|
Date: 2025-09-16 11:30:05 |
সাতক্ষীরার কুখ্যাত চোরাচালানি হাফিজুর রহমান মন্টুর উত্থান যেন সিনেমার কাহিনী। গ্যাস সিলিন্ডার পাচার দিয়ে শুরু করে তিনি মাদক, ভারতীয় কাপড়, থ্রি-পিস, শাড়ি, কসমেটিকস, এমনকি অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও জড়িত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাংসদ, নেতা-কর্মীদের প্রতিবেশী দেশে পাচারের মাধ্যমে মাত্র ১৬ দিনে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি।
মন্টুর শৈশব ছিল করুণ। তার বাবা তাস খেলতে গিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৮৯ সালে দেবহাটার পুষ্পকাটি এলাকায় গাছে ঝুলন্ত লাশ অবস্থায় উদ্ধার হন। হত্যার পর মামলা না হলেও পরিবারে গভীর শোক নামে। সেই অল্প বয়সে বেড়ে ওঠা মন্টু পরবর্তীতে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন সীমান্ত বাণিজ্যের অন্ধকার পথ।
প্রথমে এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে গ্যাস সিলিন্ডার পাচার শুরু করেন। পরে তার ভাই রবিউল ইসলামকে সহযোগী করে একাই চোরাচালানি ব্যবসা গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে মাদক, ভারতীয় পণ্য ও অবৈধ মালামাল পাচারের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।
খুলনার কুখ্যাত সামছুরের সঙ্গে পরিচয় তার ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয়। সামছুর ঢাকায় চলে গেলে মন্টু এককভাবে ব্যবসা বাড়াতে থাকেন। অর্থবিত্ত বাড়তে থাকলে বিয়েও করেন একাধিক নিজ গ্রামে, খুলনার ফুলতলায়, এমনকি ভারতের বসিরহাটে স্ত্রী ও বাড়ি রয়েছে তার।
সাতক্ষীরা শহরতলীর তালতলায় কোটি টাকার কমিউনিটি সেন্টার, বিনেরপোতায় মাছের সেট, সুলতানপুরে যৌথ ব্যবসা এবং স্বনামে-বেনামে প্রায় ৮৭ বিঘা জমির মালিক তিনি।
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রশাসনের নজর সরিয়ে নিয়ে মন্টু কোলকাতার খিদিরপুর থেকে ট্রলার ভাড়া করে ভারতীয় কাপড়, কসমেটিকস, ইমিটেশন গহনা মিয়ানমারে পাঠাতে থাকেন। একসময় চারটি ট্রলার তার নিয়ন্ত্রণে আসে।
কিন্তু সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে সরকার পতনের পর। সূত্র জানায়, ৫ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বরিশালের বাচ্চু ও ভারতের সহযোগীদের সঙ্গে যোগসাজশে কমপক্ষে চারজন সাংসদ, শতাধিক জনপ্রতিনিধি এবং কয়েক’শ আওয়ামী লীগ নেতাকে সুন্দরবন দিয়ে সীমান্ত পার করান। মাথাপিছু এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন তিনি। এতে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন।
মন্টুর কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্বও বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে তার ভাই আব্দুস সবুর পণ্যের হিসাব না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেন বলে প্রচার রয়েছে। অপরদিকে আরেক ভাই রবিউল ইসলাম মানবাধিকার সংগঠনের পদবী ব্যবহার করে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি কোস্টগার্ডের অভিযানে মন্টুর ট্রলার আটক হলে শাখরা গ্রামের ইমরান সাগরে পড়ে নিখোঁজ হন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্টু মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন, আর রবিউলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এক সময়ের গরিব পরিবারের সন্তান মন্টু আজ কোটি কোটি টাকার মালিক, বহুবিবাহিত, বিপুল সম্পদের অধিকারী। তবে তার এই উত্থান মাদক, অস্ত্র, চোরাচালান ও মানবপাচারের অন্ধকার জগতে রক্ত ও অশ্রুর উপর দাঁড়িয়ে যার তদন্ত ও জবাবদিহিতা এখন সময়ের দাবি।
© Deshchitro 2024