২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে দু'জনের মৃত্যু ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল অফেন্সের’ অভিযোগ আসিফ মাহমুদের শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরি, চালকের আসনে বাংলাদেশ তেহরানে দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে: পররাষ্ট্রসচিব সুন্দরবন রক্ষায় কনক্রিট অ্যাকশন প্ল্যান করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৪৪ জন অবশেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো জিল্লুর রহমানকে দিনাজপুরে পুকুরে ডুবে দুই কন্যা শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স১০০ শয্যায় দাবীতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন রাজশাহী কলেজ পাঠকবন্ধুর ঈদ পুনর্মিলনী ও আম উৎসব অনুষ্ঠিত লালপুরে ভেজাল আইসক্রিম তৈরির দায়ে ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দুই মিষ্টি ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা শিক্ষার্থীদের ঈদুল আজহা আনন্দের স্মৃতিচারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মাউশির জরুরি নির্দেশনা আদমদীঘিতে যাত্রীবাহী বাস থেকে দুই কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেপ্তার আদমদীঘিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঈদ পূর্ণমিলনী ও জন সমাবেশ শ্যামনগরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরীর অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা গলাচিপায়-অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ নগদ অর্থ বিতরণ। সুন্দরবনের ৬০০ হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার ব্রহ্মরাজপুর বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে সরকারী জমিতে অবৈধভাবে আরসিসি পিলার নির্মাণ করে ছাদ ঢালাইয়ের অভিযোগ

ক্রেতার অপেক্ষায় চকবাজারের প্লাস্টিক-ইমিটেশন ব্যবসায়ীরা

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 18-04-2022 05:00:59 am

‘করোনার আগে প্রতি বছর রমজানে চকবাজারে অলংকার, চুড়ি, ব্যাগ, ক্লিপসহ প্লাস্টিক পণ্যের দোকানগুলোতে ভালো বেচাকেনা হতো। কিন্তু এখন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে চকবাজার। দোকানপাটে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। দিনভর অলস সময় কাটান ব্যবসায়ীরা। ফলে জৌলুস হারিয়েছে চকবাজার।’


রোববার (১৭ এপ্রিল) আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার চক সার্কুলার রোডের গরিবউল্লাহ জুয়েলারির ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুরান ঢাকার চকবাজারে বেচাকেনা নেই। সব ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। টানা দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মার্কেটে ক্রেতা নেই। ঈদ ঘনিয়ে এলেও লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ পণ্যও বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজি হারিয়ে সব ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হবে। এখন মানুষের আয়ের চেয়ে সংসার খরচ বেড়ে গেছে। অনেকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে প্লাস্টিকের পণ্য এখন বিলাসিতাই।


পুরান ঢাকার চকবাজার ইমিটেশন অলংকার, মেহেদি, চুড়ি, ব্যাগ, তালা-চাবি, টুথব্রাশ, সাবান, শ্যাম্পু, প্লাস্টিকের খেলনা তীর-ধনুক ও পিস্তল, রাবারের ক্রিকেট বল, রঙিন চশমা, জুতা, ফিতা ও অন্যান্য ছোট প্লাস্টিক পণ্যের কেনাবেচার জন্য সারাদেশে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চকবাজারে এ ধরনের জিনিসপত্র কিনতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের দোকানিরাও এ বাজার থেকে পণ্য কিনেন।


চকবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখে গ্রামগঞ্জে জমে ওঠবে বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় চকবাজারের হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। কিন্তু এবার বৈশাখ ও রমজান মাসে একসঙ্গে পড়েছে। তাই দেশের অনেক এলাকায় বৈশাখী মেলা বসেনি। এ ছাড়া খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বিলাসিতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে চকবাজারের বেচাকেনায়। তাই দেশের সামগ্রী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না চকবাজারের ব্যবসায়ীরা।


ঊর্দু রোড দিয়ে চবাজারে ঢুকতেই হাতে ডান পাশে প্লাস্টিক পণ্যের দোকান তামান্না ট্রেডার্স। প্রায় ২০০ বর্গ ফুট আয়তনের এ দোকানে নারীদের জন্য হরেক রকম ক্লিপ পসরা সাজানো। কিন্তু দোকানটিতে পাইকারি ক্রেতার দেখা নেই। ফলে দোকানের আটজন কর্মচারীকে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।


তামান্না ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. রিহান বলেন, তাদের এ দোকানের সব ক্লিপ চীন থেকে আমদানি করা। পণ্যের গুণগত মান অনেক ভালো। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, বেচাবিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ বের করেছেন তারা। এর মধ্যে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব বেশি পড়ছে বলে মনে করেন রিহান।


তামান্ন ট্রেডার্সে ঘুরে পণ্য দেখছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. হাসান। দরদাম করে ১৫ হাজার টাকার পণ্য কিনেন তিনি। আলাপকালে মো. হাসান বলেন, করোনার আগে ঈদুল ফিতরের সময় একসঙ্গে লাখ টাকার পণ্য কিনতাম। কিন্তু এখন গ্রামের বাজারগুলোতেও বেচাকেনা কম। নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা কমে গেছে। ফলে অল্প করে কিনেছেন।


চক সাকুলার রোডের আজমীর সুপার মার্কেটের ইমিটেশনের অন্যতম বড় দোকান মাইমুন জুয়েলারি। কিন্তু রোববার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ দোকানে মাত্র ২৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। আলাপকালে দোকানটির স্বত্বাধিকারী দোলোয়ার হোসেন বলেন, তার দোকানের অধিকাংশ পাইকারি ক্রেতা ঢাকার বাইরের। ঢাকার আশপাশেরও কিছু দোকানি পণ্য কেনেন। কিন্তু এবার ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। দিনে দুই-চারজন এলেও পণ্য কম কিনছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে তাদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকা সংসারে খরচ করে ফেলেছেন। গ্রামেও ব্যবসা ভালো জমছে না।


আজমীর সুপার মার্কেটে ইমিটেশনের পণ্য কিনে বের হচ্ছিলেন সাভারের দোকানি মিনহাজ ইসলাম। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। তাই বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইমিটেশনের চাহিদা কিছুটা বাড়ছে। এর মধ্যে নারীদের গলার হার, চেইন ও নেকলেসের চাহিদা বেশি। দরদাম করে অনেকগুলো হার কিনেছি।


প্লাস্টিকের হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে ইকবাল ট্রেডার্স। এ দোকানের মালিক আকরাম তালুকদার বলেন, তার দোকানের সবপণ্যই দেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি। করোনার কারণে এসব পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এবার তেমন নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা এলেও বেচাকেনা কম।


চক সার্কুলার রোডের আধুনিক বড় মার্কেট মদিনা আশিক টাওয়ার। ১০তলা এ মার্কেটের পুরোটাতে হরেক রকম ইমিটেশন, কসমেটিকস, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের দোকান রয়েছে। নিচ তলায় ইনহা কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী আরিফ হোসেন বলেন, চকবাজারের কসমেটিকসের মান নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও তাদের দোকানে দেশীয় কোনো কসমেটিকস নেই। যথাযথভাবে ভারত, থাইল্যান্ড থেকে সাবান, তেল, শ্যাম্পুসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা। তবে মার্কেটে ক্রেতার কম বলে তিনিও হতাশ প্রকাশ করেন।


চকবাজার শাহী মসজিদের উল্টো পাশে বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির ১ নম্বর গলি। এ গলিতে শিশুদের খেলনার শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। সেখানে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা বেশি। তারা দরদাম করে কেনাকাটা করছেন। তার পাশেই ফ্রেন্ডশিপ মার্কেট। এ মার্কেটের নিচ তলায় শতাধিক খেলনার দোকান। সেখানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।


বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির ১ নম্বর গলির দোকানি কামাল হোসেন বলেন, তার দোকানে প্লাস্টিকের পুতুলসহ হরেক রকমের খেলনা রয়েছে। এসব খেলনার ৭০ শতাংশই আমদানি করা। সারা বছরই খেলনার চাহিদা থাকে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। আশা করি, ব্যবসা ভালোই হবে।


ফ্রেন্ডশিপ মার্কেট থেকে প্লাস্টিকের গাড়ি, হেলিকপ্টার, রাইফেল, ওয়াটার গানসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনেছেন শরিয়তপুরের ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, গ্রামে তথা জেলা এবং উপজেলায় প্লাস্টিকের এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আশা করি, বেচাবিক্রি ভালোই হবে।


চক সার্কুলার রোডে শাহী মসজিদের সামনে চকবাজার বণিক সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেনর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, চকবাজারকে কেন্দ্র করে আশপাশে ২৫ থেকে ২৩টি মার্কেটে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দোকানপাটে কেনাকাটা নেই। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। এ পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য শুভ নয়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।

আরও খবর