চিলমারীতে পানিতে পড়ে যুবকের মৃত্যু আদমদীঘিতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন নিহত ঝিনাইগাতীতে দেশীয় মাছ ধরার ৯৭৫ মিটার অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল আটক ও ধ্বংস ৭৫ বছরের পুরনো কলেজ, ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য লাইব্রেরিতে মাত্র ৪০টি আসন সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীর চরে বনায়ন তৈরিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঝিনাইদহে অবৈধ স্থাপনা ও সড়ক থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অফিসিয়াল নির্দেশনা পায়নি সেনাবাহিনী নাসিরনগরে মহানবী সা. এর শানে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ সিএনআরএসের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন কাদাকাটিতে হাত কোদালে খাল খনন চলছে, কাজের খবর জানেন না প্রকল্পের সভাপতি আশাশুনিতে উত্তরণের এক্সেস প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা ক্ষেতলালে বিডব্লিউবি বিতরণে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় সরকারি বন বিভাগের গাছ কেটে ভূমি দখলের অভিযোগ ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নে বিনামূল্যে স্যানিটারি ল্যাট্রিন সামগ্রী বিতরণ সাতক্ষীরায় বিশ্ব শিশুশ্রম উপলক্ষে আলোচনা সভা সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে ফেন্সিডিলসহ প্রায় চোদ্দ লক্ষ টাকার মালামাল আটক চিলমারীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের দাফন সম্পন্ন গলাচিপায়- স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রয়োগ মেলা ও সেমিনার। লালপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক  প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ফখরুদ্দীন হুজুরকে যেভাবে পেয়েছি

প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ফখরুদ্দীন হুজুরকে যেভাবে পেয়েছি  


মুহাম্মদ আতাউল হক বিন মুছা


হাদীস শাস্ত্রের এই বিখ্যাত পন্ডিত ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চুনতি হাকিমিয়া কামিল (এম এ) মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস হিসেবে পরিচালনা কমিটির অনুরোধে নিযুক্ত হন। তিনি আমাদেরকে কামিল প্রথম বর্ষে তিরমিজী শরীফ ও কামিল দ্বিতীয় বর্ষে বুখারী শরীফ প্রথম খন্ড এবং ত্বাহাবী শরীফ এর ক্লাস নিতেন। হুজুর মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ দিকের গেইটের পুর্ব পাশের উত্তর মুখী একটি কামরায় থাকতেন। প্রতিদিন হুজুর ফজর নামাজের পর গুড় দিয়ে মুড়ি খেতেন।আমরা কয়েকজন হুজুরের খুব কাছের ছাত্র ছিলাম। ফজর নামাজের পর আমরা হুজুরের জন্য ফিক্বহ ভবনের পশ্চিম পাশের নলকূপ থেকে এক জগ পানি নিয়ে  আসতাম এরপর আমাদের কে সাথে নিয়ে একসাথে গুড় দিয়ে মুড়ি খেতেন।মুড়ি খেতে খেতে আমাদের সাথে পবিত্র কুরআন, হাদিস,ফিকহ , বিভিন্ন মুহাদ্দিসিনে কেরামের জীবনী ও শিক্ষনীয় গল্প বলতেন। হুজুরের বন্ধুত্ব সুলভ আন্তরিকতা পুর্ণ মোহনীয় ভঙ্গিতে কথা মালা মনে হয় এখনো কানে ভাসছে । হাদীসের বিভিন্ন শব্দের উচ্চারণ ও বিশ্লেষণ , ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর এক বিশাল সমাবেশ ঘটত হুজুরের দারসে। দূরদূরান্ত থেকে ছাত্ররা ক্লাসে জমায়েত হত উনার হাদীসের দরস শুনার জন্য।ক্লাসে সবসময় সরগরম থাকত। শব্দের উচ্চারণ, ভাষার মাধুর্য, বাচনভঙ্গি,শেষ বেঞ্চ পর্যন্ত ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ সত্যিই অসাধারণ। হাদীসের সনদের তথ্যবহুল আলোচনা,মুহাদ্দিসীনে কেরামের ঘটনা সম্বলিত ঐতিহাসিক জীবনী ও আসমাউর রিজালের ইতিহাস শুনে আমরা মাঝে মাঝে কেঁদে দিতাম, মাঝে মাঝে হাসতাম আবার মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতাম উনার ইলমের সাগরে। হাদিসের রাবিদের জারহ ও তা'দিল শুনে অবাক হয়ে যেতাম। তিনি বাংলা,আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষার অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। বিভিন্ন কিতাবের রেফারেন্স শুনে আমরা মুগ্ধ হয়ে যেতাম।

  আমি কামিল প্রথম বর্ষে উঠে কিছু দিনের জন্য  লোহাগাড়া পুঠিবিলা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় গেস্ট টিচার হিসেবে চাকরি করি। মাদ্রাসা থেকে যাতায়াত করতাম। এটা শুনে আমাকে একদিন সকালে হুজুরের রুমে ডেকে নিয়ে বললেন - আতাউল হক তুমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ক্লাস কর তোমার উপকার হবে। তখন আমি আবার ক্লাস শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! আমার প্রতি হুজুরের এই আদেশ ও ভালোবাসা আজীবন প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।

যখন ২০০৬ থেকে ফাজিল ও কামিল কে অনার্স ও মাস্টার্স এর মান দেয়া হয় তখন ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা গুলো কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়।আমরা ২০০৭ সালের ফাজিল পরীক্ষার্থীদের কে ইসলামী স্টাডিজ নিয়ে ৩০০ নং এর অতিরিক্ত পরীক্ষা দিতে হয়। কামিল স্তরে এসে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ২ টি করে অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে হয়। তখন মাদ্রাসার লাইব্রেরী তে রেফারেন্স কিতাবের ঘাটতি দেখা দেয়। শায়খুল হাদীস হুজুর তখন বিপাকে পড়ে যান। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুবিধার্থে তিনি নেমে পড়েন লাইব্রেরী সমৃদ্ধির জন্য কিতাব সংগ্রহের কাজে। মাদ্রাসার অন্যান্য আসাতিজায়ে কেরামের সহযোগিতায় হুজুরের তত্ত্বাবধানে লাইব্রেরীতে বিভিন্ন কিতাবের সমাহার হয়। তিনি সংগ্রহ করেন আন্তর্জাতিক মানের রেফারেন্স কিতাব  "তারিখু মদিনাতি দিমাস্ক" মুসান্নিফ আল্লামা ইবনে আসাকির যা ৮৫ খন্ডে বিভক্ত। এছাড়াও আরো অনেক কিতাব। এই সব কাজে হুজুরকে বিশেষ করে বেশী সহযোগিতা করেন চুনতীর মাওলানা কাজী নাসিরুদ্দিন সাহেব।

সদা সত্য বাদী , সদালাপী, তীক্ষ্ণ দূরদর্শী, ইসলামী জ্ঞানের পন্ডিত, সাধারণ জীবনযাপন কারী , হাদিস বিশারদ, প্রতিথযশা আলেম, শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ)  সব সময় নীতিতে অটল ছিলেন।অন্যায় কে কখনো প্রশ্রয় দেননি। মহান রবের উপর পূর্ণ নির্ভরশীল ও অবিচল থাকার ক্ষেত্রে তিনি সদা প্রস্তুত।নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি আপোষহীন।নীতি নৈতিকতা ও চরিত্র সম্পর্কে আমাদের কে উৎসাহিত করতেন।সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করলে বুঝা যায় তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রিয় অভিভাবক। তিনি  ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলে জালালুদ্দীন, জায়নুদ্দীন, ইমাদ উদ্দীন।মেয়ে নুরুন্নাহার আক্তার পারভীন ও আমাতুল মাওলা মারজানা।

উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ উস্তাদ শায়খূল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন রহ: ২০১১ সালের ২৬ মে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।। এ সময় তাহার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।  মহান আল্লাহর দরবারে শ্রদ্ধেয় উস্তাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের সুউচ্চ মক্বাম কামনা করছি।আমীন।


লেখক:

সহকারী শিক্ষক, রঙ্গিখালী দারুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা টেকনাফ, কক্সবাজার।

আরও খবর