালে তিনি ছিলেন রাসুল স: এর একনিষ্ঠ সাপোর্টার। ইসলাম আজ বর্তমান বিজয়ীর বেশে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার পিছনে তার আর্থিক সহায়তা এবং সাহসের অবদান অতুলনীয় ।
খাদিজা রা: এর ওফাতের পর রাসূল স: যার প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুরক্ত ছিলেন এবং যাকে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলেন তিনি হযরত আয়েশা রা: । সাহাবীরা নারী-পুরুষ সকলে তার নিকট হতে হাদিস,ফিকহ, তাফসির,ইতিহাসবিদ্যাসহ বিভিন্ন শাখার জ্ঞান অর্জন করেন। রাসুল স: তার কোলে মৃত্যু বরণ করেন। রাসুলের ওফাতের পর তিনি বিভিন্ন সময় মুসলিমদের সংকটে পাশে দাড়ান। সিফফিনের যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ওহুদ যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা: বাহিনি যখন আকষ্মিক আক্রমন করেন এবং রাসুল স: কে হত্যার জন্য অতি নিকটে চলে আসেন তখন তাঁর নিরাপত্তায় এগিয়ে আসেন এক নারী। যার সাহসিকতায় খালিদের বাহিনি পিছু হটতে বাধ্য হয়। তিনি হলেন উম্মু উমারাহ নুসাইবা বিনতে কা‘ব রা: ।
তিনি রাসুল স: এর জন্য ঢাল হয়ে দাড়ান। তার ক্ষিপ্রতা এত বেশি ছিলো যে, রাসুল স: বলেন- “আমি যে দিকে তাকাই সেদিকেই দেখি উম্মু উমারাহ আমাকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করছে”। তিনি রাসুল স: কে নিরাপত্তা দিতে দিতে শহীদ হন। রাসুল স: তাকে “খাতুনে জান্নাত” উপাধী দেন।
ইসলামকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যারা আত্মত্যাগ করে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় স্থান করে নিয়েছেন তাদের দলনেতা হলেন- হযরত সুমাইয়া রা:। তার রক্তের মাধ্যমে ইসলাম নামক বটবৃক্ষের প্রাণ সঞ্জিবনী শক্তির শুরু হয়। এই মহীয়সী রমনী ইসলামের প্রথম শহিদ। আল্লাহ একজন নারীকে এই মর্যাদা দান করেন।
নবুয়তের ৬ষ্ঠ হিজরীতে মুসলিমরা রাসুল স: এর নেতৃত্বে হজ¦ পালনের জন্য রওনা হয় কিন্ত কুরাইশরা তাদের মক্কা প্রবেশে বাধা প্রদান করে। ফলে হুদাইবিয়া নামক স্থানে তাবু স্থাপন করা হয়। রাসুল স: উসমান রা: কে তাদের সাথে মিমাংসা করার জন্য প্রেরণ করেন। কিন্ত তারা কোন আপোষ করেনি। কুরাইশরা কোনভাবেই এ বছরমুসলিমদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিবেনা। তবে তারা একটি মৈত্রি চুক্তি স্থাপনে সম্মত হয় । চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে মুসলিম কাফেলায় চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। রাসুল স: তাদেরকে ইহরামের কাপড় খুলতে,মাথা মুন্ডন করতে এবং কুরবানী করে ফেলতে বলেন। কিন্তচুক্তিতে সাহাবীরা সবাই অসšদষ্ট ছিলো বিধায় কেউ তার কথায় ইহরাম খুললোনা। তখন তিনি বিমর্ষ অবস্থায় তার স্ত্রী উম্মে সালামার ঘরে প্রবেশ করলেন। উম্মে সালামা রা: তাঁকে বললেন- আপনি এখন তাদের সামনে গিয়ে সরাসরি ইহরাম খুলে ফেলবেন,মাথা মুন্ডন করবেন এবং আপনার উটের নহর করে দিবেন । রাসুল স: বাহিরে গিয়ে তাই করলেন। তখন সাহাবীদের হুশ ফিরল এবং সকলে একই কাজ করতে থাকল। এভাবে রাসুল স: এর ডিপ্লোম্যাটিক উপদেষ্টা হিসেবে নারীরা নিয়োজিত ছিলেন।
প্রাচীন আরবে হাতেগোনা যে কয়েকজন ব্যাক্তি পড়ালেখা জানতেন তাদের মধ্যে ফাতেমা বিনতে খুয়াইলিদ রা: একজন। যিনি ওমর রা: এর বোন। তার বলিষ্ট ভূমিকায় ওমর রা: এর মত কঠোর ব্যাক্তির মাঝে ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয় এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এই ওমর রা: বিশ্বজাহানের দ্বিতীয় খলিফা হন এবং তার নেতৃত্বে অর্ধ-পৃথিবীব্যাপী ইসলাম প্রচার হয়। তার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে কোরআনে আয়াত নাযিল হয়।
রাসুল স: এর সময়কালে মুসলিমদের সাথে কাফিরদের যতগুলো যুদ্ধ সংঘঠিত হয় তার সবগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো। তারা চিকিৎসক, রাঁধুনি, এবং যোদ্ধাদের পানি পান করানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষ প্রয়োজনে রনাঙ্গনের যোদ্ধা হিসেবেও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। উম্মুল ওয়ারাকা বিনতে নাওফেল একজন আনসারী সাহাবী। তিনি প্রথম মহিলাদের জন্য মসজিদ নির্মান করেন। মোহাম্মদ স: মাঝে মাঝে তার মসজিদ পরিদর্শনে যেতেন। তিনি প্রচুর পরিমানে কোরআন পড়তেন। তিনি সমস্ত কোরআন সংরক্ষণ করেন। আবু বকর রা: সময় কোরআন সংকলনের সময় তার সংগ্রহের সাহায্য নেওয়া হয়। তিনি একমাত্র মহিলা কাতেবে ওহী ছিলেন। রাসুল স: তাকে “আশ শাহীদা” উপাধীতে ভূষিত করেন।
আরবের বিখ্যাত কবি খানসা তার ছেলেদেরকে যুদ্ধে পাঠিয়ে বলেন- আমি আল্লাহর রাস্তায় তাদের সপে দিলাম। তিনি একজনকে ইয়ারমুকে পাঠিয়ে দেন এবং বাকি দুজনকে ওমর রা: এর নিরাপত্তায় নিয়োজিত করেন। বিশ্বের প্রথম বিশ্বিবদ্যালয় “কারউইন বিশ্বিবদ্যালয়”। ৮৫৯ সালে মরক্কোর ফেজ শহরে ফাতিমা আল-ফিহরী নামী একজন মুসলিম নারী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইউনেস্কো এবং গিনেস বুক ওয়াল্ডের রেকর্ড অনুসারেও এটি প্রাচীন বিশ্বিবদ্যালয়।
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সামুদ্রিক অভিযানের প্রথম শহিদ - উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা: । যে অভিযান পরিচালনাকারীদের রাসুল স: জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
ফাতিমা বিনতে আব্বাস বাগদাদিয়্যাহ। যিনি প্রখ্যাত আইনবিদ। তিনি মিশর ও দামেশকের প্রভাবশালী নেত্রী । দামেস্কের নারীদের আত্মার চিকিৎসক হিসেবে প্রসিব্ধ ছিলেন। নারীদের উপদেশ দানের জন্য তিনি মিম্বারে বসতেন। ইবনে তাইমিয়া রহ: তার মিম্বারে বসাকে অপছন্দ করতেন। যেদিন তিনি নিষেধ করবেন ভাবলেন সেদিন রাসুল স: কে স্বপ্নে দেখেন এবং তার সম্পর্কে জিঙ্গেস করলে রাসুল স: তাকে সৎ নারী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রখর মেধার অধিকারী এই রমনী ইবনে তাইমিয়ার দারসেও বসতেন। তিনি মুগনী কিতাবের বহু অংশ মুখস্থ পারতেন। ইবনে কাসির রহ: এর স্ত্রীকে তিনি কোরান শিখিয়েছেন। হাদিস শাস্ত্রেও নারীরা অগ্রগামী। তাদের একজন হলেন- কারিমা আল মারওয়াজিয়া। তিনি সহীহ বোখারীর একজন নির্ভরযোগ্য টীকাকার হিসেবে প্রসিব্ধ। হেরাতের আলেমগন তাদের ছাত্রদের বোখারী পড়তে তার দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দিতেন। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ খতিব আল বাগদাদী হলেন তার ছাত্র।
কারিমা মারজিয়া (রহ) হাদিসের পন্ডিত ছিলেন। ইমাম বুখারী (রহ) তার থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন। আশ শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রের । রাসুল স: নির্দেশক্রমে তিনি প্রথমপর্বে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন। রাসূল স: যে সকল সাহাবাদের বাড়ীতে যেতেন তাদের একজন তিনি। তাকে রাসুল স: একটি বাড়ী উপহার দেন। তিনি ওমর রা: এর চাচাত বোন ছিলেন। সে সুবাধে রাসূল স: এর স্ত্রী হাফসা রা: কে আরবী পড়া-লেখা ও ক্যালিওগ্রাফি শিখান। তিনি একজন ডার্মাটোলজিষ্ট ছিলেন। ওমর রা: এর খেলাফতের সময় তাকে বাজার পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন।
হাদিস অনুসরণের ক্ষেত্রে রাবীর বক্তব্য যাচাইয়ের মানদন্ড রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন কোন রাবী সনদের মানদন্ডে বাতিল হয়েছে কিন্ত কোন মহিলা রাবী বাতিল হয়নি। এমন কোন প্রমানও পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ বহু হাদিস রয়েছে যা একজন মহিলা রাবী বর্ণনা করেছেন এবং গোটা উম্মত সেটাকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছে।
এভাবেই ইসলাম প্রচারে নারীদের অবদান ইতিহাসে সোনালি হরফে লিপিবদ্ধ। রাসুল স: তাদেরকে এমন সম্মানে ভূষিত করেন যা পৃথিবীর কোন ধর্মে করতে পারেনি। আল্লাহ তাদের এমন সৌভাগ্য দান করেছেন যা তাদেরকে ইসলামের ইতিহাসে সবসময় অগ্রগামী করে রাখবে । সেজন্য কবি নজরুল যথার্থ বলেছেন-
বিশ্বের যা কিছুমহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
১৮ দিন ৫ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
২৩ দিন ২৩ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
২৪ দিন ২৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
২৯ দিন ৯ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
৩১ দিন ১৭ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
৩৮ দিন ৫ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
৩৮ দিন ২২ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৩৯ দিন ১৯ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে