প্রকাশের সময়: 04-06-2025 02:14:38 pm
মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আধিপত্য, চলছে অশ্লীল ও অসামাজিক কার্যক্রম
মো.জাহিদ হোসেন, মাভাবিপ্রবি :
টাংগাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ঈদের বন্ধের ফাঁকা সময়ে বাড়ছে বহিরাগতদের আড্ডা, মাদকসেবন, নিয়ন্ত্রিত বাইক চালানো, ছেলে-মেয়েদের অশ্লীল ও অসামাজিক কার্যকলাপ এবং দৃষ্টিকটূ টিকটক ভিডিও। এতে করে দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ঝুঁকি, বাড়ছে চুরির শংকা, বাড়ছে উদ্বেগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম গেট দিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশ করছে বহিরাগতদের বাইক, ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রেস। এছাড়া হাতির কবর, বিজয় অঙ্গণ, পুরাতন ছাত্রলীগের অফিস, শহিদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর, ক্যাফেটেরিয়া, প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন এলাকা, ১ম একাডেমিক ভবনের রাস্তাসহ বিভিন্ন আনাচে-কানাচে চলছে অবৈধ কার্যক্রম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ড ও মুক্তমঞ্চের পিছনে বেড়েছে প্রকাশ্যে মাদক সেবন। ছেলেদের আবাসিক হলের আশে-পাশে চলছে ছেলে-মেয়েদের অশ্লীল টিকটক ভিডিও।
এরকম পরিস্থতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও উঠছে নানান প্রশ্ন।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল হাসান সোহাগ বলেব, "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং প্রশাসন একত্রে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ক্যাম্পাস ছুটির দিনে বা দীর্ঘ বন্ধের সময় ফাঁকা পড়ে থাকে, আর সেই সুযোগে সেখানে ঢুকে পড়ছে বহিরাগতরা। এই বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণহীন বিচরণ এখন এক ভয়াবহ সামাজিক সংকটে রূপ নিচ্ছে। ফাঁকা ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনায় বাড়ছে অশ্লীলতা, মাদক সেবন, জুয়া, কিংবা অবৈধ সমাবেশ। ক্যাম্পাসের গাছপালা, পেছনের মাঠ কিংবা নির্জন ভবনচত্বর ব্যবহার করা হচ্ছে অসামাজিক কার্যকলাপে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।"
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান রাব্বি বলেন, "ক্যাম্পাস এখন এমন ফাঁকা, মনে হয় যেন ছাত্রদের নয়, বহিরাগতদের জন্যই বানানো হয়েছে! আর আমরা ভাবছি এটা কি বিশ্ববিদ্যালয়, না যেন টিকটক স্টুডিও! অশ্লীলতার উৎসব চলতেছে, আর নিরাপত্তা? সেইটা তো গেটেই দাঁড়ায়নি এখনো। প্রশাসন আছেন ঠিকই, কিন্তু কাজকর্মে যেন ইনভিজিবল মোডে! এখনই যদি ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণে আসা না যায়, তাহলে 'প্রবেশ নিষেধ' সাইনটা ছাত্রদের জন্যই বসাতে হবে!”
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাকিব বলেন, "ঈদের ছুটিতে যখন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে, তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে পড়েছে প্রায় জনশূন্য। এই সুযোগে বহিরাগতরা মটরবাইক নিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে, উচ্চ শব্দে বাইক চালানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘোরাফেরা এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ড একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছুটির সময় বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেখানে আমাদের প্রশাসনের নজরদারির অভাব স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হলো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুস্থ, নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা। এই অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিকেও বড় হুমকি তৈরি করে।"
এফটিএনএস বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সমাপ্তি খান জানান, "ঈদের এই ছুটিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে গেছে, ফাঁকা ক্যাম্পাসে যে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে, অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা নিরাপত্তাহীন অবস্থা তৈরি হচ্ছে। ক্যাম্পােসর প্রতিটা গেটে নিরাপত্তা কর্মী থাকা সত্বেও ক্যাম্পাসের ভিতরে বহিরাগতদের অবাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা প্রসাশনের দুর্বলতা। প্রশাসনের প্রতি আহবান থাকবে, তারা যেনো অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে এবং ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনে।"
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন জানান, "আমরা দিনে কয়েকবার টহল দিচ্ছি। অপ্রীতিকর কোন বিষয় আমাদের নজরে আসলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা শাখার সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। শিক্ষার্থীদেরও এই বিষয়ে সহয়তা করতে হবে প্রশাসনকে।"
নিরাপত্তার ঘাটতি বা দায়িত্বের কোন অবহেলা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, "আমাদের দায়িত্ব পালনে কোন অবহেলা নেই। ১ম গেট থেকে বাইকগুলো জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। আমাদের পর্যাপ্ত আনসার সদস্য না থাকায় আমরা কিছু জায়গায় তাদের নিয়োজিত করতে পারছি না। আমাদের ৮জন আনসার সদস্য একসময়ে দায়িত্ব পালন করলে সেন্ট্রাল ফিল্ডে একজনকে নিয়োজিত করতে পারবো। আর অসামাজিক কোন কার্যকলাপ আমাদের চোখে পড়লে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক শ্রেণি ও সচেতন মহল।
৫ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে