|
Date: 2023-02-20 15:39:51 |
◾মোছা. রহিমা খাতুন
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি!'
চেতনার এ বাণীটুকু মনকে রাঙিয়ে যায়। হঠাৎ উষ্ণ এক অনুভূতিতে শ্রদ্ধার আমেজে নত হয়ে আসে আত্না। ঠিকই তো! আমরা কি ভুলিতে পারি! পারি নি। তাদের এ আত্মত্যাগে বাংলা আজ বিশ্বের অন্যতম স্বতন্ত্র ভাষা। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালিরাই প্রথম ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তাই তো আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পরিচিত হয়েছে অতি অল্পসময়ের মধ্যেই।
বাঙ্গালি জাতির গৌরবময় আন্দোলনের মধ্যে ভাষা আন্দোলন অন্যতম। শহীদদেইতর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা রূপে।পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও ইতিহাস পাওয়া যাবে না।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। মহান ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি বাতিল করাতে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম ঢাকায় আন্দোলন শুরু হয়।আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামের পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে একটি পুস্তিকা বের করা হয়। যার নাম ছিল " রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাব টাইটেল ছিল কি এবং কেন?" লেখক ছিলেন আনিসুজ্জামান। যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।
ভাষা আন্দোলন মানেই চোখের সামনে ভাসে ভাষা শহিদদের মুখ। আন্দোলনে প্রথম ভাষা শহীদ ছিলেন রফিক উদ্দিন আহমেদ। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা জারি ভেঙে দিতে ছাত্র জনতার মিছিলে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর হোস্টেল প্রাঙ্গনের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ এর ছাত্র।
২১ শে ফেব্রুয়ারি মানেই আমরা গান শুনি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি - আমি কি ভুলিতে পারি?’ - যার রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী। ইনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখেছেন জহির রায়হান। ভাষা আন্দোলনেও তার অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। ১৪৪ ধারা জারি করায় প্রথম যে ১০ জন মিছিল বের করে তার মধ্যে তিনিও ছিলেন। ভাষা আন্দোলন এর উপর ভিত্তি করে দুইটা রচনা লিখেছেন। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও ‘আরেক ফাল্গুন’। জহির রায়হান ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
১৯৫২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় তাকে কারাবরণ করতে হয়। তার নাম শফিউদ্দিন আহমেদ।
নুরু মোল্লা ১৯৫২ সালে জাগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে ‘সর্বদলীয় সেন্টাল কমিটি অব একশন’ নামে যে কমিটি গঠন করা হয় সেখানে তিনি একজন সদস্য ছিলেন।
দেখা যায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ( তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) শিক্ষার্থীদের অবদান অসামান্য। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তারা ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেছে। শুধু শ্রম নয় মেধা দিয়েও বটে। যার ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে।
১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথিবীর বুকে আজ আমরা অনন্য আমাদের বাংলা ভাষার জন্য। যার প্রশংসনীয় অবদান রাখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
লেখক.....
মোছা. রহিমা খাতুন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ(জ.বি)
© Deshchitro 2024