অর্থিক অনটনের কারণে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিলেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বিহারপুর নয়াপাড়ার দিনমজুর নুর ইসলামের পরিবার ও রাজকান্দা ময়েনপাড়ার ৭৮ বছরের বৃদ্ধ ইদ্রিস আলীর পরিবার। বিষয়টি নজরে আসে ওই ওয়ার্ডের বাসীন্দা আক্কেলপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন আহব্বায়ক জহুরুল ইসলামের। এর পরেই তিনি ওই দুই ব্যক্তির বাড়িতে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করে দেন। এখন দুটি বাড়িতেই জ¦লছে বিদ্যুতের আলো। জানা গেছে, দিনমজুর নুর ইসলাম নয়াপাড়ায় অন্যের জায়গায় টিনের একটি মাত্র খুপরি ঘরে স্ত্রী, পঙ্গু ছেলে, পুত্রবধূ ও দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে বাস করতেন। আধুনিকতার আলো যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন তাদের ঘর অন্ধকারেই ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাত নামলেই ডুবে যেত নিস্তব্ধ অন্ধকারে। অপরদিকে, ময়েনপাড়ার ৭৮ বছরের বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী বুদার অবস্থাও ভিন্ন ছিল না। গ্রামের অন্য ঘরে ২৬ বছর আগে বিদ্যুৎ এলেও তিনি পাননি সংযোগ। কারণ বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না তার। স্ত্রীকে নিয়ে জীর্ণ মাটির ঘরে কুপিবাতির ধোঁয়া সহ্য করে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো। খড়ি কেটে বাজারে বিক্রি করে কোনোমতে চালাতেন সংসার। কিন্তু তাদের সেই অন্ধকার ভেদ করে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছন রাজকান্দা গ্রামের বাসীন্দা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন আহব্বায়ক জহুরুল ইসলাম। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুই পরিবারের ঘরে অবশেষে গত ৪ দিন ধরে জ¦লে উঠেছে বহু প্রতীক্ষিত বিদ্যুতের বাতি, যা শুধু ঘর নয়, আলোকিত করেছে তাদের জীবনও। চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে নিজ ভাষায় নুর ইসলাম বলেন, অভাবের সংসারে কারেন্ট লিমু কিভাবে। ছেলের চিকিৎসায় সব ট্যাকা শ্যাষ। হামার কষ্ট দেখে জহুরুল ভাই ২৫০০ টাকা খরচ করে মোর ঘরত কারেন্ট লিয়ে দিসে। মোর ঘর আজক্যা আলোতে ফকফকা হছে। বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী বলেন, এখন বয়স হইছে। চোখে কম দেখি। ল্যাম্প জ্বালাইলে ধোঁয়া আর কালি উঠে চোখে মুখে লাগে। অন্ধকারে বসে আকাশের দিকে তাকাইয়া ভাবতাম আর ভাবতাম কবে আলো আসবে ঘরে। আল্লাহ হামাক দেখছে। জহুরুল ভাই নিজের ট্যাকা দিয়া কারেন্ট এনে দিছে। মুই খুব খুশি। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, একদিন বাজারে ইদ্রিস আলী বুদা চাচা কেরোসিন তেলের টাকা চাইছিলেন। তেল কিনে দিয়ে জানলাম তার ঘরে নাকি বিদ্যুৎ নেই। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি নুর ইসলামের ঘরেও একই অবস্থা। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, নিজ খরচে তাদের ঘরে বিদ্যুৎ দেব। সেই থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেই। পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বাদশা বলেন, বিগত সরকার দুই পরিবারকে বঞ্চিত রেখে এ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করেছে। এটা হতাশাজনক। তারা দরিদ্র বলে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারবে না, এই অজুহাতে বছরের পর বছর অন্ধকারে রেখেছে তাদের। স্থানীয় জহুরুল ইসলাম এগিয়ে এসে যে মানবিক কাজটি করেছেন এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুর রহমান বলেন, স্থানীয় জহুরুল ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরে ওই দুইটি পরিবারে নাম মাত্র ফি নিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর কেউ যেন বিদ্যুৎ সেবার বাহিরে না থাকে আমরা সেই লক্ষে কাজ করছি।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024