লাখাইয়ের হাট-বাজারে সুদের ব্যবসা, জিম্মি করে সুদ আদায়, নিঃস্ব নিম্ন আয়ের মানুষ । লাখাইয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ঋণ নিয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করতে করতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে খালি স্টামে স্বাক্ষর নিয়ে জিম্মি করে সুদ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাখাইয়ের বিভিন্ন হাট বাজারের চায়ের স্টলে চলছে এই সুদের ব্যবসা । সেখানে দিনভিত্তিক সুদের কারবারও হয়। কারও কাছ থেকে এক দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা নিলে পরের দিনই ১ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। আর হাজারে সাপ্তাহিক ২০০ টাকার সুদ ওই এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে। আর এই উচ্চ হারের সুদে টাকা ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। লাখাইয়ের পুর্ববুল্লার বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, এই সুদের ব্যবসা চায়ের স্টলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সুদের ব্যবসা করেন। নারীরাই নানা কৌশলে সুদের টাকা দেন। আবার নারীরাই ঋণ নেন। কারও পাঁচ-দশ হাজার টাকা থাকলেই সুদের ব্যবসা শুরু করেন। ঋণগ্রহীতা আসমা আক্তার অভিযোগ করেছেন, তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন হলে আমি বুল্লাবাজারের কয়েকজন যুবকের সমিতি থেকে সাপ্তাহিক সুদ প্রতি হাজারে ২০০ টাকা দেওয়ার চুক্তি করি। ঋণ নেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে খালি স্টামে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরের সপ্তাহ থেকে সুদ পরিশোধ শুরু করি। কিন্তু আসল টাকা পরিশোধ করতে চাইলে সংগঠনের সদস্যরা নিতে নারাজ। সুদের টাকা জমা দেওয়ার কোনো কাগজপত্রও দেন না। এভাবে নানা কৌশলে আমি গত কয়েক মাসে ৪০ হাজার টাকা ঋণের বিপরীতে লাখ টাকা পর্যন্ত সুদ দিয়াছি। কিন্তু আসল আর শেষ হয় না। মামলার ভয় দেখিয়ে এই টাকা নিতেই থাকেন তারা। নাম বলতে অনিচ্ছুক আরেক নারী বলেন, তিনি বিপদে পড়ে ৬ মাস আগে চায়ের স্টলে বসে থাকা এক লোকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সে সময় তার কাছ থেকে স্বাক্ষর করা খালি স্টাম এবং ব্যাংক চেক নেন। পরের সপ্তাহ থেকে তাকে সুদ দেওয়া শুরু করেন। সপ্তাহে তাকে সুদ দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা। এভাবে ছয় মাসে তাঁকে ৫৪ হাজার টাকা সুদের লাভ হিসেবে দিয়াছি। এখন বলছেন আরও টাকা দিতে হবে। স্টাম এবং চেক ফেরত দিচ্ছেন না। মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। তেঘরিয়া গ্রামের কোহিনুর বেগম বলেন, ৩০ হাজার ঋণ নিই। পাঁচ মাসে ৬০ হাজার টাকা সুদ দিয়াছি। এরপর তিনি আর সুদের টাকা দিতে পারেননি। টাকা না দেওয়াতে তাঁর বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকার চেকের মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনবার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সুদের ব্যবসায়ী আরও টাকা চান, কিন্তু খালি স্টাম ফেরত দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে একজন সুদ ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ কালে জানান , আমরা খালি স্টামে সাক্ষর দিয়ে টাকা দেই । তিনি আরও বলেন,আমরা তাঁদের বিপদে টাকা দেই,অথচ আমরা সময়মত টাকা পাই না,উল্টো আরও টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না, করে নানা বাহানা।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024