টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাবরেজিস্টার অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন দলিল হয় না। মনপুত ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে জমির দলিল নিবন্ধন ছাড়াই ফিরে আসতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার জেলা রেজিস্ট্রার ও দুদক বরাবরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগি আয়েজ উদ্দিন আজাদ।
জানা যায়, মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন দলিল হয় না। সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ তার অধীনস্ত ভেন্ডার ও নকলনবিসদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। দলিলের সকল কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও প্রতিটি দলিলে নূন্যতম পাঁচ হাজার টাকা বুঝে পাওয়ার পরই তিনি দলিল নিবন্ধন করে থাকেন। যদি কোন কাগজপত্রে ত্রুটি থাকে তাহলে প্রতিটি ত্রুটির জন্য দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। বড় ধরনের সমস্যা মনে করলে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে। অঞ্জনা রাণী দেবনাথ তার চাহিদা মাফিক ঘুষের টাকা না পেলে দলিল নিবন্ধন না করার অভিযোগ জেলা রেজিস্ট্রারও অবহিত আছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঘুষের টাকা না দেওয়ায় দলিল করতে পারেননি এমন ভুক্তভোগি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগি আয়েজ উদ্দিন আজাদ জানান, তিনিসহ অপর সাতজন মিলে মালাউড়ী গ্রামের আব্দুল মজিদের নিকট থেকে ছয় শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নগদ এক লাখ টাকা দিয়ে বায়না করি। আমরা জমি ক্রেতা সাতজন ও বিক্রেতা মধুপুর পৌর এলাকার মালাউড়ী মৌজার জে.এল নম্বর-১৯২, ২২ নম্বর এস.এ খতিয়ান এবং বি.আর.এস ৭০৬ খতিয়ানের ১১৫ নম্বর এসএ দাগের এবং বি.আর.এস ৭৪৩ নম্বর দাগের ২০ শতাংশ থেকে ছয় শতাংশ জমি গত ২৮ সেপ্টেম্বর রোববার দলিল করার জন্য মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসে যাই।
মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন ভেন্ডার মিরাজ আলী ও আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় জমি ক্রয়ের প্রয়োজনীয় সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে দলিল নিবন্ধনের জন্য জমা প্রদান করা হয়। জমি বিক্রেতা বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ্য থাকায় অফিসের দোতলায় উঠতে পারেননি। তাই সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ তার প্রতিনিধি হিসেবে নিচে হুইল চেয়ারে বসা আব্দুল মজিদের সম্মতির নেওয়ার জন্য নকলনবীস জসিম উদ্দিনকে পাঠান। জসিম উদ্দিন দলিল দাতা আব্দুল মজিদের সাথে কথা বলে তার কক্ষে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে ভেন্ডার মিরাজ আলী ও আব্দুস সামাদের মাধ্যমে আমাদের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। ঘুষের এই টাকা দিলেই দলিল হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জানানো হয় জমি ক্রেতাদের মধ্যে একজনের আয়কর সনদ নেই তাই আরও পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।
আয়োজ উদ্দিন আজাদ আরও জানান, আমরা টাকা দিতে অস্বীকার করায় ভেন্ডার মিরাজ আলী বায়নার টাকা ও ব্যাংকের জমা দেওয়া চালানের টাক ফেরৎ দেন। মিরাজ আরও জানান, আমাদের কাছে অন্য ক্রেতা আছে। তিনি ওই টাকা দিয়েই জমি দলিল করে নেবেন। আপনারা ৫৫ হাজার টাকা দিলে দলিল হবে অন্যথায় হবেনা। পরবর্তীতে চার ঘন্টা অপেক্ষার পর আমাদেরকে টাকা ফেরৎ দিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে মধুপুর সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ বলেন, আমি দলিল গ্রহণে কোন প্রকার টাকা নেইনা। যদি কেউ নিয়ে থাকেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। আয়েজ উদ্দিন আজাদের অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, জমিদাতা খুবই বৃদ্ধ। আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে তার দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমি দলিল করার ব্যাপারে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। রোববার অফিস খোলার পর তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৫ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে