সাতক্ষীরায় ইসলামী হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ৮দিন বয়সী শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সাতক্ষীরায় ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে মধ্যরাতে চিকিৎসারত অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। মৃত ছোট্ট ওই শিশুটির নাম আয়েশা। জন্মের সময়ই মাকে হারায় সে। আয়েশার স্বজনরা জানিয়েছেন, জন্মের সময় মাকে হারালেও আয়েশা স্বভাবিক-সুস্থ্যই ছিলো। জন্মের অষ্টম দিনে এসে তার শরীরের রং স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা হাসাটে মনে হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শিশুটি রক্তশূণ্যতায় ভুগছেন জানিয়ে সে চিকিৎসক তাদেরকে ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল, সাতক্ষীরায় ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
স্থানীয় সেই চিকিৎসকের পরামর্শে গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে শিশু আয়েশাকে ইসলামী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির শারিরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান শিশু আয়েশার তেমন কোন সমস্যা নেই রক্তশূণ্যতার কারণে তার শরীরের রং হাসাটে হয়ে গেছে। হাসপাতালে তিন দিন ভর্তি রেখে রক্ত দিলেই সে আবারও সুস্থ্য হয়ে উঠবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথামতো রক্তের ব্যাবস্থা করা হয় কিন্তু ইসলামী হাসপাতালের কেউ ওই শিশুকে ক্যানোলা পরাতে পারবেনা বলে জানায়। ফলে বাধ্য হয়ে শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে ক্যানোলা পরিয়ে আনা হয়। তারপরও শিশুটির শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার জন্য হাসপাতালের কোন চিকিৎসক বা নার্সরা পাশে আসেনি। শিশু আয়েশার বাবা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সরসকাটি গ্রামের ক্ষেত্রপাড়ার বাসিন্দা আনারুল গাজী বলেন, হাসপাতালের স্টাফরা রক্তের কথা বলার সাথে সাথে আমরা রক্তের ব্যবস্থা করি। তারা সদর হাসপাতাল থেকে ক্যানোলা পরিয়ে আনতে বললে আমরা তাও করি। কিন্তু রক্ত ও ক্যানোলা রেডি করার পরও কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ইসলামী হাসপাতালের কোন চিকিৎসক বা নার্স আমার বাচ্চার পাশে আসেনি। আমি বারবার নিচতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে ছুটে গিয়ে আমার বাচ্চাটাকে দেখার অনুরোধ করেছি তবুও তারা আমার বাচ্চার পাশে আসেনি।
শিশু আয়েশার মামা রাসেল রেজা বলেন, রাত সাড়ে দশটার দিকে যখন আয়েশা ধীরে-ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে তখন আমি চিৎকার করে কান্না করতে থাকি। আমার কান্না শুনে সে সময় হাসপাতালের অন্য রোগী ও রোগীর স্বজনেরা ছুটে আসে। তখন হাসপাতালের স্টাফরা তড়িঘড়ি করে ছুটে এসে আয়েশাকে রক্ত ও অক্সিজেন দিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। ছাড়পত্র দিয়ে বলেন বাচ্চার অবস্থা গুরুতর সাতক্ষীরা মেডিকেলে অথবা খুলনায় নিয়ে যান। ততক্ষণে আয়েশা মারা গেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহেলা করে আমার ছোট্ট আয়েশাকে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দায়িত্বের অবহেলার কারণে বাচ্চার মৃত্যু হয়নি। সদর হাসপাতাল থেকে শিশু আয়শাকে ক্যানোলা পরিয়ে নিয়ে আসার সময় ফাইল সেখানে ফেলে আসে তার স্বজনরা। ফাইল নিয়ে ইসলামিক হাসপাতালে পৌঁছাতে তাদের দেরি হয়ে যায়। সে কারণে শিশুটির শরীরে রক্ত দিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া বাচ্চার শরীরের অবস্থা ভালো ছিলনা বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়েত বলেন, শিশুর মৃত্যু বিষয়টি আমি শুনেছি। এবিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরও আমি সাধারণ ভাবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছি। হাসপাতালের স্টাফদের দায়িত্ব¡ অবহেলার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে কিনা তদন্ত করা হচ্ছে।
১০ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৩ দিন ১৩ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
৪ দিন ১২ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৪ দিন ১৫ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৬ দিন ১২ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
৬ দিন ১৬ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৬ দিন ১৬ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৮ দিন ১২ ঘন্টা ১ মিনিট আগে