প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিবেন উখিয়ার দেড়লক্ষ ভোটার, ইতোমধ্যে সব কেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তাই পৌঁছে গেছে ইভিএম।

আগামীকাল ২৯ মে বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে এবারই প্রথম উখিয়ার ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকেই উখিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদেরকে ইভিএমসহ ভোটগ্রহণের অন্যান্য সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্টু ও নিরপক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ মাঠে নেমেছে একাধিক সংস্থা।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে , উখিয়া উপজেলায় ৬২টি ভোট কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৬৪ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৫৫০ জন। মহিলা ভোটার ৭৩ হাজার ১৪ জন। ৬২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৩৫৫ টি। তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ৩৪৪ টি এবং অস্থায়ী বুথ ১১ টি। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে তিনটি করে ইভিএম।

অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়া উপজেলায় ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩১২ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ২ হাজার ২৫২ জন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী (ঘোড়া)।

ভোটের দুইদিন আগে পোস্টার ছেঁড়া, ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সোমবার (২৭ মে) বিকেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। তবে তিনি কাকে সমর্থন দিচ্ছেন সেটি স্পষ্ট করে জানাননি।

চেয়ারম্যান পদে অন্য দুজনের একজন হলেন, ১৩ বছর রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পর ২৮ এপ্রিল পদত্যাগ করা উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। অন্য আরেক প্রার্থী হলেন সাবেক ছাত্রলীগনেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবুল মনসুর চৌধুরী। তার প্রতীক মোটর সাইকেল।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই উপজেলায়। তারা হলেন, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী (তালা), বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম (টিউবওয়েল), উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু (মাইক), রাজাপালং ইউনিয়ন থেকে এককপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাংবাদিক ও বীমাকর্তা গফুর মিয়া চৌধুরী। গফুর মিয়া চশমা প্রতীক নিয়ে জয়ের স্বপ্ন বুনছেন। এদিকে পালংখালী ইউনিয়ন থেকে সাবেক জামায়াত নেতা গফুর উল্লাহ বই প্রতীক নিয়ে পালংখালী থেকে এককপ্রার্থী হিসেবে জয়ের আশা করছেন।

তবে হলদিয়া পালংয়ের একই এলাকা থেকেই তিনজন প্রার্থী হওয়াতে সেখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে, মূলত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হলদিয়ার এ তিনজনই ঘুরেফিরে আলোচনায় থাকছেন, তাঁরা হলেন, কামাল উদ্দিন মিন্টু, সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর আলম।তাঁরা তিনজনই সমানতালে মাঠ ধরে রেখেছেন।

এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নেছা বেবী। তিনি কলসি প্রতীক নিয়ে বেশ শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছে। তবে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা আক্তারের নিজস্ব ভোট ব্যাংক থাকায় তিনিও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। তিনি লড়ছেন হাঁস প্রতীক নিয়ে।

হলদিয়া পালং থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্থানীয় রাজনীতিতে অপরিচিত একমুখ সানজিদা আক্তার নূরী। তিনিও লড়ছেন এ নির্বাচনে, ইতোমধ্যে তিনি প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। ফলে রাজনীতিতে অপরিচিত হলেও তরুণদের একাংশের ভোটে তিনিও এগিয়ে রয়েছেন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী রিটার্নিং অফিসার এবং উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯০৮ সালে উখিয়া থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর উখিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় উন্নীত হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন মাহমুদুল হক চৌধুরী। ২৬১’৮০ বর্গ কিলোমিটারের উখিয়া উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইউনিয়ন উখিয়া সদর এবং কুতুপালংসহ বিশাল জায়গাজুড়ে রাজাপালং ইউনিয়নের অবস্থান, প্রশাসনিক অবকাঠামোর কারণে রাজাপালং উখিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিয়ন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ের অবস্থান এই ইউনিয়নেই।

অন্যদিকে পর্যটন, মৎস্য, ভূমি ব্যবসাসহ নানা কারণে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জালিয়া পালং ইউনিয়ন। বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিনড্রাইভ কিন্তু এ ইউনিয়ন হয়েই টেকনাফ উপজেলার সীমানায় পৌঁছে গেছে। কোটবাজার থেকে মনখালী পর্যন্ত বিস্তৃত এ জালিয়া পালং ইউনিয়ন। সীমান্ত এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে পালংখালী ইউনিয়নের অবস্থান। মিয়ানমারের সাথে একেবারে স্থলসীমানা রয়েছে এ ইউনিয়নের সাথে। তাই সম্প্রতি মাদক চোরাচালানের জন্যও পরিচিতি পেয়েছে পালংখালী। অপর দুই ইউনিয়ন হলো রত্নাপালং ও হলদিয়া পালং ইউনিয়ন।

এদিকে এবারের নির্বাচনে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল বিকেল পর্যন্ত।যেহেতু ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে তাই ভোটার ও প্রার্থীদের প্রত্যাশা ফলাফল দ্রুত পাওয়া যাবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024