শরণার্থীদের বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর' আদমদীঘিতে নাশকতা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত চার প্রকল্প ও কর্মসূচিতে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি মেডিকেল শিক্ষার্থী প্রার্থনা অনন্য দৃষ্টান্ত সোনাইমুড়িতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধা নারীকে জবাই করে হত্যা রাতভর টানা বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড, নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ কুতুবদিয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ডিলার নিয়োগ সম্পন্ন কচুয়ায় মাঠের পানি থেকে শতবর্ষী বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার কুতুবদিয়া সরকারি কলেজে এইচএসসি ২০২৫ ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন চিলমারীতে পানিতে পড়ে যুবকের মৃত্যু আদমদীঘিতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন নিহত ঝিনাইগাতীতে দেশীয় মাছ ধরার ৯৭৫ মিটার অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল আটক ও ধ্বংস ৭৫ বছরের পুরনো কলেজ, ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য লাইব্রেরিতে মাত্র ৪০টি আসন সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীর চরে বনায়ন তৈরিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঝিনাইদহে অবৈধ স্থাপনা ও সড়ক থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অফিসিয়াল নির্দেশনা পায়নি সেনাবাহিনী নাসিরনগরে মহানবী সা. এর শানে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ সিএনআরএসের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন কাদাকাটিতে হাত কোদালে খাল খনন চলছে, কাজের খবর জানেন না প্রকল্পের সভাপতি

সাতক্ষীরায় লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা অর্ধশতাধিক এবং পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

সাতক্ষীরায় লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা অর্ধশতাধিক এবং পোড়ানো হচ্ছে কাঠ





মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:  

সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। সেসব ইটভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউ। এসব ইটভাটা কয়লার সাথে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোঁড়ানো কালি ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ এবং হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য।

সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ঝিকঝাক ভাটা ৮৩ টি এবং সনাতনী পদ্ধতির ভাটা রয়েছে ১৩টি। এসব ভাটার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই ৬৭টির। ছাড়পত্র আছে মাত্র ২৯টি ভাটার। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোন সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা। উচ্চ আদালতে রীট করার কারণে পরিবশে অধিদপ্তর অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি।

সরেজমিনে জানা যায়, সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। রিটের প্রাথমিক শুনানী শেষে গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মোঃ আশরাফুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট রেঞ্জ রুলসহ এ আদেশ দেন। পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত ১০ নভেম্বর উচ্চ আদালতে এই রিট করা হয়।

এদিকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি। টায়ার পোড়ানো কালির ধোঁয়া ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি ব্যাধির সহায়ক। ফলে বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটার আশেপাশে বসবাসকারি জনসাধারণ।

সরেজমিনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ ভাটায় কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি। সদরের বিনেরপোতা এলাকায় মেসার্স রহমান ব্রিকস সরেজমিনে দেখা যায় সেখানে ইটভাটার পাশেই স্তুপাকারে ফেলা রয়েছে জ্বালানি কাঠ। পাশের আরও একটি ঘরে রয়েছে তুষকাঠ।

এ বিষয়ে ভাটার ম্যানেজার আকবর আলী বলেন, প্রথমে ইট কাটায় নতুন আগুন জ্বালাবার সময় ভাটার ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করা হয়।

মেসার্স রহমান ব্রিকসের মালিক মকসুদুর রহমান বলেন, যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে কয়লায় পানি মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে। এছাড়া দামও অনেক বেশি। গত বছর আমার ভাটায় এক কোটি টাকা লস হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে শুধুমাত্র কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো একেবারেই অসম্ভব। তাই আমরা জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে তুষকাঠ ব্যবহার করছি।

সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের নুনগোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা জেলা ভাটামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল সরদারের মালিকানাধীন বিনেরপোতা বেতনা নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে মেসার্স এমআরএস ব্রিকস নামক ইটভাটা এই ইটভাটায় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তোয়াক্কা না করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

এবং চারিপাশে স্তুপ আকারে সাজানো রয়েছে জ্বালানী কাঠ। ভাটায় ঢোকার মুখে একটি বড় ঘরে সাজানো রয়েছে তুষকাঠ। এভাবে জনবসতি এলাকায় অবস্থিত তাই ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পুরোদমে কাঠ ও তুষকাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ভাটার কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে।

একইভাবে তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি ব্যবহার করা হচ্ছে সদরের গাভা ফিংড়ী এলাকায় রাহাত ব্রিকস। এছাড়া মেসার্স রকি ও জেবি ব্রিকসে, বিনেরপোতা এলাকায় হাবিব ব্রিকস, এসবিএফ ব্রিকস, সাদিয়া ব্রিকস, বাবুলিয়ার বিবি ব্রিকস ও এসবিএল ব্রিকস, এসকে ব্রিকস, হাওয়ালখালির রাকিন ব্রিকস ও মীম রাজি ব্রিকস, ভাদড়া মোড়ের কেএন ব্রিকস, আশাশুনি উপজেলার কুল্যার মোড়ের হাজী ব্রিকস, গুণাকরকাটির রুমানা ব্রিকস ও সরদার ব্রিকস, কালিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দকাটির একতা ব্রিকস, উজিরপুরের টিআরবি ব্রিকস, বাজারগ্রামের শেখ ব্রিকস ও ময়না ব্রিকস, চন্ডিপুরের এস বি-১৭ ব্রিকস, নাজিমগঞ্জের ব্রাদার্স ব্রিকস, শ্যামনগর উপজেলার এবিআর ব্রিকস, সোনারমোড়ের এইচবি ব্রিকস ও আশা ব্রিকস, খানপুরের গাজী ব্রিকস, চন্ডিপুরের গাজী ব্রিকস, দেবহাটা উপজেলার খানজিয়া এলাকার রুমানা ব্রিকস ও সখিপুরের ইসলামিয়া ব্রিকস এবং পাটকেলঘাটা উপজেলার চৌধুরী ও এসএনবি ব্রিকসসহ জেলার শতাধিক ইটভাটায়।

সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলার ব্রিকস ফিল্ডগুলো কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো শুরু করেছে জানতে পেরে আমরা অভিযান পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অভিযানের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠিও দিয়েছি। ইট ভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো বন্ধসহ জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে।

জেলায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে স্বীকার করেই তিনি বলেন, এসব ভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের ভাটা পরিচালনা করছেন। যে কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে দশের অধিক ভাটার রিট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত জবাব পাঠাবো।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলার বেশ কিছু ভাটায় কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আগামী ২/১দিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসব ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।একই সাথে জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Tag
আরও খবর