|
Date: 2024-09-07 18:50:59 |
মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ আবরার
সত্য ইতিহাস কখনো বদলায় না। ইতিহাস ইতিহাসই থেকে যায়। বারবার ফিরে আসে। আমাদের সতর্ক করে দেয়। সত্যাসত্য, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায় জীবনযাপন কর্মপরিধি ও যাবতীয় ব্যাপারে ইতিহাস অত্যন্ত সজাগ ও যথাযথ। তিল পরিমাণ এদিক-সেদিক হওয়ার উপায় নেই। এ ব্যাপারে যুগে যুগে মহাপুরুষদের আবির্ভাব ঘটে। তাদের প্রদর্শিত পন্থা ও শাস্ত্রসূত্র একটি আলোকিত পথের সন্ধান দিয়েছে। তবুও ক্ষেত্রভেদে অত্যাচারী অনাচার এসে জড়ো হয়। মানুষের জীবনকে নানাভাবে বিষজর্জর করে তোলে। শাসক শোষক মানবসমাজকে নিঃশেষিত করে দেয়। অনাদিকাল থেকে অনুরূপ ধারাপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এর করুণ পরিণতি সমানতালে চলে আসছে। কখনো কখনো তা অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যা গোটা মানবসমাজকে স্তম্ভিত করে দেয়। লেখা হয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্ত ইতিহাস। তবুও অনাচারকিষ্ট অনাহূত আবর্জনা এসে ইতিহাসকে ঢেকে ফেলতে চায়। কিছু আধিপত্যপ্রবণ ফ্যাসিস্ট বিকৃত চাওয়া-পাওয়ার মাধ্যমে তা কথাকথিত করতে উদ্যত হয়। যা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। প্রকৃতিগতভাবেই অবধারিত সত্য। ক্ষমতার মদমত্ততায় আবু জাহেল, নমরুদ, ফেরাউন, সাদ্দাদসহ অনেকেই ইতিহাসের এই ধারাপ্রবাহকে কলঙ্কিত করেছে। এতে তাদের জীবনে সকরুণ পরিণতি নেমে আসে। তবুও মানুষের চৈতন্য নেই।
২৪ এর জুলাই পর্যন্ত "জুলাই বিপ্লব" বলতে আমরা ১৮৩০ সালের ফরাসী বিপ্লবকেই জানতাম। ২৪ এর আগস্টে এসে আমরা নিজেরাই নতুন এক " জুলাই বিপ্লব " এর সাক্ষী হলাম।
রক্ত নদী পেরিয়ে "জুলাই বিপ্লব " যে সমস্ত কারণে বিজয়ের মুখ দেখেছে তা হলো:
প্রথমত, যে বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানগুলো পূর্বে সংঘটিত হয়েছে , সবগুলোই ছিল কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির নেতৃত্বে। যেমন : রুশ বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল লেনিনের বলশেভিক পার্টি, ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমিনী অথবা আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল একদল অরাজনৈতিক তরুণ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ তথা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু একদল শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এত বড় বিপ্লব বিরল। যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছে তরুণরা। এখানে সত্যিই অবাক করার মতো, আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি দিচ্ছে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্যগত শিশুর মতো সে কর্মসূচিতে সংহতি এবং কিছু ক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করেছে। এই বিপ্লব ইতিহাসে নতুন এক পথ তৈরি করল, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো গৌণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই এই বিপ্লবের পুরো কৃতিত্ব শিক্ষার্থী ও জনতার। যাদের উদ্দেশ্যও ছিল মহৎ। কেননা তারা শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই পরিবর্তন চাননি। বরং তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, এই তরুণরা বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা বলছেন। যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা ও সংস্কৃতির একটি বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা এখন সবার মুখে মুখে।
দ্বিতীয়ত, এ আন্দোলনে স্থায়িত্বকাল ছিল এক মাসের মতো, অথচ অনেক বেশি রক্তাক্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্পসময়ে এত রক্তক্ষয়ী বিপ্লব আর দেখা যায়নি, যা এ বিপ্লবকে আর সব বিপ্লব থেকে ইতিহাসে ব্যতিক্রম হিসেবে জায়গা দিয়েছে।
তৃতীয়ত, এ বিপ্লবটি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে এখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব পেশার, সব লিঙ্গের মানুষের অন্তর্ভুক্তি এই বিপ্লবটিকে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। রাজনীতিবিশেষজ্ঞ বদরুদ্দীন ওমর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এত বড় গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান অল্প সময়ের মধ্যে শহর থেকে গ্রাম তথা সারা দেশে ছড়িয়ে গিয়েছিল। এই বিপ্লব ছিল জনক্ষোভের এক বহিঃপ্রকাশ। আর প্রত্যেকটা জনক্ষোভ থেকে এক একটা বিপ্লব হয়। ইতিহাসের প্রতিটা স্বৈরশাসকের পতন আমাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নির্মম পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় গণতন্ত্রের আড়ালে স্বৈরতন্ত্রের ভয়াবহ চর্চা হয়, যা শেষ হয় জনবিপ্লবের মাধ্যমে। কিন্তু তার পরও প্রতিনিয়ত শাসকরা গণতান্ত্রিক হওয়ার থেকে স্বৈরতান্ত্রিক হওয়ার দিকেই অধিকতর নজর দেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কার্ল মার্ক্স যথার্থই বলেছেন- এটাও ইতিহাসের শিক্ষা যে ইতিহাস থেকে কেউই শিক্ষাগ্রহণ করে না।
চতুর্থত, ধারাবাহিক কর্মসূচি এ আন্দোলনে বিজয়ের অন্যতম কারণ । যা বিশ্ব বিপ্লবের ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট, লাগাতার কর্মসূচির আদ্যপান্ত:
৫ জুন:
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট।
৬ জুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাবি ছাত্ররা।
৯ জুন
কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ঢাবি ছাত্ররা। বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। কোটা বাতিল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।
১ জুলাই:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
২ জুলাই:
ঢাবির ছাত্ররা মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করে এক ঘন্টা। জাবির ছাত্ররা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।
৩ জুলাই:
ঢাবির ছাত্ররা শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন।
৪ জুলাই:
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ 'নট টুডে' বলে আদেশ দেন। পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়। ছাত্ররা ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ৫ ঘণ্টা।
৫ জুলাই:
এই দিন শুক্রবারেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা।
৬ জুলাই:
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।
৭ জুলাই:
বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা।
৮ জুলাই:
ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ। সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়।
৯ জুলাই:
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন করে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি 'বাংলা ব্লকেড' পালন করা হয়।
পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা 'বাংলা ব্লকেড'-এর ঘোষণা দেওয়া হয়।
১০ জুলাই:
কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ আপিল বিভাগের। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন রাখা হয়। ছাত্ররা ভুল করেছে মর্মে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি আরো বলেন, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।
১১ জুলাই:
পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা। ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা 'লিমিট ক্রস' করে যাচ্ছেন।
১২ জুলাই:
শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
১৩ জুলাই:
আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই।
১৪ জুলাই:
রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্ররা। শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলেছে। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!!
এই শ্লোগান এতোই জনপ্রিয় হয় যে, মুহূর্তেই দেশের সকল পাবলিক ভার্সিটিতে ছোঁয়া লাগে। সকল ভার্সিটিতেই এই শ্লোগান চলে রাতভর।রাতে চবিতে ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়।
১৫ জুলাই:
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলে, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম মন্তব্য করে, যাঁরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বো। কাদের ও সাদ্দামের মন্তব্যের পর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হানাদার বাহিনী ঢাবির আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করে। ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে। ভয়াবহ আক্রমণে ২৯৭ জন ছাত্র আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ উভয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়।
১৬ জুলাই:
পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহদাতবরণ করেন। সাদ্দাম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলে, আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল।
১৭ জুলাই:
ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে 'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায়
সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্রছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।
১৮ জুলাই:
ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে হানাদার আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর হামলা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও মাদরাসর ছাত্ররা এদিন আন্দোলনের মূল হাল ধরে। মুগ্ধসহ মোট ৪০ জন শাহদাতবরণ করেন। সংঘর্ষ বেশি হয় ঢাকায়। সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন।
১৯ জুলাই:
শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়।
পুলিশ ও বিজিবির নৃশংস গুলিতে ১১৯ জন শাহদাতবরণ করেন। এদিন আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এদিন রাস্তায় ছাত্রদের চাইতেও বেশি ছিল নানান শ্রেণি পেশার মানুষ। বলাবাহুল্য সারাদেশের চেয়ে রাজধানী ঢাকা ছিল বেশি অগ্নিগর্ভ।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর ১ ও ১০, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার ছিল আন্দোলনের মূল হটস্পট।
রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন। সকল ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তথ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় সারাদেশ।
২০ জুলাই:
দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি। উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর। পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মোট ৭১ জন শাহদাতবরণ করেন।
প্রধান সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ। সমন্বয়কদের আরেকটি অংশ ৯ দফা দাবি পেশ করে।
২১ জুলাই:
কোটা সংস্কার করে ৭% কোটা রেখে রায় প্রদান করে আদালত। এদিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
হানাদার পুলিশ ও বিজিবির নির্মম গুলিতে ৩১ জন শাহদাতবরণ করেন। চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলেন। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়ে হল খুলে দেওয়া, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারজন সমন্বয়ক। নাহিদকে ব্যাপক নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় পুলিশ।
২২ জুলাই:
কোটা সংস্কার করে প্রকাশিত রায়ের প্রজ্ঞাপনের প্রস্তুতি চলে। প্রতিদিন মানুষ হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। তবে আন্দোলন স্তিমিত হতে থাকে। এদিনও ১০ জন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন আগের আহত হওয়া।
২৩ জুলাই:
কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি। সরকার কয়েক হাজার মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার শুরু করে।
২৪ জুলাই:
কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানিয়েছেন। আর রিফাত আত্মগোপনে আছেন। ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তার চলছেই।
২৫ জুলাই:
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তাঁরা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। ছাত্রদের বিবৃতি: শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের ভাঙ্গা অংশ দেখে চোখের পানি ফেলতে শুরু করেছেন।
২৬ জুলাই: এলাকা ভাগ করে চলছে 'ব্লক রেইড'। সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪। সাদা পোষাকে ডিবি হারুনের সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যায়।
২৭ জুলাই:
১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া। ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করতে থাকে ডিবি হারুন।
২৮ জুলাই :
মোবাইল ইন্টারনেট ১০ দিন পর সচল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি হারুন। ডিবি হারুন জোর করে গান পয়েন্টে ছাত্রনেতাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায় করে।
আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ অজ্ঞাত স্থান থেকে আগের বিবৃতি প্রত্যাহার ও ৯ দফা দাবী নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
২৯ জুলাই:
ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
একইসাথে ছাত্রআন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে খুনসহ অন্যান্য মামলা দিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গণহত্যাকারী ১৪ দল।
ডিবি হারুন কর্তৃক জোর করে বিবৃতি আদায়ের ঘটনায় ছাত্ররা আবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, জাবি ও রাবিতে পুলিশ ছাত্রদের ওপর হামলা করে। অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকরাও বিক্ষোভ করে।
৩০ জুলাই:
হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে ছাত্র ও শিক্ষকরা। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান। ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন সারাদেশের মানুষ। গণহত্যাকারীরা কালো ফ্রেম দিয়েছে। তবে সেটা নিতান্তই নগণ্য। নাটক ও সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষরা খুনী হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন।
৩১ জুলাই:
ছাত্ররা 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালন করে। ৯ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে ছাত্ররা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাবির শিক্ষকরা সমন্বয়কদের ছাড়াতে ডিবি অফিসে গেলে পুলিশ তাদের হেনস্তা করে। পরিবারের সাথেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
১ আগস্ট:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি।
২ আগস্ট:
৯ দফা আদায়ের দাবিতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা। রাজধানীসহ বিভিন স্থানে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের গুলিতে ৩ জন শাহদাতবরণ করেন। পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ।
৩ আগস্ট:
৯ দফা না মেনে গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালু রাখার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র জনতা। এসময় ইসলামি দলগুলোর উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।
সেনাপ্রধান তার সেনা কমান্ডার নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি এই বার্তা পান যে, সেনাবাহিনী আর গুলি করতে প্রস্তুত নয়।
কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে নয় দফা বাদ দিয়ে ১ দফার (খুনী হাসিনার পদত্যাগ) ঘোষণা দেয় ছাত্রনেতারা।
হাসিনা ছাত্রদের আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। প্রয়োজনে মন্ত্রীদের কয়েকজন পদত্যাগ করার ঘোষণাও দেন। ছাত্ররা সব আলোচনা নাকচ করে দেন। আবারো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। শহীদ আবু সাইদের খুনী দুইজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত ও প্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রজনতাকে রাস্তায় প্রতিহত করতে কড়া নির্দেশ দেয় খুনী হাসিনা।
৪ আগস্ট
- ৩ তারিখের ঘোষণা অনুযায়ী 'সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি' পালন করে বাংলাদেশের জনগণ। সব ধরণের ট্যাক্স ও সব সরকারি- বেসরকারি অফিস বন্ধ করে দেয় জনতা।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের গুলি করে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র ইট পাটকেল দিয়ে সন্ত্রাসী ও হানাদার পুলিশ বিজিবিকে প্রতিরোধ করে।
কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি করে।
সারাদেশে ১৩০ জন খুন হন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও যুবলীগেরও কিছু সদস্য রয়েছে। লাখো ছাত্ররা এদিন সন্ত্রাসীদের অনেককে ভালোভাবে উত্তম-মাধ্যম দেয়।
পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র জনতা।
- অনেক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অফিস ও বাড়িতে আগুন দেয় প্রতিশোধ পরায়ন ছাত্র-জনতা।
- ৫ আগস্ট
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকামুখী লংমার্চ পালন করে ছাত্রজনতা। যাত্রাবাড়ীতে ফজরের পর থেকে হাজার হাজার মাদারাস শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে ও উত্তরা পয়েন্টে লাখ লাখ জনতা শাহবাগ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে। - সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র জনতার সাথে।
- সকাল সাড়ে দশটার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসিনা পালিয়ে যায়।কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে।
- ৫ আগস্ট বিজয়ের দিনেও ১১৩ জন ছাত্রজনতা শাহদাতবরণ করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান দুইটায় ভাষণ দিবেন বলে ঘোষণা দেন।
১২ টায় শাহবাগের পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দেয়।
- ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে।
সারাদেশের বিশেষভাবে ঢাকার মানুষ সব রাস্তায় নেমে নেচে গেয়ে উদযাপন করতে থাকে।
- গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ।
রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে।
দেশে বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় ও আত্মগোপন করে। অনেকেই ছাত্রজনতার
কোপানলে পড়ে খুন হয়।
রাজধানীর মানুষদের একটা বড় অংশ গণভবনে গিয়ে হাসিনার ওপর রাগ ক্ষোভ গণভবনের ওপর ঝাড়ে।
৬ আগস্ট
- বাংলাদেশে উদিত হয় নতুন সূর্য। আওয়ামী হানাদার মুক্ত বাংলাদেশের নতুন রক্তিম যাত্রা শুরু হয়।
-মূলত এ আন্দোলন শুরুতে ছাত্র আন্দোলন থাকলেও পরবর্তীতে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। আবু সাঈদ, মুদ্ধরা শহীদ হয়ে গণমানুষকে জাগিয়ে তোলে। এক সময় দল-মত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। আলেম,উলামা,ইমাম ও মাদরাসার ছাত্ররাও বেশ সক্রিয় হয়ে পড়ে। দলীয় ব্যানার ছেড়ে সমস্ত মানুষ ছাত্রদের ব্যানারে একত্রিত হয়ে শহর জেলা শহরসহ প্রতিটি জায়গায় তারা জোরালো ভূমিকা পালন করে। যা আন্দোলনকে বেগবান করতে বেশ সহায়ক হয়েছিল। সকল মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেখে মনে হল ‘এই যৌবন জল তরঙ্গ কি রুধিবে দিয়া বালির বাঁধ?’ এই পংক্তিটি পূর্ণতা পেয়েছে।
পরিশেষে "মুক্তিকামী মানুষ মুক্তি পেয়েছে। টুটিয়াছে জালিম শাহীর রাজ।রচিত হয়েছে ইতিহাসের নতুন ধারা আজ।"
© Deshchitro 2024