নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক। এ মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (০৬ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।


তিনি বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবটি সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি কমিশনের মতামতমাত্র। অতীতে যেসব সংস্কার কমিশন হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও নানা মতভেদ দেখা গেছে। ভিন্নমত থাকাটা স্বাভাবিক, তবে তা শালীনতার মধ্যে থাকা উচিত।


ড. নজরুল আরও বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিন্নমত শালীনভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া ছিল এমনভাবে বিদ্বেষপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক। যা শুধু নারীদের নয়, পুরো জাতিকেই অবমাননা করে। এটি কাম্য নয়। সমাজে মতের ভিন্নতা থাকবে, তবে তা যেন সম্মানজনকভাবে প্রকাশ পায়।


তিনি আরও জানান, যেকোনো বড় ধরনের সংস্কার রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া বাস্তবায়ন করা হবে না।


আসিফ নজরুল বলেন, বিতর্কিত ৯টি ধারায় ৯৫ শতাংশ হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হতো। এসব ধারা বাতিল করা হয়েছে। এ আইনটি ২৫ বার ড্রাফট সংশোধন আনা হয়েছে। ব্যাপক আলোচনার পর অবেশেষ আইনটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হয়েছে।


তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারী ও শিশুর প্রতি যৌন হয়রানিমূলক কনটেন্ট প্রকাশ এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেয়ার ঘটনায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। জামিন অযোগ্য ধারাগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এসব ধারার অধীনে সর্বোচ্চ সাজা দুই বছর প্রস্তাব করা হয়েছে।


আসিফ নজরুল আরও বলেন, এ অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত সব মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।


বাতিল হওয়া ৯টি ধারার মধ্যে রয়েছে—২০ ধারায় কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন-সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড; ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড; ২৪ ধারায় পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ বা ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি; ২৬ ধারায় অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ইত্যাদির দণ্ড; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি; পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার; ২৯ ধারায় মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি; ৩১ ধারায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড; ৩২ ধারায় হ্যাকিং-সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড ও ৫৫ ধারায় মহাপরিচালকের ক্ষমতা অর্পণ-সংক্রান্ত।


উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল নারী সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024