নাগেশ্বরীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন আইসটি কম্পিউটার এ্যান্ড নেটওয়ার্কিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধন। রংপুর অঞ্চল অচল করে দেয়ার হুমকি দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা লাখাই ডি সি রোডে শুকানো হচ্ছে গরুর খাদ্য খড়,যানচলাচলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ইলিশ ধরা শুরু,জেলে পল্লীতে উৎসবের আমেজ ঋণ আর দাদনের আতংক শ্যামনগরে তিন বখাটের ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদণ্ড শ্রীপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মাগুরায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিং করায় ৩ বখাটে কারাগারে আশাশুনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কালিপদ রায় আর নেই গাড়িতে হামলা, আহত হাসনাত ঝিনাইগাতীতে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় নকলের দায়ে ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার পদ্মায় জেলের জালে আটক দুই কাতল ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে হেরোইনসহ ইউপি সদস্য গ্রেফতার । রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান এবার কোরবানিযোগ্য পশু সোয়া কোটি, উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ২০ লাখ ভিসির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সারিয়াকান্দিতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরই মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ডোমারে স্কাউট ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম


পৃথিবীর অনেক দেশে নাগলিঙ্গম পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে খুব কম দেখা যায়। দেশে হাতেগোনা কয়েকটি নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ টিকে আছ। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর ভবনের পুকুরের পাশে বিশাল নাগলিঙ্গম গাছে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ফুল ফোটে। এ গাছগুলোতে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে পুরো এলাকাবাসিকে সকাল-বিকাল সৌরভে মুগ্ধ করে রাখে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান  থেকে আগত পর্যটকরা চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে অবস্থিত এই নাগলিঙ্গমগাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। আবার কেউ কেউ ক্যামেরাবন্দিও হচ্ছেন গাছের সাথে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, পৃথিবীতে এ গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। নাগলিঙ্গম এক প্রকার বিশাল বৃক্ষ, যার ফুলের নাম নাগলিঙ্গম ফুল। এর ইংরেজি নাম ‘ক্যানন বল’। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো দেখতে কামানের গোলার মতো। বিরল প্রজাতির ফুলটির সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। নাগলিঙ্গম গাছ ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮  থেকে ৩১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বছরের পওায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়। দ্রæত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গমগাছে চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর গাছে ফুল ধরে। গাছের কাÐভেদ করে বেরিয়ে আসে প্রায় ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ অসংখ্য মঞ্জুরি। এক একটি মঞ্জুরিতে ১০-২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জুরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে, অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। ফুলের রঙ অনেকটা লালচে কমলা বা লালচে গোলাপি হয়ে থাকে। ফুলে ৬টি মাংসল পপুরু পাপড়ি থাকে। ফুলের মাঝে থাকে নাগের ফনা আকৃতির পরাগচক্র। ধারণা করা হয়, এর কারণেই এই ফুলের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম।


উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, ‘১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আব্দুুল্লাহ আল হোসেন বিটিআরআই ক্যাম্পাসের পুকুরের দক্ষিণপ্রান্তে এ গাছটির চারা রোপণ করেন। তিন দশকে এটি বিশালাকৃতি ধারণ করেছে। যদিও বছরের মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এ গাছটিতে ফুল ফোটার কথা, কিন্তু বর্তমানে প্রায় সারা বছরজুড়েই গাছটিতে একসঙ্গে ফুল ও ফল দেখা যায়। ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে বাদামি-খয়েরি রঙের গোলাকৃতি ফল হয়। আমাদের দেশে এ গাছটি এখন খুব একটা বেশি নেই। যৎসামান্য গাছ টিকে আছে এদেশে।

প্রতিবেশ-প্রাণবৈচিত্র সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ বলেণ, ‘নাগলিঙ্গম সুউচ্চ চিরসবুজ বৃক্ষ। প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে আমাজানের জঙ্গলে নাগলিঙ্গম গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। এ গাছটি বাংলাদেশে বিপন্নপ্রায়। দেশের প্রাকৃতিক বনে বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে খুব কম সংখ্যক এ গাছটি দেখা যায়। তবে ঢাকাস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বলদা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ঢাকার এরকম জায়গায় প্রাকৃতিক উদ্যানে নাগলিঙ্গম কিছু গাছ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহসহ কিছু প্রাচীন জমিদার বাড়িতে অন্যান্য পুরাতন বাড়িতে এ গাছটি দেখা যায়। এ গাছটি ভেষজ। নাগলিঙ্গম গাছ বেড়ে ওঠার জন্য যে পরিবেশ দরকার আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রাকৃতিক বনে সে পরিবেশ এখন আর নেই। দেশের প্রাকৃতিক বনে সুউচ্চ গাছপালা নেই বললেই চলে। আর পাশাপাশি সুউচ্চ গাছপালা না থাকলে নাগলিঙ্গম গাছ বেড়ে ওঠতে বা টিকে থাকতে পারে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস  থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরী ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। আমেরিকার আমাজান অঞ্চল ও  ভেনিজুয়েলার আদিবাসীরা নাগলিঙ্গম ফলের খোসাকে এক সময় বাসন হিসেবে ব্যবহার করত বলে জানা যায়। এর কাঠ থেকে আসবাবও তৈরি হয়।


আরও খবর