সুখবর ও ইতিবাচক ডেস্ক :


তিত বেগুন চারার গোড়ার দিকের অংশের সঙ্গে টমেটোর চারার ওপরের দিকের অংশ জোড়া দিয়ে করা হয় গ্রাফটিং। এভাবে লাগানো টমেটোর চারা বড় হয়ে ঢলে পড়ে না, রোগ বালাইও তেমন হয় না। উপরন্ত ফলন মেলে প্রচুর। সাধারণ একটি গাছে ৫ থেকে ১০ কেজি টমেটো মেলে। কিন্তু গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চাষ করা প্রতিটি গাছে মেলে ২০ থেকে ২৫ কেজি টমেটো। গ্রাফটিং করা টমেটো গাছ পানি সহনীয়। ফলে ভারি বৃষ্টিতেও এই টমেটো গাছ নষ্ট হয় না। 


হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামে প্রায় ৩৩ শতক জমিতে দুই ভাই কৃষক মো. নুরুল আমিন ও মাওলা মিয়া মিলে গ্রাফটিং টমেটোর জাত বারি-৮ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। 


টমেটো চাষে দুই ভাই মালচিং পেপার ও হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করেছেন। ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে একবারে বিষমুক্ত টমেটো উৎপাদন হয়। ক্ষেত থেকে এসব টমেটো সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। পাইকাররা এসব টমেটো প্রতিকেজি বাজারে বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। বিষমুক্ত টমেটো চাষে কৃষকরা যেমনটা লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্রেতারাও খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন। 


পাইকারি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কৃষক নুরুল আমিন ও মাওলা মিয়ার কাছ থেকে টমেটো কিনে বাজারে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। ক্রেতারা এ টমেটো খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন। 


টমেটো কিনতে আসা রুবেল মিয়া বলেন, ‘বিষমুক্ত টমেটো পাওয়া কঠিন। এখানে পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন ও মাওলা মিয়ার ক্ষেতের উৎপাদিত টমেটো জেনে কিনছি। এ টমেটো খেতে সুস্বাদু।’ 


কৃষক নুরুল আমিন ও মাওলা মিয়া বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে প্রায় ৩৩ শতক জমিতে গ্রাফটিং টমেটো জাত বারি-৮ চাষে সফলতা পেয়েছি। টমেটো চাষে আমাদেরকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি বøকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এ জাতের টমেটো চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি আমরা। 


দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘বর্ষাকালে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে হয়। আর বর্ষার টমেটোয় লাভও অনেক বেশি। জানুয়ারিতে বীজতলায় বীজ দিতে হয়। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে গেলে তিত বেগুনের চারা দিতে হয় একই সঙ্গে। গ্রাফটিং করার উদ্দেশ্য হলো বর্ষাকালে মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকে। তিত বেগুনে কাটিং পদ্ধতিতে গ্রাফটিং করলে এর শিকড় অনেক শক্ত হয়। ফলে পানি শিকড় নষ্ট করতে পারে না।’ 


তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাফটিং টমেটো জাত বারি-৮ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন দুই ভাই। তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা পরামর্শ গ্রহণ করে টমেটো চাষ করেছে। তাদের ন্যায় স্থানীয় কৃষক দুলাল মিয়া, আসাদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এ জাতের টমেটো চাষ করেছেন।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয় সফলতা। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করে গ্রাফটিং টমেটো জাত বারি-৮ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন কয়েকজন কৃষক। বাহুবলে এ জাতের টমেটোর চাষ তেমন ছিল না। বর্তমানে কৃষকরা টমেটো চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।’




প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024