ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা বন্ধে উৎপাদন ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করা হবে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে চিংড়ি চাষে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা লালপুরে বিএডিসির সেচ প্রকল্পে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের।। ঝিনাইগাতীতে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঝিনাইগাতীতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত শুধু পাঠদান নয়, তাদেরকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে হবে--এ্যাডঃ আসলাম মিয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেছে বাকৃবি শিক্ষাথীরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিভাগীয় শিক্ষার্থী সমিতির নেতৃত্বে লিমন-সৌরভ সাতক্ষীরায় মান্দারবাড়িয়া চরে বিএসএফ কর্তৃক পুশ ইন ৭৮ জন, উদ্ধার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর জবিতে সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ নোয়াখালীতে ১৩ মামলার আসামি যুবলীগ কর্মিকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ২ অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে জাবি ছাত্রদল নেতা হিরন বুধবার চট্টগ্রাম আসছেন প্রধান উপদেষ্টা সুন্দরবনের চরে পুশইন ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর, তিনজন কারাগারে ১১ মাস বয়সী শিশুর করুণ মৃত্যু: বালতির পানিতে পড়ে প্রাণ গেল মরিয়মের চকরিয়ায় চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু আন্দোলনের নামে জবির মেডিক্যাল দখল শিক্ষার্থীদের শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ভারতীয় মদ উদ্ধার, পিকআপ আটক অনশনের ১৮ ঘন্টায়ও নেই প্রশাসনের সাড়া,অসুস্থ একাধিক শিক্ষার্থী নতুন বাজেটে বাস্তবভিত্তিক এডিপি গ্রহণ করা হবে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

তিনটি ঘটনা আমাকে চিরস্থায়ীভাবে সংসারবিমুখ করেছিল - হেলাল হাফিজ

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 14-10-2022 08:55:11 am

সংগৃহীত ছবি


সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক


৭২ বছরের জীবন পেলাম। সময়টা নেহাত কম নয়। দীর্ঘই বলা যায়। এই দীর্ঘ জীবনের পেছনে ফিরে তাকালে তিনটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। তিনটি ঘটনাই আমার জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। আমি সফল নাকি ব্যর্থ, হিসাব কষতে বসলেও ওই তিনটি ঘটনা অবধারিতভাবে সামনে চলে আসে। আজ আমার যতটুকু সফলতা, সেই তিনটি ঘটনা তার পেছনে দায়ী। আবার আমার যতটা ব্যর্থতা, তার পেছনেও আছে ওই তিন ঘটনা।


প্রথম ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) থাকি। ওই দিন সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের দিকে আড্ডা দিয়ে রাতে হলে ফিরেছি। ক্যানটিন বন্ধ। খেতে গেলাম মেডিকেল গেটের কাছে পপুলার নামের একটা রেস্টুরেন্টে। খাওয়া শেষে মনে হলো, ফজলুল হক হলে বন্ধু হাবিবুল্লাহ থাকে, ওর সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। গেলাম ফজলুল হক হলে। হাবিবুল্লাহর কক্ষে গিয়ে আমি আড্ডা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর, রাত তখন পৌনে ১০টা হবে, হঠাৎ গোলাগুলির বিকট আওয়াজ। আমরা হলের ছাদে উঠে দেখলাম, নীলক্ষেত, নিউমার্কেটের দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।


২৭ মার্চ সকালে ইকবাল হলে গিয়ে দেখি, মাঠের মাঝখানে, এখানে-ওখানে শুধু লাশ আর লাশ। নিজের কক্ষে গিয়ে স্যুটকেস গুছিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম। এখান থেকে পালাতে হবে, না হলে বাঁচা সম্ভব নয়। হলের গেটে এসে দেখি নির্মলেন্দু গুণ দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, ‘আমি ভেবেছি তুমি মারা গেছো, তোমার লাশ নিতে এসেছি।’ বলেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আমিও সজোরে কাঁদতে লাগলাম। তারপর সেখান থেকে আমার বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উঠলাম।



ছবি: কবি হেলাল হাফিজ


এই ঘটনা আমার হৃদয়ে ব্যাপকভাবে ছাপ ফেলল। আমার তখন কেবলই মনে হতো, ওই রাতে যদি আমি ফজলুল হক হলে না গিয়ে নিজের হলে ফিরতাম, তাহলে তো বাঁচতাম না। একটা বোনাস জীবন পেয়েছি—এই উপলব্ধি আমার ভেতর বিরাট বৈরাগ্য এনে দিল। এক ধরনের সন্ন্যাস জীবনযাপন শুরু করলাম আমি।


এর পরের ঘটনা ’৭৩ সালের জুনের। ১৯ জুন আমার পিতার মৃত্যু হলো। তিন বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পর আব্বাই ছিলেন আমার সবকিছু। তাঁর মৃত্যু প্রবলভাবে ধাক্কা দিল আমাকে। মনে হলো, জগৎসংসার তুচ্ছ। সব অর্থহীন। আমার বৈরাগ্য আরও প্রগাঢ় হলো।


আব্বার মৃত্যুর মাসখানেক পরই ঘটল তৃতীয় ঘটনা। ঘটনা ঘটাল হেলেন, আমার প্রেমিকা। হেলেন হঠাৎ ডেকে বলল, ‘কবি, তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।’ আমরা গিয়ে বসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে। সে বলল, ‘আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।’


ছোটবেলা থেকে আমি খুব সহনশীল ছিলাম। প্রচণ্ড সহ্যশক্তি আমার। তাই ভেতরের ঝড় বুঝতে দিলাম না হেলেনকে। ওখান থেকে উঠে রিকশা নিয়ে সোজা হলে চলে গেলাম। ওটাই হেলেনের সঙ্গে আমার শেষ দেখা ও শেষ কথা।


এই তিনটি ঘটনা আমাকে চিরস্থায়ীভাবে সংসারবিমুখ করে ফেলল। আমার আর ঘর হলো না, সংসার হলো না, অর্থকড়ি হলো না, প্রতিষ্ঠা হলো না।


এখন জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন কেবলই আমার মনে হয়, জীবনের সময়গুলো বৃথাই অপচয় করেছি। কত সুন্দর সুন্দর কবিতার পঙ্ক্তি এসেছে মাথায়, আমি টেবিলে বসিনি, লিখিনি। জীবনটা অপচয়ই করেছি বলা যায়। এ জন্য আমি এখন ভীষণভাবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এই দীর্ঘ জীবনে যাঁরা আমাকে ভালোবেসেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আর যাঁরা আমাকে ভালোবাসেননি, তাঁদের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞতা। কারণ তাঁদের অবহেলা, অনাদর, প্রত্যাখ্যান আর ঘৃণাই আমাকে কবি বানিয়েছে।

আরও খবর