জাগো মুসলমান - আর. এম. কারিমুল্লাহ আমরা খামেনিকে এখনই হত্যা করব না: ট্রাম্প যে কারণে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা জরুরি জানভির মিউ মিউ লুকে লন্ডনের ফ্যাশন সন্ধ্যায় ঝলকানি লাখাইয়ের গোপিনাথ লিবিয়ায় অপহরণের শিকার ; শোনালেন নির্যাতনের কাহিনী শান্তিগঞ্জে জামায়াতের সাংগঠনিক ও বায়তুলমাল পক্ষের প্রস্তুতি সভা ক্ষেতলালে সরকারি পুকুর লীজকে কেন্দ্র করে নারী উদ্যোক্তাকে মারধর কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে দু'জনের মৃত্যু ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল অফেন্সের’ অভিযোগ আসিফ মাহমুদের শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরি, চালকের আসনে বাংলাদেশ তেহরানে দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে: পররাষ্ট্রসচিব সুন্দরবন রক্ষায় কনক্রিট অ্যাকশন প্ল্যান করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৪৪ জন অবশেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো জিল্লুর রহমানকে দিনাজপুরে পুকুরে ডুবে দুই কন্যা শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স১০০ শয্যায় দাবীতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন রাজশাহী কলেজ পাঠকবন্ধুর ঈদ পুনর্মিলনী ও আম উৎসব অনুষ্ঠিত লালপুরে ভেজাল আইসক্রিম তৈরির দায়ে ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দুই মিষ্টি ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম


পৃথিবীর অনেক দেশে নাগলিঙ্গম পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে খুব কম দেখা যায়। দেশে হাতেগোনা কয়েকটি নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ টিকে আছ। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিপন্নপ্রায় বৃক্ষ নাগলিঙ্গম। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর ভবনের পুকুরের পাশে বিশাল নাগলিঙ্গম গাছে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ফুল ফোটে। এ গাছগুলোতে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে পুরো এলাকাবাসিকে সকাল-বিকাল সৌরভে মুগ্ধ করে রাখে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান  থেকে আগত পর্যটকরা চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে অবস্থিত এই নাগলিঙ্গমগাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। আবার কেউ কেউ ক্যামেরাবন্দিও হচ্ছেন গাছের সাথে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, পৃথিবীতে এ গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। নাগলিঙ্গম এক প্রকার বিশাল বৃক্ষ, যার ফুলের নাম নাগলিঙ্গম ফুল। এর ইংরেজি নাম ‘ক্যানন বল’। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো দেখতে কামানের গোলার মতো। বিরল প্রজাতির ফুলটির সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। নাগলিঙ্গম গাছ ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮  থেকে ৩১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বছরের পওায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়। দ্রæত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গমগাছে চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর গাছে ফুল ধরে। গাছের কাÐভেদ করে বেরিয়ে আসে প্রায় ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ অসংখ্য মঞ্জুরি। এক একটি মঞ্জুরিতে ১০-২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জুরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে, অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। ফুলের রঙ অনেকটা লালচে কমলা বা লালচে গোলাপি হয়ে থাকে। ফুলে ৬টি মাংসল পপুরু পাপড়ি থাকে। ফুলের মাঝে থাকে নাগের ফনা আকৃতির পরাগচক্র। ধারণা করা হয়, এর কারণেই এই ফুলের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম।


উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, ‘১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আব্দুুল্লাহ আল হোসেন বিটিআরআই ক্যাম্পাসের পুকুরের দক্ষিণপ্রান্তে এ গাছটির চারা রোপণ করেন। তিন দশকে এটি বিশালাকৃতি ধারণ করেছে। যদিও বছরের মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এ গাছটিতে ফুল ফোটার কথা, কিন্তু বর্তমানে প্রায় সারা বছরজুড়েই গাছটিতে একসঙ্গে ফুল ও ফল দেখা যায়। ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে বাদামি-খয়েরি রঙের গোলাকৃতি ফল হয়। আমাদের দেশে এ গাছটি এখন খুব একটা বেশি নেই। যৎসামান্য গাছ টিকে আছে এদেশে।

প্রতিবেশ-প্রাণবৈচিত্র সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ বলেণ, ‘নাগলিঙ্গম সুউচ্চ চিরসবুজ বৃক্ষ। প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে আমাজানের জঙ্গলে নাগলিঙ্গম গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। এ গাছটি বাংলাদেশে বিপন্নপ্রায়। দেশের প্রাকৃতিক বনে বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে খুব কম সংখ্যক এ গাছটি দেখা যায়। তবে ঢাকাস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বলদা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ঢাকার এরকম জায়গায় প্রাকৃতিক উদ্যানে নাগলিঙ্গম কিছু গাছ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহসহ কিছু প্রাচীন জমিদার বাড়িতে অন্যান্য পুরাতন বাড়িতে এ গাছটি দেখা যায়। এ গাছটি ভেষজ। নাগলিঙ্গম গাছ বেড়ে ওঠার জন্য যে পরিবেশ দরকার আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রাকৃতিক বনে সে পরিবেশ এখন আর নেই। দেশের প্রাকৃতিক বনে সুউচ্চ গাছপালা নেই বললেই চলে। আর পাশাপাশি সুউচ্চ গাছপালা না থাকলে নাগলিঙ্গম গাছ বেড়ে ওঠতে বা টিকে থাকতে পারে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস  থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরী ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। আমেরিকার আমাজান অঞ্চল ও  ভেনিজুয়েলার আদিবাসীরা নাগলিঙ্গম ফলের খোসাকে এক সময় বাসন হিসেবে ব্যবহার করত বলে জানা যায়। এর কাঠ থেকে আসবাবও তৈরি হয়।


আরও খবর