গলাচিপা ইউএনও এর বদলির আদেশ প্রত্যাহরের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত সদর উপজেলায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সুন্দরবনে বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকার ডিম ফুটে জন্মাল ৬৫ বাচ্চা গোয়ালন্দে নতুন ভবনে সোনালী ব্যাংক উপজেলা শাখার কার্যক্রমের উদ্বোধন বাঘায় ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের চাপায় এক গৃহবধূর মৃত্যু বাঘায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নাগেশ্বরীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন আইসটি কম্পিউটার এ্যান্ড নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধন। রংপুর অঞ্চল অচল করে দেয়ার হুমকি দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা লাখাই ডি সি রোডে শুকানো হচ্ছে গরুর খাদ্য খড়,যানচলাচলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ইলিশ ধরা শুরু,জেলে পল্লীতে উৎসবের আমেজ ঋণ আর দাদনের আতংক শ্যামনগরে তিন বখাটের ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড শ্রীপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মাগুরায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিং করায় ৩ বখাটে কারাগারে আশাশুনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কালিপদ রায় আর নেই গাড়িতে হামলা, আহত হাসনাত ঝিনাইগাতীতে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় নকলের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার পদ্মায় জেলের জালে আটক দুই কাতল ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে হেরোইনসহ ইউপি সদস্য গ্রেফতার । রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান

সিজারের পর ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, চিকিৎসকের বিচারের দাবি স্বজনদের

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে।অর্ভিযোগের তীর শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীনের দিকে।

প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর)দিবাগত রাত তিনটার দিকে সিলেটের অপর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। প্রসূতি মৃত্যুর এ ঘটনা নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সর্বত্র চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা ডা. রোকসানা পারভীনের অনিয়ম ও কয়েক বছরে বেশ কিছু রোগি মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করে নানা মন্তব্য করছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন দুজনেই কর্মস্থলে উপস্থিত হননি।


নিহত গৃহবধুর পরিবারের অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু বিউটিকে (২৩) নিয়ে তার স্বজনরা শনিবার (৭সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. রোকসানা পারভীনের কাছে যান। রোগীকে দেখে ডা. রোকসানা পারভীন আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে দুপুরের মধ্যে ওইসব পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে আসার জন্য বলেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী ওই রোগীর স্বামী বেলা আড়াইটার দিকে সকল পরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সময় শেষ হয়ে গেছে অজুহাতে ডা. রোকসানা পারভীন রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন।

নিহত বিউটির স্বামী পরিবহন শ্রমিক মো. সুজন  বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পেয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আমি আমার স্ত্রী বিউটিকে শহরের ডাকঘর সড়কের শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানে ভর্তি করার পর দেখি আমার স্ত্রীর সিজার করার জন্য ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদ আসেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌনে ৭টার দিকে আমার একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। এর আধা ঘন্টা পর চিকিৎসকরা আমাকে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে যেতে বলেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার স্ত্রীর পেট এমনভাবে কেটে রাখা হয়েছে যাতে মনে হয় কোন পশু জবাই করা হয়েছে। আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করি এমন অবস্থা কেন। তখন তারা আমাকে জানান রোগীর অবস্থা ভালো নয়, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এখন সিলেটে নিয়ে যান। তাদের কথামতো ওই ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সযোগে দ্রুত সিলেটস্থ রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাতে সেখানে যাবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে বলেন, রোগীকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছে। মোট ৬ ব্যাগ রক্ত দিয়ে, সেলাই করে নানাভাবে চেষ্টা করেন রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাত ৩টার দিকে তারা আমার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর আমাকে জানান। রবিবার আমি আমার স্ত্রীর মরদেহ শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসার পর বিকেল চারটায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করেছি। ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদের ভুল চিকিৎসায় বা ভুল সিজারে আমার স্ত্রী অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি আমার স্ত্রীর এ মৃত্যুর বিচার চাই।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন বলেন, ‘রোগী বেলা ১২টায় প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে আমাকে দেখাতে আসে। আমি রোগীর ব্লাড এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম টেস্টের রিপোর্ট দেখলাম অনেক আগের করা। পরে রোগীর সাথে আসা লোকজনকে বললাম রোগীর ৫ মাসের সময় একবার জ্বর নিয়ে আসছিলেন। এরপর ৪ মাসের মধ্যে আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছুই নেই।রোগীরতো ব্যথা খুব বেশি। এই পুরনো রিপোর্ট দেখে সিজার করা যাবে না। আমি রোগীর স্বামী ও শাশুড়িকে বুঝিয়ে বললাম পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়ে এসে আমাকে রিপোর্ট দেখাতে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে রোগীর স্বজনরা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আসেন। তখন আমি তাদের বলি রোগীর অবস্থা ভালো না। আপনারা মৌলভীবাজার বা অন্য যে কোনো হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান। বিকেল সাড়ে ৫টায় শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিক থেকে ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ওই রোগী। আমি সাথে সাথে রোগীর শাশুড়িকে ডেকে এনে বলেছি আমারতো অনেক সন্দেহ হচ্ছে। মনে হয় রোগীর জরায়ু ফেটে গেছে, বড় সমস্যা মনে হচ্ছে, আমি সিজার করবো না।

আপনারা এই রোগী মৌলভীবাজার বা অন্য কোথায়ও নিয়ে যান। পরে রোগীর বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। তখন রোগীর শাশুড়ি আমাকে বলেন, আল্লাহর হাওলা, রোগী মরলে মরবো, হায়াতের মালিক আল্লাহ। আপনি অপারেশন করেন। তারপরও আমি মানা করায় পেশেন্ট আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে মেডাম আমাকে বাঁচান, ওদেরকে আমি অনেক দিন থেকে বলতেছি আমাকে আনেও না, পরীক্ষাও করে না, ডাক্তারও দেখায় না,  এখন আপনি পাঠিয়ে দিলে আমি আর বাঁচবো না। পরে সবার অনুরোধে সফলভাবে অপারেশন করি, সুস্থ অবস্থায় নবজাতেরও জন্ম হয়। এরপর রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে সিলেট নিয়ে যেতে বলি। সেখানে রোগী মারা গেছেন। সিজারের পর আমরা অনেক চেষ্টা করেছি রোগীকে বাঁচাতে। কিন্তু আমাদের কারো কিছুই করার ছিল না।


এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই রোগীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে আসার পর আমরা কিন্তু মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দিছি। পরে বিকেলে শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকের ফোন পেয়ে সেখানের ওটিতে গিয়ে দেখি এই রোগিটাই ওখানে, আর তার অবস্থা খারাপ। ওখানেও আমরা মৌলভীবাজার নিয়ে যেতে বলি। তারপর রোগীর স্বজনদের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা রোগিকে বাঁচাতে চেষ্টা করি। বাঁচাতে গিয়ে আমরা ফেসে গেছি।এখানে রোগিও ভুক্তভোগী আমরাও ভুক্তভোগী।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, ‘ওই রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। রোগীর স্বজনরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাদের আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। নিহতের মরদেহ কবরস্থ করার পর হয়তো তারা আসবেন। এখানে কারো ত্রুটি প্রমাণিত হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যদি তাতে চিকিৎসকের কোন ভুল বা ত্রুটি থেকে থাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Tag
আরও খবর