সম্প্রতি জেগে উঠা বঙ্গবন্ধু চরে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মাতে শুরকরেছে। বঙ্গোপসাগরের বুকে এক অন্য ভুবন, যার চারদিকে অথই জলরাশি আর ঢেউয়ের খেলা। মাঝখানে যেন এক টুকরা ভূমি। মূলত এটি দ্বীপ। তবে এটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু চর’। প্রাকৃতিকভাবে চরটির একপাশে গড়ে উঠছে শ্বাসমূলীয় বন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেনা-অচেনা বাহারি পাখির কলতানে মুখর থাকে। চরের বালুতে অগণিত লাল কাঁকড়ার বিচরণ। নয়নাভিরাম নীল দিগন্তের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু চর’ এক অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। সুন্দরবন নীলকমল অভয়ারণ্য থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে উঠেছে চরটি। সেখানে জোয়ার– ভাটায় সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা নানা প্রজাতির ফল থেকে বৃক্ষরাজি জন্ম নিয়েছে। এরই মধ্যে চরটির অর্ধেক এলাকাজুড়ে শ্বাসমূলীয় বৃক্ষের বন গড়ে উঠেছে। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার। বন বিভাগ ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মৎস্য শিকারি ১৯৯২ সালে দুজন জেলেকে নিয়ে এ চরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চরটির নামকরণ করেন ‘বঙ্গবন্ধু চর’। সেই সঙ্গে টাঙিয়ে দেন একটি সাইন বোর্ডও। সেই থেকেই নতুন চরটি ‘বঙ্গবন্ধু চর’ নামে পরিচিত। সুন্দরবনের সর্বশেষ সীমানা থেকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধুর চর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের আওতার মধ্যে পড়েছে ওই চরটি। প্রায় ১০ বছর আগে চরটি বন বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর থেকেই সেখানে নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছে বন বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক ব্যবস্থাপনায় রাখলে এই চর হয়ে উঠতে পারে আরেক সুন্দরবন। জানা যায়, জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব জিয়াউল হাসান চরটি পরিদর্শন করার পর সেখানে একটি টহল ফাঁড়ি করার নির্দেশ দেন। এছাড়া চরটির সার্ভে করার জন্যও বলা হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর চরটি বেশ দুর্গম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ সেখানে যেতে চান না। সচিব হিসেবে জিয়াউল হাসান প্রথম চরটি পরিদর্শন করেছেন। চরের ভূ-প্রকৃতি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। চরটিতে যেন জীববৈচিত্রের পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে ও কেউ ক্ষতিসাধন করতে না পারে সে জন্য সেখানে একটি টহল ফাঁড়ি করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার ওই নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে একটি ফাঁড়ি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু চরের আয়তন প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার। তবে ধীরে ধীরে এর আয়তন আরও বাড়ছে। ইতোমধ্যে চরটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নজর পড়েছে। ওই সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্টেশন ও ট্যুরিস্ট স্পট করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবেএই মুহূর্তে ওই চরকে বিরক্ত না করলে সেটিও হয়ে উঠতে পারে বঙ্গোপসাগরের বুকে আরেকটি সুন্দরবন।সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারীবন সংরক্ষক এম,কে,এম, ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর চরে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে চরটি হয়ে উঠছে সুন্দরবনের অংশ।এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বন্য পশুপাখিও বিচরণ করতে দেখা গেছে। এ কারণে সেটি সংরক্ষণ করা হয়ে পড়েছে জরুরী । কেউ যেন ওই বনের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য সেখানে টহল ফাঁড়ি করা হয়েছে। আগে স্থানটি বন বিভাগের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের আওতায় তদারকি করা হতো। চরে স্থাপিত ফাঁড়িটিও ওই কার্যালয়ের আওতায় থাকবে বলে জানান তিনি।



প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024