ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মারধরের শিকার হওয়া সাংবাদিক ওয়াসিফ আল আবরার অবৈধ ভাবে সহ-সমন্বয়কের প্রশ্রয়ে হলে অবস্থান করতেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আবরারের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।


জানা যায়, ইবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সাজ্জাদুল্লাহ শেখ, সায়েম আহম্মেদের প্রশ্রয়ে বরাদ্দকৃত হলে না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের ৪০৫ নাম্বার কক্ষে অবৈধভাবে অবস্থান করতেন আবরার। আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও বৈধ সিট না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট হল থেকে তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু হল থেকে স্থায়ীভাবে না গিয়ে অবৈধ সিটে মাঝে মাঝেই থাকতেন আবরার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তাকে ৩ দিনের মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলেন হল প্রভোস্ট। 


গতকাল ২৯ এপ্রিল আনুমানিক রাত ১২টায় হলে অবস্থান নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য পক্ষের সাথে। তাদের দাবি, আবরার ছাত্রলীগের পাওয়ার ব্যবহার করে অবৈধভাবে অন্য হলে অবস্থান করছে। আর এ বিষয়ে প্রশ্রয় দিচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সহ সমন্বয়ক। এরপর হল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আবরার। হল ছেড়ে যাওয়ার সময় সহ সমন্বয়ক সাজ্জাত শেখসহ কয়েকজন সহ সমন্বয়ক জানতে চান কেন আবরার হল ছেড়ে যাচ্ছে? এসময় শিক্ষার্থীরা উচ্চবাচ্য শুরু করেন। পরে সেখানে ধস্তাধস্তিতে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলে তাকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সাজ্জাত শেখসহ তার পক্ষের সহ সমন্বয়কদের দাবি আবরারকে মারধর করা হয়েছে।


সহ-সমন্বয়ক তানভির মাহমুদ মন্ডল বলেন, আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠন রিপোটার্স ইউনিটির পদধারী ছিলো। যে সংগঠনটি জুলাই অভ্যুল্থানের পূর্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পারপাস সার্ভ করতো। তাছাড়া সে আবার কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে একটিভলি জড়িত ছিলো। জুলাই বিপ্লবের সময়ও সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে "দূর্বৃত্ত" ট্যাগ দেয়। অভ্যুল্থান পরবর্তী সময়ে এখনো সে ছাত্রলীগের পারপার্স সার্ভ করার চেষ্টায় লিপ্ত। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঘটনার অতিরঞ্জিত শিরোনাম দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এছাড়াও গতকালের ঘটনাটাও তার জন্যই ঘটেছে। তার এটাস্ট হল হলো শহীদ জিয়াউর রহমান হল। সে সেখানে না থেকে ছাত্রলীগের পাওয়ার প্রাকটিস করে হল প্রভোস্টের আদেশ অমান্য করে শাহ আজিজুর রহমান হলে অবৈধ ভাবে অবস্থান করেছে। যার কারণে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত বিচারের জোর দাবি জানাই। 


আবরারের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ওয়াসিফ আল আবরারকে হল থেকে নামা না নামানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহ আজিজুর রহমান হলে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন আমি ও আমার সহযোদ্ধারা সেখান যাই। পরে আবরারকে ইবি মেডিকেলে পাঠানো হয়। এসময় আমাকে হেনস্তা করা হলে আমরা ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নে। এসময় আরও একটি পক্ষ সেখানে যাওয়ার পর বিরূপ মন্তব্য করা হলে হাতাহাতি ও বাকবিতন্ডা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশ্বস্ত করলে আমরা সেখান থেকে প্রক্টরিয়াল অফিসে বসে আলোচনা করি। আমি আশাবাদি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার হবে।


এবিষয়ে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ.টি.এম মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের হলে ছেলেটার এটাচমেন্ট নেই তাই আমরা তাকে বললাম যে তুমি তোমার হলে চলে যাও। পরশুদিন আমি ওর রুমমেটকে বলেছিলাম আবরার যাতে রুমে এসে না থাকে, যেহেতু ওর বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এটা জানার পরেও আমার কথা অমান্য করে সে হলে এসে থাকছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে উসকে দিচ্ছে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গতরাতে যারা ওকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিল তারাও আমার সাথে কথা বলে যায়নি। এটা তো হল প্রশাসনের দায়িত্ব। দুই পক্ষকেই আমি মেনে নিতে পারছি না।


এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরে আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম।  হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024