আগামী ৫ ও ৬ জুলাই কক্সবাজারে কর্মসূচী পালন করবে ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। ৬৪তম জেলা হিসেবে কক্সবাজারে আগামী দুই দিন এ কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি তার সমগ্র বাংলাদেশ পদার্পণ সম্পন্ন করবে। এর আগে ৬৩টি জেলায় এ কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি।


শুক্রবার(৫ জুলাই) দুপুর ৩টায় সুগন্ধা বিচ থেকে কক্সবাজার পৌরসভা পর্যন্ত র‍্যালি। বিকাল ৪টায় কক্সবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে সেমিনার। 

এতে সভাপতিত্ব করবেন ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি দ্রাবিড় সৈকত। প্রধান অতিথি থাকবেন, মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, বিশেষ অতিথি থাকবেন বিডি ক্লিন এর প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। মূল বক্তা উদ্ভিদবিদ আজহারুল ইসলাম খান (বৃক্ষবন্ধু)। এরপর কক্সবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় ফল উৎসব শুরু হবে।


পরদিন শনিবার(৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টায় রামুর খুনিয়া পালংয়ের কেচুয়াবনিয়া

ফলদ বৃক্ষরোপণ অভিযান চলবে।


বিদেশী কাঠনির্ভর ক্ষতিকর গাছের বৃক্ষরোপণের বদলে সারাদেশে ফল গাছ রোপণ ও সচেতনতায় কাজ করা সংগঠন ‘ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ গত ১২ বছরে দেশের ৬৩টি জেলায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। নিজস্ব অর্থায়ন ও সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে পরিচালিত এ সংগঠনটি মূলত মেহগনি, ইউক্যালিপ্টাস, রেইনট্রি, একাশিয়ার মত ক্ষতিকর গাছের বদলে মানুষকে ফল গাছ রোপণে উৎসাহিত করে আসছে। সেই সঙ্গে প্রতি বর্ষায় গ্রামেগঞ্জে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ফলের চারা রোপণ করাই সংগঠনিটির অন্যতম কাজ। 


গত এক যুগে সংগঠনটি দেশের ৬৩টি জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩ লাখেরও বেশি ফল গাছ রোপণ করেছে। 


গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের এই উর্বর মাটিকে বিদেশি আগ্রাসী ইউক্যালিপ্টাস, একাশিয়া, মেহগনি, রেইনট্রি ও শিশুর মত গাছের একচেটিয়া বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। চোখের সামনে যা আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত করছে। 

মেহগনি, একাশিয়া, রেইনট্রি, ইউক্যালিপ্টাসই এখন আমাদের প্রায় ৭০ ভাগ বৃক্ষ; যা আমাদের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এসব গাছ আমাদের স্থানীয় বাস্তুসংস্থান, পশুপাখি ও অনুজীবের জন্য উপযোগী নয়। কেবল কাঠের কথা চিন্তা করে এই ভুল বনায়নের কারণে ইতিমধ্যেই স্থানীয় অন্যান্য প্রজাতির স্থান দখল করে নিয়েছে এ গাছগুলো। কাঠ ছাড়া আমাদের জীবনে যাদের আর কোনো অবদান নাই, সমস্ত বিবেচনায়ই সেই কাঠের উপকারের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। 

সামাজিক বৃক্ষরোপণ এবং বনায়ন উভয় ক্ষেত্রেই কেবল কাঠ নির্ভর গাছ নির্বাচন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যকে কেবল ধ্বংসই করছে তা নয়, এর কারণে আমাদের জাতীয় পুষ্টি এবং অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অথচ অধিক হারে ফল গাছ রোপণের মাধ্যমে একযোগে দেশের পুষ্টি-অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্য উভয়ের উন্নয়ন সম্ভব। যা কিনা বৈশ্বিক পরিবেশগত উন্নয়নেও স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। 


বহিরাগত এই পাঁচটি গাছে আমাদের পাখির খাবার ও বাসস্থান নেই। আমাদের শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, আমাদের বিপুল পরিমান ফল আমদানী করেত হয়; অথচ এই উর্বর মাটির দেশ থেকে সারা বছরই ফল রপ্তানী করা যেতো। 

একই গাছ থেকে ফল ও কাঠের চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে কম জমিকে অধিক হারে কাজে লাগিয়ে একটা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। তাছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, গাব, তাল, তেতুল, পেয়ারা, জলপাই, বেল এবং নিম, তেলসুর, গর্জন, গামারি, নাগেশ্বর ছাড়াও স্থানীয় প্রকৃতিবান্ধব আরও অনেক ফলদ, বনজ গাছ হতে পারে উন্নতমানের কাঠেরও উৎস।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024