জাগো মুসলমান - আর. এম. কারিমুল্লাহ আমরা খামেনিকে এখনই হত্যা করব না: ট্রাম্প যে কারণে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা জরুরি জানভির মিউ মিউ লুকে লন্ডনের ফ্যাশন সন্ধ্যায় ঝলকানি লাখাইয়ের গোপিনাথ লিবিয়ায় অপহরণের শিকার ; শোনালেন নির্যাতনের কাহিনী শান্তিগঞ্জে জামায়াতের সাংগঠনিক ও বায়তুলমাল পক্ষের প্রস্তুতি সভা ক্ষেতলালে সরকারি পুকুর লীজকে কেন্দ্র করে নারী উদ্যোক্তাকে মারধর কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে দু'জনের মৃত্যু ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল অফেন্সের’ অভিযোগ আসিফ মাহমুদের শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরি, চালকের আসনে বাংলাদেশ তেহরানে দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে: পররাষ্ট্রসচিব সুন্দরবন রক্ষায় কনক্রিট অ্যাকশন প্ল্যান করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৪৪ জন অবশেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো জিল্লুর রহমানকে দিনাজপুরে পুকুরে ডুবে দুই কন্যা শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স১০০ শয্যায় দাবীতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন রাজশাহী কলেজ পাঠকবন্ধুর ঈদ পুনর্মিলনী ও আম উৎসব অনুষ্ঠিত লালপুরে ভেজাল আইসক্রিম তৈরির দায়ে ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দুই মিষ্টি ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাইরের কেউ নন; তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 13-09-2022 05:05:08 pm

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাইরের কেউ নন; তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার নিজেই। স্বামীর পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ বাধে। এই কারণে স্ত্রীকে হত্যা করতে তিন লাখ টাকায় লোক ভাড়া করেন সাবেক এই এসপি। এক সময়কার বিশ্বস্ত সোর্সদের দিয়েই স্ত্রীকে হত্যা করান। ‘কিলিং মিশনে’ নেতৃত্ব দেন বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা। হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন আরেক সোর্স এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া। হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৯ জন জড়িত ছিলেন।

মিতু হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক অভিযোগপত্রটি সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর আদালতে জমা দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমাদের কাছে জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারসহ সাত জনকে আসামি করা হয়েছে।’

পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাইমা হাসান বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আমরা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। মামলায় বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলাটির তদন্তভার পেয়েছিলাম। আড়াই বছরের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদেরকে আসামি করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মামলাটি তদন্ত করেছি। পিবিআই কখনও পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে তদন্ত করে না।’

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- বাবুল আক্তার, মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ওরফে হানিফুল হক প্রকাশ ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া। তবে এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৯ জন জড়িত। তাদের মধ্যে সরাসরি অংশ নেন সাত জন। এর মধ্যে গ্রেফতার নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার জনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। তারা হলেন- কারাগারে থাকা মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও গুইন্না। সাইদুল ও গুইন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাদের নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। নিহত নুরুন্নবী ও রাশেদকে নামও বাদ দেওয়া হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ভোলাইয়া, ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। জানা গেছে, পিবিআইয়ের জমা দেওয়া ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ২১ ধরনের আলামত জমা দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার ৮৪ পাতার কেস ডকেটে আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তে উঠে এসেছে, মিতু হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতা বাবুল আক্তার নিজেই। কিলিং মিশনের প্রধান ছিলেন তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন আরেক সোর্স এহতেশামুল হক। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, শাহজাহান মিয়া, নুরুন্নবী ও রাশেদ।’

তিনি বলেন, ‘তদন্তে উঠে আসে মিতুকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া ছয় জনের মধ্যে তিন জন আগে থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মুসাসহ তিন জন। মোটরসাইকেলের চালকের আসনে ছিলেন মুসা, মাঝে নুরুন্নবী ও পেছনে ছিলেন ওয়াসিম। ওয়াসিমই মিতুকে গুলি করেন। দুটি গুলির মধ্যে একটি মিস ফায়ার হয়। আরেকটি মিতুর শরীরে লাগে। এরপর নুরুন্নবী, রাশেদ ও কালু ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় মিতুর সঙ্গে তার ছেলে আখতার মাহমুদ মাহির ছিল। তাকে ধরে রেখে হত্যার নির্দেশনা দেন মুসা।’

হত্যায় অংশ নেওয়া নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন চার জন। তারা হলেন— বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু। জামিনে আছেন অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক।

এদিকে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত গায়ত্রী অমর সিং নামে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কথা মিতু জেনে যান। এ কারণে বাবুল তার বিশ্বস্ত সোর্সদের দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, ২০১৪-১৫ সালে বাবুল আক্তার মিশনে সুদান যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যান। ওই মোবাইল ফোনে গায়ত্রী ২৯টি মেসেজ পাঠান। মেসেজগুলো দেখে প্রেমের বিষয়ে জানেন মিতু। বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত থাকাকালীন ইউএনএইচসিআর-এর কর্মকর্তা গায়ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এর মধ্যে ‘তালেবান’ ও ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ নামে দুটি বই বাবুলকে উপহার দেন গায়ত্রী। বইগুলোতে বাবুলের সঙ্গে তার সাক্ষাতের তারিখ ও স্থান লেখা ছিল। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাবুল ও গায়ত্রীর প্রথম দেখা হয় বলে বইয়ে লেখা ছিল। মিতু এই ‌সম্পর্কের বিষয়ে জেনে গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বাবুল। নির্যাতনের বিষয়টি নিজের বাবাকেও জানিয়েছিলেন।

এরপর থেকে সংসারে অশান্তি ও কলহ শুরু। একই বাসায় আলাদা কক্ষে বসবাস শুরু করেন। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। বিশ্বস্ত সোর্স মুসাকে ‘কিলিং মিশনের’ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। ব্যবসায়িক বন্ধু সাইফুলের মাধ্যমে মুসার কাছে তিন লাখ টাকা পাঠানো হয়। মুসা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদের নিয়ে মিতুকে হত্যা করেন বলে পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলে মাহিরকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এই ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিতু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন ১২ মে তার মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। একই দিন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। বাবুলকে প্রধান করে এই মামলায় সাত জনকে আসামি করা হয়। পরদিন ১২ মে এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়।’

Tag
আরও খবর