রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এসময়ে নিয়মিত জীবনযাপনে আসে পরিবর্তন। সিয়াম সাধনার এ মাসে সুস্থ থাকতে ফলিত পুষ্টির আলোকে সেহরি, ইফতার এবং এর মধ্যবর্তী সময়ে অনুসরণীয় বিষয়গুলো জনসচেতনতার জন্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)।
সেহরিতে করণীয়:
সেহরিতে সামর্থ্য অনুযায়ী আশজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন লাল চাল, লাল আটা, শাক-সবজি, বিচিজাতীয় শস্য-সিমের বিচি, মটরশুঁটি প্রভৃতি।
আঁশজাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়, ফলে ক্ষুধা অনুভব কম হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। সেহরিতে বেশি খাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজি এবং মাছ-মাংস ও অন্যান্য তরকারি গ্রহণ করা উচিত হবে।
প্রতিদিনের আমিষের চাহিদাপূরণে ও দেহের ক্ষয়পূরণে ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া রোজায় পানিশূন্যতা রোধে সহজে হজম হয় এমন শাক-সবজি যেমন লাউ, ঝিঙে, পটোল, চালকুমড়া প্রভৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
সেহেরিতে বর্জনীয়:
সেহরিতে অতিরিক্ত তেল, মসলা ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি প্রভৃতি সেহরিতে না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার হজম করতে দেহে প্রচুর পানি পরিশোষিত হয় যা রোজাদারকে তৃষ্ণার্ত করবে।
এছাড়া সেহরিতে খাবারের পর টক বা মিষ্টি জাতীয় ফল রাখা ভালো। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন তৃষ্ণার সৃষ্টি করে, এসিডিটি উৎপন্ন করে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিশোষণে বাধা দেয়।
ইফতারে করণীয়:
ইফতারে পানীয় হিসেবে ঘরে তৈরি তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের পানি ও লবণের (ইলেক্ট্রোলাইট) ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করবে।
এছাড়াও যে কোনো মিষ্টি ফল যেমন- খেজুর, তরমুজ, কলা প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে। যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পুরণ করতে সহায়তা করবে। পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার ইফতারে রাখা যেতে পারে (সিদ্ধ ছোলা, দই-চিড়া, সবজি বিচুড়ি বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং শসা টমেটোর মিশ্রিত সালাদ প্রভৃতি)।
ইফতারে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। ইফতারে খাবার খেতে হবে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে যা খাবার সহজে হজমে সহায়ক হবে।
ইফতারে বর্জনীয়:
অধিক মসলা এবং কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চললে ইফতার পরবর্তী বদহজম, অস্বস্তি ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। ইফতারে অতিরিক্ত ভাষা, পোড়া বা গ্রিল করা খাবার যেমন মাংসের ফ্রাই, গ্রিল বা শিক কাবাব ইত্যাদি পরিহার করা প্রয়োজন। এসব খাবারে তৈরি হওয়া ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় যেমন- চিপস, জিলাপি, কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস, সিঙ্গারা, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক-পেস্টি, পিৎজা-বার্গারসহ যাবতীয় জাংক ফুড এড়িয়ে চলা ভালো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণে ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ লাখ মানুষ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
ইফতার ও সেহরি মধ্যবর্তী সময়ে করণীয়:
দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতার এবং সেহরির মাঝের সময়ে ২.৫ থেকে ৩ লিটার বা ৬ থেকে ১৪ গ্লাস নিরাপদ পানি পান করতে হবে। রোজায় পর্যায় পানি পান করলে মাথাব্যাথা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও সহায়ক হবে।
রাতের খাবার গ্রহণের পরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়া পরিহার করতে হবে। সেহরি পর্যন্ত রাত জেগে থাকা পরিহার করুন, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
৫ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে