আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান যা সংবিধানের ৭ এর (২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। নাগরিক হিসেবে সংবিধানের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল কিন্তু কিছু বিষয় নিয়ে সবোর্চ্চ আইনের আরো স্পষ্টতা প্রয়োজন।
আমরা সকলে জানি "ঢাকা" বাংলাদেশের রাজধানী। এটা শুধুমাত্র কোনো প্রচলিত ও শুনা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫ এর (১) বলেছে “প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকা”।
এখন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার মনে প্রশ্নের জন্ম হয় যে কোন ঢাকা - ঢাকা উত্তর, নাকি ঢাকা দক্ষিন?
২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধনী) বিল, ২০১১ পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুইটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ সংবিধানে রাজধানী হিসেবে অবিভক্ত ঢাকার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ২০১১ সালে ঢাকাকে কেন দুই ভাগ করা হলো তার কোন সন্তোষজনক উত্তর আমি পাইনি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ১৯৬.২২ বর্গ কিলোমিটার ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ১০৯.২৫ বর্গ কিলোমিটার। দুই সিটি কর্পোরেশনের একত্রে আয়তন হয় ৩০৫.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের আয়তন ১,৫৭২ বর্গ কিলোমিটার, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর আয়তন ২,৫১১ বর্গ কিলোমিটার। ঢাকার চেয়ে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন, রাশিয়ার রাজধানী মস্কো কিংবা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস অনেক বড়, উন্নত, সমৃদ্ধ, ব্যাপক বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যতাপূর্ণ। কিন্তু সে সব দেশ তাদের রাজধানীকে কোন ভাগ করেনি। রাজধানীকে আমরা দুটি পৃথক ভাগ করে কি তাদের চেয়ে নাগরিক সেবা প্রদানে, প্রশাসন পরিচালনায়, শহর ব্যবস্থাপনায় ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে বা বিভিন্ন সূচকে ভালো অবস্থানে আছি?
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫ এর (২) তে বলা আছে “রাজধানীর সীমানা আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে”। এখানে সুস্পষ্টভাবে রাজধানীর সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে, রাজধানীকে কোনো ভাবে উত্তর-দক্ষিণ নামে পৃথক ভাগ করার কথা বলা হয়নি। রাজধানী হলো একটি দেশের প্রবেশপথ ও ঐতিহ্য মর্যাদার ধারক-বাহক। অনেক সময় রাজধানী দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, প্রায় সময়ই দেশের নামের সাথে রাজধানীর নাম সমভাবে, সমকন্ঠে, সমস্বরে উচ্চারিত হয়, যেমন দিল্লি আশা প্রকাশ করে, পারস্পারিক বৈঠকে ওয়াশিংটন মনে করে, মস্কো প্রত্যাশা করে, বেইজিং ও টোকিওর অবস্থান একই। এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা রাজধানীর নাম দিয়েই নিত্যদিনে বা খবরে স্ব স্ব দেশের সরকারের অবস্থান বুঝতে পারি। আমরা আমাদের প্রাণের রাজধানী ঢাকাকে দুইভাগে বিভক্ত করে কী অর্জিত করা হলো তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধরে না।
যেখানে রাজধানী হিসেবে ঢাকার নাম থাকার পরও দুই ভাগ করা হলো বিষয়টিকে অসাংবিধানিক ও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ এর (খ) অনুযায়ী মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সমূহের পরিবর্তন করার জন্য যদি চ্যালেঞ্জ করা হয় এবং ঢাকাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা কে আদালত কর্তৃক অসাংবিধানিক বলে যুগান্তকারী রায় প্রদান করে তাহলে আশ্চর্যান্বিত হবার কোন কারণ আমার দৃষ্টিতে গুচর হয় না।
মোঃ নাজমুল হাসান: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Email: pressnazmulbd@gmail.com
২৬ দিন ৫ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৪০ দিন ৮ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৪১ দিন ১৯ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৪৩ দিন ৫ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৫২ দিন ৬ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৫৫ দিন ৮ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
৫৮ দিন ৫ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৬৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে