শ্রীমঙ্গলে মাদক বিরোধী প্রতিবাদে ভুমিকা পালন করায় মাদক কারবারী কর্তৃক মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মাদক বিরোধী প্রতিবাদ সভায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করায় বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক মাঈনুল মিয়া, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যসহ সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে শহরের সোনার বাংলা রোডের মাদক কারবারি স্বপন মিয়ার স্ত্রী শিল্পী আক্তার এর বিরুদ্ধে।
সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের ভানুগাছ রোডস্থ টি ভ্যালি পার্টি সেন্টারে সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শহরের কালীঘাট রোডের বাসিন্দা আব্দুস সালামের পুত্র মোঃ ইমদাদুল হক এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আকাশ।
লিখিত বক্তব্যে মোঃ ইমদাদুল হক দাবি করেন, গত ২৪ আগস্ট রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় আমার ভাতিজা সজিব মিয়া (১৬) বাজার থেকে আমাদের নিজ বাড়িতে আসার পথে শহরের সোনার বাংলা রোড এলাকায় (নতুন বাজার দক্ষিণ রোড) শ্রীমঙ্গলের কুখ্যাত মাদক কারবারী স্বপন মিয় (৪০) ও তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার (২৯) আমার ভাতিজা সজিব মিয়ার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় তাদের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আমার ভাতিজা সজিব মিয়া গুরুতর আহত হয়। হামলার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে স্বপন ও তার স্ত্রী শিল্পী কিভাবে সজিবকে বিনা কারনে ধাওয়া করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। আমার আহত ভাতিজার চিকিৎসা শেষে আমি বাদি হয়ে গত ২৬ আগস্ট বিষয়টি নিয়ে শ্রীঙ্গল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। একই দিনে রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখল করে মাদক ও পতিতা ব্যবসা বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণের গণস্বাক্ষরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার প্রশাসক, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। ওই ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমার অভিযোগটি এজহার হিসেবে গ্রহণ করতে তদন্তের নামে সময় ক্ষেপন করেন। ২৭ আগস্ট রাতে নতুনবাজার দক্ষিণ রোড এলাকায় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে সজিব মিয়াকে আহতের ঘটনায় জড়িত মাদক সম্রাট স্বপন মিয়া ও তার স্ত্রী শিল্পীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিবাদ সমাবেশে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ, নতুন বাজার দক্ষিণ রোড তথা সোনার বাংলা রোডের ব্যবসাযীবৃন্দসহ কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরো দাবি করে বলেন, ২৬ আগস্ট আমার দেওয়া অভিযোগ এজহার হিসেবে গণ্য না করে সময় ক্ষেপনের মাঝে গত ৩১ আগস্ট স্বপন মিয়ার স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে আমার ভাতিজাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার মূল ঘটনাকে উল্টো ঘুরিয়ে তার উপর হামলা হয়েছে দাবি করে ৭জনের নাম উল্লেখপূর্বক মামলা দায়ের করে আরও ৫০-৬০ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২নং আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় গত ২৭ আগস্ট তারিখের প্রতিবাদ সভায় ভুমিকা পালনকারী শ্রীমঙ্গল বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক মাঈনুল মিয়া, শ্রীমঙ্গল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য আক্তার মিয়া, তার ভাই শাহিন মিয়া, বোনের জামাই সৌরভ মিয়া, সোহান মিয়া, সাগর মিয়া, মারুফ মিয়াকে। একই পরিবারের তিন সদস্যের সাথে আমার ২৬ আগস্ট থানায় দাখিলকৃত অভিযোগের মূল স্বাক্ষী সোহান মিয়া ও সৌরভ মিয়াকে ওই মামলায় আসামি করা হয়। আদালত থেকে ওই মামলার কপি শ্রীমঙ্গল থানায় আসার পর আশ্চর্যজনক হলেও সত্য আমার মামলাটি রেকর্ড হতে ১৩ দিন সময় ক্ষেপন করা হয়। মাঈনুল মিয়া গংদের বিরুদ্ধে আদালতে যে মামলাটি করা হয় সে মামলায় বাদি শিল্পী বিভিন্ন বানোয়াট অভিযোগ তুলে নিম্নলিখিত দ্বারা গুলোর অভিযোগ এনে বিজ্ঞ আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আনিত ধারাগুলো নিম্নরূপ-সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২নং আমলী আদালত মৌলভীবাজারে সিআর মামলা নং-৫৩৪/২০২৫ইং (শ্রীঃ), ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৮৫/৪২৭/৩৮০/৩৫৪/১০৯ দন্ডবিধি মূলে এক মামলা দায়ের করেন।
এসময় স্বপন মিয়া ও শিল্পীর দায়েকৃত মামলার দুই নারী সাক্ষী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বানোয়াট মামলা সম্পর্কে আমরা কিছু জানিনা। সাক্ষীগণ জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার নোটারী পাবলিকের মাধ্যম একটি এফিডেভিট করেছি যার নং-৫৭৪।
এফিডেভিটে তারা উল্লেখ করেন, আমাদেরকে যে বিষয়ে সাক্ষী দেওয়া হয়েছে আমরা সে বিষয়ে কিছু জানিনা এবং এ ঘটনা মিথ্যা। অহেতুক আমরা হলফকারীগণকে অত্র মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে গণ্য করিয়া হয়রানী ও বিভ্রান্ত করিতেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইমদাদুল হক আরো জানান, আমার ভাতিজা সজিব মিয়াকে প্রাণ হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে গুরুতর জখম করার ঘটনা (যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়) আড়াল করতে বা ওই ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে এই মিথ্যা মামলার অবতারণা করা হয়েছে। আমি এই মিথ্যা মামলা বাতিল ও আমার ভাতিজার সজিবের উপর হামলার ঘটনায় মাদক সম্রাট স্বপন ও তার স্ত্রী শিল্পী আক্তারের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ১২২৩ এর সাধারণ সম্পাদক মো. মিছির আলি, মোঃ মনিরুল ইসলাম সাংগঠনিক, শ্রীমঙ্গল শমশেরনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ তসলিম, শ্রীমঙ্গল বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অজয় দেব, সহ-সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেন, সহ যুগ্ম সম্পাদক মোঃ মামুন মিয় প্রমুখ।
এব্যাপারে অভিযুক্ত শিল্পী ও স্বপনের সাথে তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাড়া মেলেনি। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষের মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। কোর্টের কাগজ পেয়ে আমি শিল্পি আক্তারের মামলা গ্রহণ করেছি। তদন্তের পর বুঝা যাবে মামলার সত্য-মিথ্যা।