|
Date: 2024-07-06 11:12:58 |
আজ ৬ জুলাই শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ঐতিহাসিক কাঁটাখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙামাটিয়া খাটুয়াপাড়া গ্রামে ঘটেছিল বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। এই যুদ্ধে শহিদ হন কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান, আলী হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেনসহ নাম না জানা আরও অনেক মুক্তিকামী সিপাহি জনতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর শহিদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর্য করে রাখার জন্য স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পর হলেও পুরোনো সেই সেতুটি সংরক্ষণে ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। সেইসাথে শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনে স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। জানা যায়, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখ শনিবার ভোরে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে ৫৩ জনের মুক্তিযোদ্ধার দল অবস্থান নেন মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া গ্রামে আতর আলীর বাড়িতে। পরিকল্পনামতে ৫ জুলাই রাতে সফলতার সাথে অপারেশন শেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে আশ্রয় নেয় খাটুয়াপাড়ার হাজী নঈমদ্দিন ও হাজী শুকুর মামুদের বাড়িতে। বাড়ির চারপাশে ছিল প্রশস্ত বিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে এলাকার রাজাকার জালালউদ্দিন মিস্ত্রী তার ছোট ভাই হক আলী শেরপুরের তৎকালীন ছাত্রসংঘের নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ ঝিনাইগাতী আহম্মদ নগর পাকিস্তানি ক্যাম্পে খবর দেয়।
৬ জুলাই সোমবার সকালে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রামে প্রবেশের একটি মাত্র কাঁচা সড়কের দু’দিক থেকে ব্যারিকেড দেয় পাকসেনা ও রাজাকার আলবদররা। গ্রামবাসীদের অনুরোধে মুক্তিযোদ্ধারা বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে করতে পিছু হটে। ওই সময় পাক-হানাদারদের বেপরোয়া গোলা বর্ষণে কোম্পানি কমান্ডার ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র নাজমুল আহসান, তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা আলী হোসেন শহিদ হন। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পেলেও বর্বরোচিত হামলার শিকার হন খাটুয়াপাড়া রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের ৬০/৭০ জনকে কোমরে দড়ি বেঁধে লাঠিপেটা করতে করতে নিয়ে যাওয়া হয় খাটুয়াপাড়া সরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। পাক-হানাদার বাহিনীর দল আগুন লাগিয়ে দেয় ওই এলাকার বাড়িঘরে। সমস্ত্রভ্রমহানি করে কয়েকজন নারীর।
ওইসময় অমানবিক নির্যাতন করে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে গ্রামবাসী আয়াতুল্ল্যা, সামেছ মিস্ত্রি, মহেন্দ্র অধিকারী, আব্বাছ আলী, আমেজ উদ্দিন ও বাদশা আলীকে। ওইসময় আহত হন অনেকেই। দালালদের বাঁধার মুখে সেদিন লাশও দাফন করতে পারেননি শহিদদের স্বজনরা। কলার ভেলায় স্বজনরা সেই লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নদীতে। একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত স্মরণ হলেই এখনও এলাকাবাসীর গা শিউরে উঠে। ইতোমধ্যেই কাটাখালীতে নাজমুল স্মৃতি চত্বরসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে।
© Deshchitro 2024