চৌদ্দগ্রাম-লাকসাম সড়কের ফেলনায় ট্রাক-সিএনজি-অটোরিক্সার ত্রিমুখী সংঘর্ষ, স্বামী-স্ত্রী সহ নিহত ৩,আহত ৫
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে ট্রাক-সিএনজি ও অটো-রিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী সহ তিনজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আহতদের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে সোমবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম-লাকসাম আঞ্চলিক সড়কের ফেলনা পশ্চিমপাড়া কাজী বাড়ীর সামনে। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলো: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকারা ইউনিয়নের মহেশ্বর গ্রামের মৃত নূর আহমেদ মুন্সীর ছেলে মো. আবুল বাশার (৫৫), একই গ্রামের আবুল বাশার এর স্ত্রী মুরশিদা বেগম (৪৬) ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পৌরসভাধিন নাটাপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে মমতাজ মিয়া (৩৬)। আহতরা হলেন: নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকারা ইউনিয়নের মহেশ্বর গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে মো. আবু তৈয়ব (৩০), রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের মাহিনী গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪২), যজ্ঞশাল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. কবির হোসেন (৪০), বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের গান্দাছি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমান (২৭), শ্যামপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ব্যাটারী চালিত অটো-রিকশা চালক মাহবুবুল হক (৩০), চৌদ্দগ্রামের ইলিয়াছ সর্দারের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শী, থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকারা ইউনিয়নের মহেশ্বর গ্রামের আবুল বাশার তার স্ত্রী মুরশিদা ও ছেলে আবু তৈয়ব সহ সোমবার বিকাল তিনটায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামে ছেলের জন্য পাত্রি দেখতে আসেন। পাত্রি দেখা শেষে সন্ধ্যায় ফেলনা থেকে সিএনজিযোগে নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে ফেলনা পশ্চিমপাড়া কাজী বাড়ীর সামনে তাদেরকে বহনকৃত সিএনজি অটো-রিকশাটি পৌঁছলে সামনে থাকা অপর একটি ব্যাটারী চালিত অটো-রিকশাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা চৌদ্দগ্রামমুখী দ্রুতগামী একটি ট্রাক (ফেনী ট-১১-০৭৮২) সিএনজি চালিত অটো-রিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এ সময় পেছনে থাকা ব্যাটারী চালিত অটো-রিকশাটিও ট্রাকের সামনে থাকা সিএনজিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় সিএজি চালিত অটো-রিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মুরশিদা বেগম ও মমতাজ মিয়া নিহত হয়। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুতর আহত আবুল বাশারকে মৃত ঘোষনা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিহত আবুল বাশার এর ছেলে আবু তৈয়বকে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
ব্যাটারী চালিত অটো-রিকশা চালক আহত মাহবুবুল হক বলেন, লাকসাম থেকে ছেড়ে আসা চৌদ্দগ্রামমুখী একটি বেপরোয়া গতির ট্রাকের সাথে হঠাৎ করে চৌদ্দগ্রাম থেকে নাঙ্গলকোটগামী সিএনজি অটো-রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজির পিছনে ধাক্কা দেই। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর স্টেশন অফিসার মো. মেহেদী হাসান সুজন জানান, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের সাথে উদ্ধার কার্যক্রমে সহযোগিতা করে। এ ঘটনা তিনজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এর কর্মীরা যায়। এ ঘটনায় এক নারী সহ তিনজন নিহত হয়েছে এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিতের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।