অবহেলিত ডাকবাক্স  ও ডাকঘর


মোঃ ফরমান উল্লাহ,বিশেষ প্রতিনিধি


অবহেলিত ডাকবাক্স ও ডাকঘর।এখন ডাকঘরে  মানুষ খুব একটা যায় না। বিভিন্ন অফিসের অফিসিয়াল চিঠি ছাড়া গ্রামের মানুষ এখন ডাকঘরে আসে না।মোবাইলে  বাড়িতেই সেরে নেয় ডাকঘরের কাজ। ৯০ দশকের পর থেকে ডাকঘর ও ডাকবাক্সের কদর আস্তে আস্তে কমে আসে।


আমরা ছেট সময় যখন স্কুলে যেতাম তখন গ্রামের মানুষ চিঠির একটি খাম হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাবা সোনা ডেকে বলতো চিঠিটা ডাকঘরে দিয়ে আসবে। আমরা তখন স্কুলের ক্লাস শুরুর আগেই চিঠিটা ডাকবাক্সে দিয়ে আসতাম।বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা শুধু বইয়ে ডাকঘরের রচনা পড়েছে, বাস্তবে অনেকেই ডাকঘর ও ডাকবাক্স দেখে নি।

য়ারা চাকরি করতো দূরে তাদের আত্মীয় স্বজনরা প্রায় প্রতি দিন ডাকঘরে যেতো কোন চিঠি মানি অর্ডারে টাকা আসছে কি না। যদি কোন চিঠি আসতো আনন্দে দ্রুত বাড়িতে চলে আসতো চিঠির মধ্যে কি লিখছে। যারা লেখাপড়া জানতো না তারা চিঠিটা হাতে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খুঁজতো চিঠিটা পড়ার জন্য।


পাঠক চিঠি পড়া শুরু করতে আর যার চিঠি সে মনযোগ সহকারে শোনতো।চিঠি পড়া শেষ হলে  বাবা সোনা ডেকে বলতো চিঠির প্রতি উত্তর লিখে দেওয়ার জন্য। তখন দূরের আত্মীয় বা যারা শহরে চাকরী করতো চিঠি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম ছিলনা যোগাযোগের।


প্রেমিক প্রেমিকারা ও গোপনে চিঠি লিখত একজন আরেক জনের নিকট।তারা নিজের ঠিকানা ব্যবহার করতো না কেউ জেনে যাবে ভয়ে।তারা বেশীর ভাগ ঠিকানা খালাত/মামাত ভাই-বোনের ঠিকানা ব্যবহার করতো।একটা চিঠির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে।যখন চিঠি হাতে পেত তখন মন করতে যে সারা দুনিয়াটা তার হাতে পেয়ে গেছে। এত দামী ও কদরের ডাকঘর আর ডাকবাক্স এখন ডাস্টবিনে পরিনত হয়ে গেছে।


ডিজিটাল যুগে আর কে যায় ডাকবাক্সে চিঠি দিতে আর চিঠির উত্তেরের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে। এখন মোবাইল,কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের মাধ্যমে সেকেন্ডের মধ্যে সারা দুনিয়ার খবর জানা যায়। অল্প সময়ে খবর জানতে পারলেও আগের মত আর আনন্দ পাওয়া যায় না।


ডিজিটাল যুগের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে চরম অবহেলায় অবহেলিত হয়ে গ্রামের ডাকঘর গুলো যেন অযত্নে পরিত্যাক্ত ঘরের মত অবহেলি হয়ে পড়ে আছে ডাকবাক্স আর ডাকঘর।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024