নাগেশ্বরীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন আইসটি কম্পিউটার এ্যান্ড নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধন। রংপুর অঞ্চল অচল করে দেয়ার হুমকি দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা লাখাই ডি সি রোডে শুকানো হচ্ছে গরুর খাদ্য খড়,যানচলাচলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ইলিশ ধরা শুরু,জেলে পল্লীতে উৎসবের আমেজ ঋণ আর দাদনের আতংক শ্যামনগরে তিন বখাটের ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড শ্রীপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মাগুরায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিং করায় ৩ বখাটে কারাগারে আশাশুনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কালিপদ রায় আর নেই গাড়িতে হামলা, আহত হাসনাত ঝিনাইগাতীতে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় নকলের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার পদ্মায় জেলের জালে আটক দুই কাতল ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে হেরোইনসহ ইউপি সদস্য গ্রেফতার । রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান এবার কোরবানিযোগ্য পশু সোয়া কোটি, উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ২০ লাখ ভিসির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সারিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরই মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ডোমারে স্কাউট ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

আজ ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস

আজ ৪ ডিসেম্বর রবিবার ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শত্রু মুক্ত করে। পাক-হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ কালো রাতে যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই রাতেই ৩.৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষনার টেলিগ্রাম ম্যাসেজ ঝিনাইগাতী ভি এইচ এফ ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছে। ম্যাসেজ পেয়েই ওয়্যারলেস মাস্টার জামান সাহেব তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের বাসায় সংবাদ দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার সংবাদ পেয়ে পরদিন ভোরেই অর্থাৎ ২৬শে মার্চ সকালে বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডাঃ সৈয়দ হোসেন, ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নান মাষ্টার, সেকান্দর আলী সহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌছান। ইংরেজীতে লেখা টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি পেয়েই নেতৃবৃন্দ তৎ¶নাৎ তা শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করেন। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ঢাকার সর্বশেষ সংবাদ কি তা জানার জন্যে শেরপুর শহরে মানুষ সমবেত হতে থাকে। ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেসে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ হাতে পেয়েই তা শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে পাঠ করে শুনানো হয়। বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষনার শ্রবণ করে সমবেত জনতা মুর্হুমুর্হু শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে শেরপুরের আকাশ বাতাস। ২৭ মার্চ সকালে শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ সর্বজনাব এডভোকেট আব্দুল হালিম এমপি, মুহসিন আলী মাস্টার ও ছাত্র নেতা আমজাদ আলী ঝিনাইগাতী এসে পৌছেন। ঝিনাইগাতীর নেতৃবৃন্দ তাদের অভ্যর্থনা জানান। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডাঃ সৈয়দ হোসেন ও তৎকালীন ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নান মাষ্টারকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ইপিআর ক্যাম্পে যান। নকশি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। দেশকে শত্রু মুক্ত করাসহ পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুরু হলো প্রতিরোধ সংগ্রাম। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশি¶ণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবক সহ মুজিব বাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে তা পিছু হটে পুরাতন ব্র্হ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৬ এপ্রিল সুবেদার হাকিম এর খোলা জীপ এসে দাঁড়ায় ঝিনাইগাতীর ঐতিহাসিক আমতলায়। সুবেদার হাকিম জনতাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ জানান। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত ছিল। ২৭ এপ্রিল পাক বাহিনী বহর নিয়ে গোলা বর্ষন করতে করতে আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডাঃ সৈয়দ হোসেনের হলদীগ্রামের বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা হলদীগ্রাম থেকে ঝিনাইগাতী বাজারে ঢুকেই আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে পুড়ে দেয়। গাড়ী বহর নিয়ে রাংটিয়া পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে আবার পিছনে ফিরে এসে ঐদিন বিকালেই কোয়ারীরোডে পাক বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে ঝিনাইগাতীর এক মাইল দ¶িণে আহম্মদনগর হাই স্কুলে তাদের সেক্টর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাক বাহিনীর ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে একমাত্র সেক্টর হেড কোয়ার্টার। যার দায়িত্বে ছিলেন মেজর রিয়াজ। এছাড়া পাকবাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৬ বৈশাখ জগৎপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামটি পুড়িয়ে দেয় এবং পাক বাহিনী ৪১ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। ৫ জুলাই কাটাখালি ব্রীজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা রাংগামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। দালালদের খবরে পাক বাহিনী রাংগামাটি গ্রামে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। শুধু রাংগামাটি বিলের দিক খোলা ছিল। সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। তাঁর লাশ আনতে গিয়ে আলী হুসেন ও মোফাজ্জল শহীদ হন। পরদিন রাংগামাটি গ্রামে হানা দিয়ে পাক বাহিনী ৯ জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ২৩ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে এবং মুক্ত তাওয়াকুচায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তাওয়াকুচা যুদ্ধে ৪ জন পাক সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার নিহত হলে পাক বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে আসে। ৩ আগষ্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। আগের দিন ২ আগষ্ট বিকেলে মেজর জিয়া নকশি ক্যাম্প আক্রমনের জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের অবস্থান গুলো দেখেন। এদিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও নিখোঁজ হন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়। ২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেল সহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যায়। ২৮ নভেম্বর পাক বাহিনী ঝিনাইগাতী হানা দিয়ে ৮ জনকে আহম্মদ নগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাদের এক গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পুতে রাখে। ৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাক বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদ নগর হেড কোয়ার্টারের সৈনিকদের সাথে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতের আঁধারে বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায়।

Tag
আরও খবর